‘রাজাকার শেখ হাসিনা সৃষ্টি করেছেন’
২১ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:২৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজাকার সৃষ্টি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রেস ইন্সস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘রাষ্ট্র রুপান্তরের সময়ে সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আজ যদি বলে সে যাদেরকে রাজাকার বলেছে তাদের কে সৃষ্টি করেছে? শেখ হাসিনাই সৃষ্টি করেছে তাদেরকে। জঙ্গি, কিশোর গ্যাং, রাজাকার যাদের বলেছে তারা তো বেরিয়ে এসে বলছে যে ঠিক আছে আমি সেই রাজাকার। আসলে রাজাকার কথাটির জন্য ছাত্ররা ক্ষোভে ফুঁসেছে। হাসিনা ফুঁসেছে কেন? তাকে এ প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচার বলা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৮ বছরে ছাত্রদল, বিএনপি বললে সেটা তারা অনুমতি দিত। কারণ সেটা তাদের দেখাতে হতো যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু সাধারণ মানুষ ও ছাত্র-ছাত্রী তাকে খুনি ও স্বৈরাচার বলছে, এটা সে সহ্য করতে পারেনি। ওই রাতেই সে বুঝে গিয়েছে এখন থেকে এটা মানুষের মুখে মুখে প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে। ওই স্লোগানে আমাদের আবার ফিরে যাওয়া দরকার। তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার/ কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার। এটা হচ্ছে সে মন্ত্র। এই এক মন্ত্রে হাসিনার সবকিছু ধ্বসে পড়েছে। আমাদের গণমাধ্যমকে সে স্পিরিট আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি বিপদজনক পরিস্থিতিতে আছি যে আবার একটি বিডিআরের অভ্যুত্থানের মতো, হেফাজতের কালরাতের মতো ও জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটবে না বা আমাদের সীমান্ত যে হাতছাড়া হবে না এ আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারি না। এশিয়ার বৃহত্তম কারাগারে বানানো হয়েছিল ঢাকাকে। ঢাকা শহরকে তৈনি করা হয়েছিল বন্দি সরবরাহকারী একটি শহর।’
২০১৪ ও ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচারের নামে প্রতিহিংসামূলক ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমার এ স্বাধীন রাজধানীকে কলোনিয়াল ক্যাপিটাল হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল, যার পাশে বৃহত্তম কারাগার। এ শহর থেকে অপরাধী না ধরে রাজনৈতিক কর্মী, বিদ্রোহী যারা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাদের ওখানে ঢুকাব। এ গণমাধ্যম এসব ইতিহাসকে তুলেছিল। ২০১৮ সালের পর তারা এসব কথা একটু একটু বলা শুরু করেছে। মূলত বড় বড় দুর্নীতিগুলো নিয়ে। রাজনৈতিক দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেনি। ২০১৮ সালের রাতের আঁধারের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেনি। ২০১৪ ও ১৫ সালে বিচারের নামে একধরনের প্রতিহিংসামূলক ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল সে কথাটি এখনো তারা বলতে পারছে না।’
বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে কোনো অনুসন্ধানী রিপোর্ট মিডিয়া থেকে আসছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের জবান নাকি খুলে গেছে। কিন্তু আমরা রামপাল, রুপপুর নিয়ে কথা বলি না। মাতারবাড়ি নিয়ে কথা বলি না। আমরা এখন বিডিআর হত্যাকাণ্ড ইস্যুটা নিয়ে কথা বলি না। যদি কেউ লেখেন বা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কিছু বলেন তবে সেটা আমরা রিপোর্ট করি। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো অনুসন্ধানমূলক রিপোর্ট আমাদের মিডিয়া থেকে আসছে না। ওই দিনের যে কালো রাত, ওই রাতে কি হয়েছিল সেটার কোনো চিত্র আমরা বলতে পারছি না।’
‘কারণ এমন একটি অভ্যুত্থান হয়েছে যার কোনো মুখপাত্র নেই। এ অভ্যুত্থান হলো, কিন্তু কোনো মুখপাত্র নেই। প্রত্যেকটি অভ্যুত্থানের একটি না একটি মুখপাত্র ছিল। ৪৭ এর যে আন্দোলন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেখানে মুখপাত্র ছিল ইত্তেফাক, আজাদ। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ইত্তেফাক ছিল মুখপাত্র। ৯০’র এর সংবাদ, তারা একটি প্রগতিশীল গোষ্ঠী। তবুও তারা ছিল। ৯০’র পরে গ্লোবালিজাইশেন হাত ধরে কিছু সুশীল করপোরেট দুটি বড় বড় পত্রিকা নিয়ে এলো। তারা এখনো বাংলাদেশের পত্রিকা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। আসলে তারা এ দেশে কাদের রিপ্রেজেন্ট করেছে?’
ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমরা সবসময় একটি গোষ্ঠীকে আনরিপ্রেজন্টিভ দেখেছি। এখনো দেখছি। যাদের বলা হচ্ছে রাজাকার, জঙ্গী, কিশোর গ্যাং। তারাই তো এসবের তকমা থেকে বেরিয়ে অভ্যুত্থানটি করল। কিন্তু তাদের মুখপাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো পত্রিকা তাদের পুরোপুরি গ্রহণ করছে না। উলটো যেটা করছে সেটা তাদের জন্য সর্বনাশের কাজ হচ্ছে।’
পিআইবির পরিচালক পারভীন সুলতানা রাব্বীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সুমন রাহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী, বাংলাদেশের হাইকমিশনের নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত প্রেস মিনিস্টার ফয়সাল মাহমুদ ও সিএমইউজের সভাপতি মো. শাহ নওয়াজ।
সারাবাংলা/আইসি/এইচআই