Sunday 19 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এবার কড়া রাস্তায় যাব— পলিথিন প্রসঙ্গে পরিবেশ উপদেষ্টা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪০ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৭

পলিথিনবিরোধী ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পলিথিন নিয়ে এবার কড়া রাস্তায় যাবেন বলে হুঁশিয়ার করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে পলিথিনবিরোধী এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এ হুঁশিয়ারি দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা নিয়মিত কাঁচাবাজারে যাচ্ছি। হাতে তিনটি ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছি। একটি কাগজের ব্যাগ, একটি কাপড়ের, আরেকটি চটের। এগুলো দেখিয়ে আমরা সবাইকে বলছি যে, আপনারা এই ব্যাগগুলোই শুধু ব্যবহার করবেন। এগুলো দেখানো কিন্তু আমাদের শেষ। এবার আমাদের কড়া রাস্তায় যেতে হবে।’

‘হয়তো অনেকেই আমার সমালোচনা করবেন যে, উনি পলিথিন বন্ধ করবেন বলেছিলেন, কিন্তু পারেননি। আমি না হয় পারিনি, প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কী করছেন। আপনার শিশুটার মায়ের দুধে তো পলিথিন ঢুকে যাচ্ছে, আপনার সন্তানের মগজে তো পলিথিন ঢুকে যাচ্ছে।’

পলিথিন নিষিদ্ধ এমন বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রুয়ান্ডা নামে একটা দেশ আছে, একসময় সেখানে গৃহযুদ্ধ ছিল। সেখানকার শাসকেরা বলছেন- গৃহযুদ্ধ আমাদের যতটা না ক্ষতি করেছে, তারচে বেশি ক্ষতি করেছে পলিথিন। আপনি সেদেশে পলিথিন নিয়ে ঢুকতেও পারবেন না। বিমানের দরোজায় আপনাকে আটকে দেওয়া হবে। তানজানিয়া গেলাম, তারা প্রথমে আপনার ব্যাগ সার্চ করে দেখবে পলিথিন আছে কিনা। তারপর আপনাকে ঢোকার পারমিশন দেবে। তানজানিয়া তাদের দেশে জলাবদ্ধতা হচ্ছে বলে আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়নি, পলিথিন বন্ধ করেছে। আর আমরা জলাবদ্ধতার জন্য আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছি, অথচ পলিথিন সস্তা করে দিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

পলিথিনের বিকল্প কী?- এমন প্রশ্ন যারা তুলছেন তাদের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত লাগাতার অভিযান চালিয়ে আমাদের মার্কেট থেকে তো পলিথিন সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন তো কেউ পলিথিনের বিকল্পের কথা তোলেনি। এখন কেন এটা বলা হচ্ছে? এই বিকল্পের ধুয়াগুলো আসলে তোলা হচ্ছে পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের স্বার্থে।’

‘আপনার বাবা কী নিয়ে বাজারে যেতেন, চটের ব্যাগ নিয়ে। আপনার হয়তো মনে থাকবে আপনার বাবা প্রত্যেক শুক্রবার সন্ধ্যায় বলছেন, বাজারের ব্যাগটা একটু দাও তো। কিন্তু এখন আর আপনার বাবার মুখে সেকথা শোনা যায় না। কারণ, এখন বাজারে গেলে আলুর জন্য একটা পলিথিন, টমেটোর জন্য একটা পলিথিন, ফুলকপির জন্য একটা পলিথিন, কাঁচামরিচের জন্য একটা পলিথিন। এ অভ্যাস থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানদের শরীরে নানাভাবে বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছি। আমাদের বাতাসে প্লাস্টিকের বিষ। সেই বিষ নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে।’

উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিকের কারখানায় কাজ করে শ্রমিকের শরীরে ক্যানসার হচ্ছে। সেটা নিয়ে মালিকের কিন্তু শ্রমিকদের জন্য কোনো চিন্তা নেই। অথচ যখন এ নিষিদ্ধ পণ্যের কারখানা বন্ধের কথা বলা হয়, তখন শ্রমিককে সামনে আনা হয়। বলে, শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নিষিদ্ধ পণ্যের কারখানা বন্ধের জন্য কেন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে? পোশাক কারখানা বন্ধের জন্য মালিক ক্ষতিপূরণ দিতে পারলে নিষিদ্ধ পণ্যের কারখানা বন্ধের জন্য কেন রাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে? মালিককেই শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারে পলিথিনবিরোধী এক প্রচারণায় অংশ নেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

টপ নিউজ পরিবেশ উপদেষ্টা পলিথিন রিজওয়ানা হাসান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর