‘বিগত সরকারের বাজেট থেকে সরে এসে অন্তর্বর্তী বাজেট দেওয়া উচিত’
১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:১৬ | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৬
ঢাকা: বিগত সরকারের লুটপাটের বাজেট থেকে সরে এসে বর্তমান সরকারের উচিত ছিল নিজস্ব একটা অন্তর্বর্তী বাজেট দেওয়া—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
১০০টি পণ্যের ওপরে অন্তর্বর্তী সরকারের ভ্যাট আরোপ ও বর্তমান অর্থনেতিক অবস্থান তুলে ধরতে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের লুটপাটের বাজেট বাস্তবায়ন করা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই একটা কঠিন কাজ। ঘাটতি মেটাতে সবচেয়ে ইজি অপশন হচ্ছে- এনবিআরকে বলবেন, আমাদের ঘাটতি আছে, ঘাটতি পূরণে কী করা যায়? এ ক্ষেত্রে খুব সহজভাবে কর বাড়ানো ছাড়া আর কোনো কাজ নাই এনবিআরের। সরকার এত ইজি অপশন না নিয়ে অনেকগুলো অলটারনেটিভ আছে, সেই অলটারনেটিভ তাদের অ্যাড্রেস করা উচিত ছিল।’
আমির খসরু বরেন, ‘কর বাড়ানো হচ্ছে সবচেয়ে ইজি অপশন। এনবিআরকে বললে এনবিআর কর বাড়াবে। সুতরাং বাংলাদেশের মানুষ যে দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে এখন অতিক্রম করছে, তারা দুই বেলা দুই মুঠো খেতে পারছে না এবং তাদের ক্রয় ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। সে অবস্থায় যদি আপনি আবার কর আরোপ করেন, আবার ভ্যাট আরোপ করেন- এমনকী ওষুধেও; সেখানে তো তারা আরও দরিদ্র সীমার নিচে যাবে এবং সেখান থেকে তাদের বের করে আনতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। সুতরাং তাদের উচিত ছিল একটা অলটারনেটিভ অপশন অ্যাড্রেস করা। এগুলোর মাধ্যমে এ ঘাটতি পূরণ করা যেত; যেটা আমরা সাজেস্ট করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের লুটপাটের যে বাজেট, সেখান থেকে সরে এসে তাদের (বর্তমান সরকার) নিজস্ব একটা অন্তর্বর্তী বাজেট দেওয়া উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। অবশ্যই যখন একটা নির্বাচিত সরকার আসবে, তখন তারা এই বর্তমানে অর্থনীতি যে ডোল-ড্রামের মধ্যে আছে, সেখান থেকে বের করে আনার জন্য স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করতে পারে। আমাদেরকে সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচিত সরকার আসা পর্যন্ত। বর্তমান ম্যানেজমেন্টকে বিগত সরকারের লুটপাটের বাজেট বাস্তয়ন থেকে সরে আসতে হবে।’
আমির খসরু বলেন, ‘আমাদের জিডিপি খারাপ অবস্থায় আছে। এটার রি-পেমেন্ট ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এটা ক্রমান্বয়ে আরও খারাপের দিকে যাবে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে অর্থনীতি নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে বর্তমান প্রেক্ষাপট থেকে বের হওয়ার জন্য। আওয়ামী লীগের বাজেটকে তারা কন্টিনিউ করতে গিয়ে এই বিপদে পড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সময়ে নেওয়া বড় বড় প্রজেক্টগুলোর রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট ইজ ভেরি লো। তারা যে লুটপাটের বাজেট করেছে, আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) কিন্তু ওটা বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন নেই। আপাতত এটা স্থগিত রেখে বাংলাদেশের মানুষের ক্রাইসিসটা কী, সেটা আপানাকে অ্যাড্রেস করতে হবে। আপনি যদি এখন ওই বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ওপর করের চাপ দেন, ভ্যাটের চাপ দেন, সেটা কোনো ইকোনোমিক ম্যানেজমেন্টের মধ্যে পড়ে বলে আমি মনে করি না। দিস ইজ দ্য ইজি অপশন। বাট দিস ইজ নট ওয়েল ইকোনোমিক ম্যানেজমেন্ট। এভাবে হবে না।’
মহার্ঘ ভাতা স্পর্কে মতামত জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই ধরনের স্টেপগুলো নিঃসন্দেহে কিছু সমস্যা তৈরি করবে। একই সময়ে মহার্ঘ ভাতা তো কিছুটা ইনফ্লেশন বাড়াবে। কিন্তু, সাধারণ মানুষের তো আয় বাড়ছে না। এই বিষয়গুলো আপাতত তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) খুব বেশি প্রয়োজন ছিল না। তারা যদি দ্রুত নির্বাচনের দিকে যেত, যেটা আমরা বারবার বলে আসছি। মূল বিষয়টা হচ্ছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে অনেক বিষয় সমাধান হয়ে যায়। যেটা পার্লামেন্ট ছাড়া সম্ভব না। সেই কারণেই আমরা এত বেশি জোর দিচ্ছি একটা নির্বাচনের মাধ্যমে জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠনের ব্যাপারে।’
সারাবাংলা/এজেড/এমপি
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাজেট বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর