Sunday 19 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংবিধানে ‘জাতির পিতা’ রাখার বিধান চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২৬

ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সব সরকারি-আধাসরকারি দফতরে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৪ এর ‘ক’ এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।

রিটে সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৪ এর ‘ক’ এর বিলুপ্তির পাশাপাশি গণমাধ্যম ও পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারীদের শাস্তি দিতে কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জনস্বার্থে রোববার (১৯ জানুয়ারি) নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাসিন্দা ও মানবাধিকার সংগঠন সারডা সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মু. আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিটটি দায়ের করেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব, আইন সচিব, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান ও তথ্য সচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

রিটে একক ব্যক্তি কোন দেশ স্বাধীন করতে পারে না, তাই জনস্বার্থে ৯৩ শতাংশ মুসলিম অধ্যষিত দেশে জাতির জনক/পিতা এর স্থলে স্বাধীন ‘বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাগণ তথা ফাউন্ডিং ফাদারস’ নাম অন্তর্ভুক্ত করে এর সঠিক তালিকা প্রণয়নসহ সংবিধানের ‘অনুচ্ছেদ ৪ এর ক’ বিলুপ্তির পাশাপাশি গণমাধ্যম ও পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারীদের শাস্তি দিতে কেন কমিশন গঠন করা হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া জুলাই ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বিষয়টি গণমাধ্যমে ও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এই মর্মেও রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংবিধানের ৪ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারী ও আধা-সরকারী অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।

রিটে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখা ২৭ জনের একটি তালিকা যুক্ত করা হয়েছে। যাদের অবদানে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে তাদের বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাগণ তথা ফাউন্ডিং ফাদারস হিসেব উল্লেখ করা হয়েছে রিটে। তাদের মধ্যে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, এম এ জি ওসমানী, সাত বীরশ্রেষ্ঠদের নাম, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জাতীয় চার নেতার নাম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দীকী প্রমুখের নাম রয়েছে।

রিটে ‘বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাগণ তথা ফাউন্ডিং ফাদারস হিসেব’ এই ২৭ জনের তালিকা কম-বেশি করে কিংবা সঠিক তালিকা প্রণয়নে এ বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করার আবেদন জানানো হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়, ‘আমাদের এই বাংলা ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে কেবল একজন না, বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু শুধু বাহান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু হয়নি, আমাদের ইতিহাসের দীর্ঘ লড়াই- সংগ্রাম আছে (যেমন: ব্রিটিশবিরোধী লড়াই, সাতচল্লিশের দেশভাগের লড়াই)। আমরা মনে করি, এখানে বাংলাদেশের একজন নন বরং অনেকে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাগণ তথা ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছেন। যাদের অবদানের ফলে এই বাংলার ভূখণ্ড, এই রাষ্ট্র যেমন পেয়েছি, তেমনি আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। ফলে আমরা এটিকে একটি দল, একজন বা একক ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ করতে চাই না।’

এ বিষয়ে আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, “এ দেশ একক ব্যক্তির দ্বারা স্বাধীনতা লাভ করেনি। যেহেতু একক কোনো ব্যক্তি দ্বারা এ দেশ স্বাধীন হয়নি, সে কারণে ৯৩ শতাংশ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে ‘জাতির পিতা/ জাতির জনক’ সংক্রান্ত অংশটি সংবিধানে থাকতে পারে না। এ কারণে এ বিষয়ে গত ৬ জানুয়ারি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। সেই নোটিশের বিষয়ে কোনো সাড়া নো পেয়ে আজ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেছি।”

তিনি আরও বলেন, ‘রিটে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ এর ক চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছি। আবেদনে এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখা শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্বের নাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাগণ তথা ফাউন্ডিং ফাদারস হিসেব অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা চেয়েছি। আমি ২৭ জনের প্রাথমিক একটি নামের তালিকা দিয়েছি। আদালত মনে করলে সেই তালিকা কম-বেশি করতে পারেন।’

আগামী সপ্তাহে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানান রিটকারী মুরাদ ভূঁইয়া।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

চ্যালেঞ্জ জাতির পিতা টপ নিউজ রিট সংবিধান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর