চাল আমদানির জন্য আরও দেশের সন্ধানে খাদ্য উপদেষ্টা
২১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:১১ | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চাল আমদানির জন্য বিভিন্ন দেশের সন্ধান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা খাদ্যদ্রব্য খালাস কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এর আগে তিনি নগরীর পতেঙ্গায় নির্মাণাধীন সাইলো পরিদর্শন করেন।
সম্পর্কের অবনতি সত্ত্বেও ভারত থেকে চাল আমদানির করার বিষয়ে জানতে চাইলে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বাণিজ্যকে আমরা রাজনীতির সঙ্গে মিলাচ্ছি না। ভারত যেহেতু আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং সেখান থেকে আমদানি খরচ তুলনামূলকভাবে কম ও সস্তা দামে পাওয়া যায়, সেজন্য সেখান থেকে পণ্য সরবরাহ অব্যাহত আছে। আমরাও সেটাকে ওয়েলকাম করছি। পাশাপাশি মিয়ানমার আমাদের কাছে আরও চাল বিক্রি করতে চাচ্ছে।’
‘আমরা তাদের সঙ্গে এক লাখ টনের চুক্তি করেছি। তারা আরও বিক্রি করতে চাচ্ছে। আমরা তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ও সরবরাহের অবস্থা দেখে এরপর বিবেচনা করব। এছাড়া আরও উৎসের সন্ধান আমরা করছি। পাকিস্তান থেকে আমরা ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমরা আমদানির ব্যবস্থা করেছি।’
সব মিলিয়ে কী পরিমাণ চাল আমদানি করা হচ্ছে- জানতে চাইলে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আট থেকে নয়লাখ মেট্রিকটন চাল আসবে। সরকারি সেক্টরে প্রায়ই আটলাখ মেট্রিকটন চাল আসবে। ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান এসব জায়গা থেকে আসবে। ভিয়েতনামের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
বিদেশ থেকে কয়েক দফা চাল এলেও দাম কমছে না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে প্রথম কথা হচ্ছে দাম বাড়ানো বন্ধ হয়েছে। মোটা চাল যেটা আছে, সেটার দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা কমেছে। আমরা আরও আনতে থাকব। দাম বাড়ার আর সুযোগ থাকবে না, বরং কমবে।’
সামনে রমজানকে ঘিরে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার একটি শঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কী ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রমজান মাসে আমাদের খাদ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ করে চাল ও গম সবচেয়ে বেশি দেখাশোনা করে। বাকি কিছু আইটেম দেখভাল করে টিসিবি। সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। টিসিবিও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলায় প্রতিদিন দুই মেট্রিক টন চাল বিক্রি শুরু হয়েছে এ মাস থেকে। রমজান মাসেও এটা থাকবে। সারাদেশে ৫০ লাখ লোকের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হয়েছে।। দরিদ্র শ্রেণির ৫০ লাখ লোক মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে ১৫ টাকা করে। আশা করছি, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য সহনশীল থাকবে।’
খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমরা অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের দিকে বেশি নজর দিচ্ছি। বিদেশ থেকে না আনতে পারলে আমরা সবচেয়ে বেশি খুশি হব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দুর্যোগ কবলিত দেশ। যে কোনোভাবে আমাদের দেশে দুর্যোগ আসে। দুর্যোগ আসলেই আমাদের দেশের ফসল ক্ষতি হয়। এবার যদি অকাল বন্যা না হতো, তাহলে আমাদের এতটা চাপে পড়তে হত না। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে আগামীতে ফসল ভালো হয়।’
‘খুব কম সময়ে যাতে অধিক ফসল ফলে অনেকগুলো গবেষণাগার সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গবেষণার ফসলের বীজ যেটা আছে সেটা কৃষকদের সরবরাহ করা হচ্ছে, যাতে কম সময়ের মধ্যে ফসল ফলানো যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে তো মানুষ বাড়ছে। শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য চাষের জমি বেছে নেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক পুকুর করা হচ্ছে। এতে ধানের জমি কমে যাচ্ছে। আমের বাগান করছে। সবকিছু ব্যালেন্স করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
কৃষক বেসরকারি খাতে দাম বেশি পাওয়ায় সরকারকে চাল বিক্রি করতে চায় না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি খাতে আমরা যখন দাম নির্ধারণ করি তখন উৎপাদন খরচ ও কৃষকের লাভ দুটিই ধরি। সেক্ষেত্রে আমরা যদি কিছু বাড়িয়ে ধরি কৃষক বিক্রি করবে। কিন্তু বাজারে দাম আরও বেড়ে যাবে, যদি সরকার বাড়তি দাম দিয়ে কিনে। আমাদেরকে ওখানেও ব্যালেন্স করতে হয়। কৃষকের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি দেখতে হয়। যেহেতু বন্যায় ফসল ক্ষতি হয়েছে, তাই এবার আমদানিতে টোটাল ট্যাক্স উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা সবসময় থাকবে না। আমাদের যদি ফসল ভালো হয় এটা আর থাকবে না।’
এ সময় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দিন,খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আব্দুল খালেক ও বন্দর চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/এমপি