গরু খাচ্ছে পলিথিন, প্লাস্টিকসহ যত আবর্জনা!
২০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৩:০৪
ঢাকা: গরুর খাবার কী? এই প্রশ্নের জবাবে ঘাস, খড়-বিচালী ইত্যাদিই হয়তো বলবেন সবাই। কিন্তু কক্সবাজারে যারা থাকেন তারা জানেন গরুরা অন্য কিছু খেতে শুরু করেছে। এই যেমন, পলিথিন, প্লাস্টিক, কাগজ, ওয়ানটাইম প্লেট, গ্লাস আরও কত কী। ফলে কক্সবাজারে গরু নিয়ে রাখাল বালককে আর মাঠে যেতে হয় না। রাস্তার পাশের ডাস্টবিন বা খোলা নর্দমায় গেলেই তারা পেয়ে যায় গরুর খাবার।
কক্সবাজার শহরে ডাস্টবিন থেকে গৃহপালিত গবাদিপশুগুলোকে পলিথিন-কাগজসহ নানা ধরনের আবর্জনা খেতে দেখা যায়। এবং এটা হরহামেশাই চোখে পড়ে। প্রতিনিয়ত দেখা বিষয়টা শহরের অনেকের কাছে স্বাভাবিক ঠেকলেও বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য ভয়াবহ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষুধার্ত তৃণভোজী গৃহপালিত পশুগুলো খাবারের অভাবে পলিথিনসহ ক্ষতিকর খাবার খাচ্ছে। এতে খাদ্য বিষক্রিয়ায় পশু অসুস্থ্য ও মারা যাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ও মানব দেহের। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়নে সবুজ ধ্বংস, গবাদিপশুর খাবারের সংকট ও পশু পালনকারীদের অযত্ন-অবহেলা।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মূল সড়কের পাশের ডাস্টবিনগুলোসহ গলি-ঘুপচির ডাস্টবিনগুলোতেও গরু ময়লা আবর্জনা খাচ্ছে। এই দৃশ্যের সঙ্গে যারা পরিচতি নন তাদের অনেকেই অবাক হয়েছেন। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে সাইফুল ইসলাম নামে একজন সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গবাদিপশুর এই খাদ্যাভ্যাস গিনেজবুকে নাম লেখানোর মতো!’
শহরের আলীর জাহাল এলাকার গবাদি পশু পালক লিয়াকত মিয়ার কাছ থেকে জানা যায়, তিনি র্দীঘ ২০ বছর ধরে গরু-ছাগল পালন করছেন। তার কাছে প্রায় ১৫-১৬ টা গরু আর ২০ থেকে ২৫ টা ছাগল ছিল। তা বর্তমানে কমে ছয়টা গরু আর আটটা ছাগলে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
পশু কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, প্রাকৃতিক খাবারের সংকট। শহরে আগের মত মাঠ নেই। যা আছে সেখানে আবার তেমন ঘাসও নেই। এছাড়া আবর্জনা থেকে এটা-সেটা খেয়ে অসুস্থ হয়ে কয়েকটা গরু মারা যায়। এ বিষয়ে পরিবেশ বিশেজ্ঞ ও সাংবাদিক আহম্মদ গিয়াস সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেকে বাসাবাড়ির উচ্ছিষ্ট খাদ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য পলিথিনের প্যাকেটেবন্দি করে ডাস্টবিনে ফেলে। আর ওই বর্জ্য খাচ্ছে ক্ষুধার্ত গবাদিপশু। এ সময় খাদ্যের সঙ্গে থাকা পলিথিনও খেয়ে ফেলার ফলে খাদ্য বিষক্রিয়া আক্রান্ত হয়। এতে অনেক গবাদিপশু মারা যায়। মূলত নগরায়নের ফলে দিন দিন সবুজায়ন করছে। এটি গবাদিপশুর খাদ্য সংকটের বড় কারণ।
কক্সবাজারে ‘সবুজে বিপ্লব’ স্লোগানে সবুজায়ন নিয়ে কাজ করা এমএ মঞ্জুর সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে জানান, শহরের গবাদি পশু বিশেষ করে গরু পলিথিনসহ বিভিন্ন বিষাক্ত প্লাস্টিক খাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ঘাসের অভাব। ফলে অবাধে প্লাস্টিক খাচ্ছে গবাদিপশু। এই পলিথিন পশুর পাশাপাশি ক্ষতি করছে উদ্ভিদ, জলজ প্রাণীসহ মানুষের। বিষাক্ত পলিথিন গবাদিপশু খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে ডাইজেস্টিক সিস্টেমে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। এতে গবাদি পশুর ওজন কমে যায়। ওসব পশুর মাংস, দুধ স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। পলিথিনের এই ভয়াবহ দূষণ থেকে বাঁচতে হলে শহরের সবুজকে বাঁচাতে হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম তালুকদার জানান, মাসে অন্তত ৩/৪টি গৃহপালিত পশু ফুডপয়জন (পেটের অসুখ) নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসে। বিষক্রিয়ার ফলে এসব পশুর মুখ দিয়ে লালা পড়াসহ ঠান্ডা হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শহরের গৃহপালিত পশুর এই অবস্থার জন্য অনেক অসচেতন পশুর মালিক দায়ী। তারা পশুগুলোকে ঠিকমত খেতে দেয় না এবং রাস্তায় ছেড়ে দেয়। এসব পশু অনেক সময় কুকুরের আক্রমণের শিকার করে জলাতঙ্ক রোগেও ভোগে।’
তিনি বলেন, ‘যারা গবাদিপশু পালন করবে তাদের প্রথম নির্দেশনা হচ্ছে, অবশ্যই পশুর খাবারের তালিকায় ৩ ভাগের ১ ভাগ ঘাস থাকতে হবে। যদি ঘাস পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে বাজার থেকে শাকসবজির উচিষ্ট অংশ খাওয়াতে হবে। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অসাধু কসাই ও খামামিরা। যারা অনেক সময় জলাতঙ্ক বা রোগাক্রান্ত পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করে। যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এএম খালেকুজ্জামান সারাবাংলাকে জানান, শহরের গবাদিপশুগুলো ইচ্ছে করে আবর্জনা বা প্লাস্টিক খায় এমনটা না। এসব খাওয়ার ফলে অনেক প্রাণী রিকভার হয় না। পশুর খাবার সংকট কমাতে সবুজায়নের বিকল্প নেই। এ ছাড়া জনসচেতনতা দরকার। গবাদিপশুর নিরাপদ জীবন যাপনে। সর্তক থাকতে হবে খাবার নিশ্চিতের পাশাপাশি অযন্তে অবহেলায় যেন পশুগুলো ছেড়ে দেওয়া না হয়।’
এদিকে, শহরের গবাদিপশু বিষাক্ত বর্জ্য খাওয়া রক্ষার্থে জনসচেতনতার সঙ্গে আইন প্রয়োগের পরার্মশও দিচ্ছেন বিশেজ্ঞরা।
সারাবাংলা/পিটিএম