মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:০১ | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:১৪
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) শপথ নেন তিনি। ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হওয়ার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। গত নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ফিরলেন তিনি। খবর বিবিসির।
মার্কিন গণতন্ত্রের প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাসে ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প মাত্র দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি প্রথম মেয়াদের পর পরাজিত হয়ে চার বছর পর আবার জয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন। এর আগে ১৮৯০-এর দশকে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড চার বছর পর দ্বিতীয় মেয়াদ জয়লাভ করেন।
এদিন ক্রিস্টোফার ম্যাকিওর ‘ওহ, আমেরিকা’ গানের মাধ্যমে শপথের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিরাও। ছিলেন বিদায়ী ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন এবং সেকেন্ড জেন্টলম্যান ডগ এমহফসহ বিদায়ী প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও। অনুষ্ঠানে যোগদানের আগে হোয়াইট হাউসে চা পান ও বৈঠক করেন বাইডেন ও ট্রাম্প। এরপর তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একটি লিমোজিনে চড়ে হোয়াইট হাউস থেকে ক্যাপিটল হিলে পৌঁছান।
বিবিসির খবরে বলা হয়, হোয়াইট হাউজের উত্তর পোর্টিকোতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ওয়েলকাম হোম’ বলে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। হোয়াইট হাউসে প্রবেশের আগে সাংবাদিকরা চিৎকার করে প্রশ্ন করলেও কোনো প্রেসিডেন্টই উত্তর দেননি। আজ প্রথমবারের মতো এই জুটির দেখা হয়েছে। নির্বাহী ক্ষমতার সীমা বাড়ানো, লাখ লাখ অভিবাসীকে বহিষ্কার, রাজনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া এবং বিশ্বমঞ্চে আমেরিকার ভূমিকা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এরপর জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়ে রাখার কারণ আছে। শিগগিরিই পরিবর্তন আসবে।’ তিনি জানান, সোমবারই মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শপথ উপলক্ষ্যে সোমবার ওয়াশিংটনের সর্বত্রই ছিল সাজসাজ রব। নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল পুরো শহর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২৫ হাজার সদস্য এ অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব পালন করেন। চার বছর পর পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেকের আয়োজন খোলা স্থানেই করা হয়। কিন্তু তীব্র ঠান্ডার কারণে কংগ্রেস ভবনের ভেতরে এবার অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
কংগ্রেস ভবনের ভেতরে শপথ অনুষ্ঠান হওয়ায় এবার বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগমের সুযোগ ছিল না। সেখানে মাত্র ২০ হাজার অতিথির বসার স্থান রয়েছে। যারা ভেতরে ঢোকার টিকিট পাননি, তারা ন্যাশনাল মলে বড় স্ক্রিনে অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করেছেন। শপথের পর ট্রাম্প ক্যাপিটল থেকে হোয়াইট হাউজে একটি জমকালো প্যারেডের মাধ্যমে যাত্রা করেন। ট্রাম্পের সম্মানে ক্যাপিটল রোটুন্ডায় কুচকাওয়াজও আয়োজন করা হয়।
ট্রাম্পের এই শপথ অনুষ্ঠানে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি প্রযুক্তি জগতের শীর্ষস্থানীয় ধনী ব্যক্তিদের উপস্থিতি ছিল বড় চমক। ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গ এবং টিকটকের প্রধান নির্বাহী শৌ চিউসহ আরও অনেকে এই অনুষ্ঠানে ভিআইপি আসনে ছিলেন। বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামাও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটন এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রথাগতভাবে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো না হলেও ট্রাম্প ইতালি ও হাঙ্গেরির ডানপন্থি নেত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও ভিক্টর অরবান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মিলেই এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছে।
সারাবাংলা/পিটিএম