আহত সেজে সহযোগিতা নিলেন জুলাই আন্দোলন বিরোধী ছাত্রলীগ নেতা!
২১ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:১৭
ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থীকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ঢাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, যেসব আহত শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে একজন নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা। যিনি জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন।
সেই ছাত্রলীগ নেতা হলেন কেফায়েত হোসেন। তিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার সহ-সম্পাদক ছিলেন। তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারী এবং জুলাই অভ্যুত্থানে (১৭ জুলাই পর্যন্ত) আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ১৭ জুলাইয়ের পরও তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষে পোস্ট করেছেন, কমেন্ট করেছেন ও আন্দোলনকারীদের প্রতিনিয়ত কটাক্ষ করেছেন। এর জন্য তার হলের ছাত্ররাও তাকে বয়কট করে। অথচ, সেই ছাত্রলীগ নেতাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন ঢাবি প্রশাসন। যেখানে আন্দোলনে আহত অনেক শিক্ষার্থী ঢাবি থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য মতে, অন্তত ২৭৮ জন ঢাবি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার এক কর্মকর্তা। অথচ সহায়তা দেওয়া হয়েছে মাত্র ১২ জনকে। যার মধ্যে একজন ছাত্রলীগের নেতা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আহত শিক্ষার্থীরা ঢাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
১৫ জুলাই ঢাবিতে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ অনিক। সারাবাংলাকে বলেন তিনি, ‘১৫ জুলাই যখন ছাত্রলীগ হামলা করছিল তখন আমি একদম তাদের সামনে পড়ে যাই। এ সময় তারা আমাকে লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করলে আমার আঙুলের হাড় ভেঙে যায়। চশমা ও ফোনও ভেঙে যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি কোনো সহায়তা পাইনি। অথচ আমরা দেখি, আন্দোলনে না থেকেও সহায়তা পেয়েছেন অনেকে।’
একই দিন মল চত্বরে আহত হয়েছিলেন ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজুল হাকিম সবুজ। ওইদিন তার মাথায় অন্তত নয়টা সেলাই করতে হয়েছে। তার দাবি, তিনি ঢাবি প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা পাননি। এ প্রসঙ্গে সবুজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করেছি। আমাদের ওপর যারা হামলা করেছে তাদের সহায়তা দেওয়া হলো। এটা আমাদের সঙ্গে ইনজাস্টিস করা।’
ছাত্রলীগ নেতাসহ ১২ শিক্ষার্থীকে কীসের ভিত্তিতে সহায়তা দেওয়া হয়েছে? জানতে ঢাবির প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেননি।
পরে একই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যারা এসেছেন তাদের দিয়েছি। তবে ছাত্রলীগ নেতার বিষয়ে জানার পর তার সহয়তা স্থগিত করা হয়েছে। তিনি আহত সেজে আমাদের সঙ্গে এমন প্রতারণা করবেন, সেটা আমাদের জানা ছিল না।’
সারাবাংলা/এআইএন/পিটিএম