ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব ব্র্যান্ডের পোশাকে, ছাড় দিয়েও মিলছে না ক্রেতা
১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৩ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৭
ঢাকা: গত দুই দশকে আন্তজার্তিক অঙ্গনের পোশাকের কিছু ধারা দেশিয় ফ্যাশন জগতেও প্রতিফলিত হতে দেখা গেছে। পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকে ফিউশনের ছোঁয়া থাকায় দেশিয় পোশাকের কদর বেড়েছে। তাছাড়া ক্রেতাদের চাহিদা এবং ঋতু কিংবা উৎসব অনুযায়ী পোশাক তৈরিতেও গুরুত্ব রয়েছে। সেই পছন্দের ব্রান্ডের পোশাক বিক্রিতে এখন থেকে ভ্যাট যোগ হচ্ছে দ্বিগুণ। বিক্রেতারা বলছেন, বাড়তি ভ্যাটের প্রভাব মারাত্মকভাবে ব্যবসায় পড়েছে। একেকটি ব্র্যান্ড দ্বিগুন আড়াইগুন ডিসকাউন্ট দিয়েও ক্রেতা টানতে পারছেন না।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কয়েকটি ফ্যাশন হাউজ ঘুরে দেখা গেছে, ডিসকাউন্টের ছড়াছড়ি। দেশিয় ব্র্যান্ড ‘সেইলর’ এ ৫০ শতাংশ ছাড় চলছে এক মাস ধরে। মিরপুর ১১ নম্বরের শোরুমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বছরে একটা বড় ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকেন। গেল বছর তিন বার দিতে হয়েছে।
কর্মী নাজনীন আক্তার বলেন, ‘এখন দেশে অনেক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠিত। সেখানে একটা প্রতিযোগীতা রয়েছে। সেই প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে এমন ছাড় দিতে হয়। ক্রেতা অনেক কমে গেছে। তারওপরে বাড়তি ভ্যাট ক্রেতাদের আগ্রহ কমিয়েছে।’
দেখা গেছে, গত এক মাস ধরে সকল পণ্যে ৫০ শতাংশ ছাড় চলছে। কিন্তু এখনো স্টোর খালি হয়নি।
শুক্রবার থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে আরেক ব্র্যান্ড ‘লারিভ’ এ। সেখানেও গেল বছরের মত ক্রেতা নেই বলে জানালেন কর্মীরা।
কর্মী রাহাতুল জানান, শুক্র ও শনিবার প্রচুর ভিড় ছিল ক্রেতাদের । এখন আর নেই। কিন্তু আমাদের পন্য রয়েছে এখনো প্রচুর। ৩ হাজার টাকার পণ্য কিনতে গেলে প্রায় ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে ভ্যাট। পোশাক কিনে বিল দিতে এসে কাউন্টারে অনেক ঝামেলাও করেন অনেক ক্রেতা।’
ব্র্যান্ড টুয়েলভসে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় চলছে। এর শোরুমগুলোও ফাকা। বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় অনেকগুলো শোরুম বন্ধ করে দিয়েছে ‘কে ক্রাফট’, ‘দেশাল’, ‘বাংলার মেলা’, নিপুনের মতো এক সময়ের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। রাজধানীর ঢাকাতে এখন হাতে গোনা কয়েকটি শোরুম পাওয়া যাবে। অথচ এক সময় এসকল ব্রান্ড ছিলো প্রায় সকল এলাকায়। যে কয়টি শোরুম আছে সেগুলোতেও বছরের প্রায় আটমাসই পোশাকে ছাড় দেওয়া হয়।
২০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় চলছে দেশীয় পণ্য ‘রাইজ’ এ। এই ব্র্যান্ডের অন্যতম বড় পল্লবি শোরুম। রোববার গিয়ে দেখা গেল ক্রেতা শূন্য। কর্মীরা সময় কাটাচ্ছেন যে যার মত গল্প করে। ছাড় চলছে দেশিয় পোশাকে পাশ্চ্যাত্যের ফিউশন থাকা ব্র্যান্ড ‘মাইক্লোতে’। দোতলা শোরুমটি একদম ফাঁকা। কোনো ক্রেতা নেই। একই ধাঁচের পোশাকের ব্র্যান্ড ‘আর্টিসানে’ দুইমাস ধরে ডিউকাউন্ট চলছে। শীতের কাপড়ের জন্য ক্রেতারা এই ব্র্যান্ডটি পছন্দের তালিকায় রাখেন অনেকেই। কিন্তু এবার শীত না থাকায় সেখানেও এক রকম ফাঁকা।
এ সকল ব্র্যান্ডের পাশাপাশি ই-কর্মাসের মাধ্যমেও কিছু ব্র্যান্ড গত ৫ বছরে বাজারে পণ্য নিয়ে এসেছে। এদের কেউ কেউ শোরুমের মাধ্যমেও পোশাক বিক্রি শুরু করেছেন। সেসকল শোরুমগুলোতেও ক্রেতা নেই। শোরুমের পাশাপাশি অনলাইনেও ডিসকাউন্টের ছড়াছড়ি। লাইভে নানা অফার দেওয়া হচ্ছে। তাদের ভ্যাট দিতে না হলেও ক্রেতা নেই বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।
তবে ক্রেতারা বলছেন, অনলাইনেও পোশাকের দাম বাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে মান।
ব্যাংক কর্মী কাশফিয়া বলেন, ‘করোনার সময় থেকে অনলাইনে কেনাকাটার অভ্যাস হয়ে গেছে। যে কারনে এখনো অনলাইনেই কেনাকাটা করি। কিন্তু এখানে এখন আর আগের মতো কোয়ালিটিফুল পোশাক পাওয়া যায়না। কাপড়ের মান একেবারে বাজে করে ফেলছে কিছু কিছু অনলাইন পেইজ। তারা দেখায় এক রকম পাঠায় আরেক রকম।’
গত বৃহস্পতিবার সরকার ভ্যাট বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে পোশাক পণ্যে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/এমপি