Sunday 26 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়— সীমান্তের ‘দীপশিখা’

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৫৮

ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি: সারাবাংলা।

রাঙ্গামাটি: সীমান্তে— ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয় পড়াশোনার একমাত্র ভরসা। তিন দশক ধরে বিদ্যালয়টি সীমান্ত এলাকার ‘দীপশিখা’ হিসেবে ভূমিকা রাখছে। প্রত্যন্ত এলাকার যেসব ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার বাইরে ছিল; তারাও এখন বিদ্যালয়মুখী। এখানে ঝরে পড়ার হার ক্রমেই কমছে। বাড়ছে শিক্ষার্থী। শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে  প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী ঠেগা। ঠেগা নদীর এক প্রান্তে বাংলাদেশ; অপর প্রান্তে ভারতের মিজোরাম। রাঙ্গামাটির দুর্গম বরকল উপজেলার ৪ নম্বর ভূষণছড়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা হচ্ছে ঠেগা খুব্বাং। পুরো ভূষণছড়া ইউনিয়নে দুইটি উচ্চ বিদ্যালয় থাকলেও একটি থেকে আরেকটি দূরত্ব অন্তত নদীপথেই চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার পথ। সীমান্তবর্তী ঠেগামুখ এলাকার উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে রয়েছে কেবলমাত্র ‘ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়’। সীমান্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ভরসা বিদ্যালয়টি। সাম্প্রতিক সময়কালে দুর্গম এলাকার এই বিদ্যালয়টিতে নির্মিত হয়েছে চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন। সীমান্তের দুর্গম অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে ওই এলাকার শিক্ষার্থীরাও এখন পাচ্ছেন আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার হাতছানি।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে ঠেগা নদীর পাড়ের খুব্বাং এলাকায় স্থাপিত ‘ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়ে’ বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭২ জন। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকার শিক্ষার্থীদের। ওই এলাকার সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এটি। আগে সেমিপাকা বিদ্যালয় একটি ভবন থাকলেও বর্তমানে চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনটিতে মোট ১২টি কক্ষ রয়েছে। প্রতি তলায় তিনটি কক্ষ আছে। ক্লাসরুম ছাড়াও নিচতলায় শিক্ষকদের অফিস কক্ষ ও হল রুম রয়েছে। এছাড়া প্রতি তলায় দুইটি করে মোট ৮টি শৌচাগার আছে।

বিজ্ঞাপন

২০২৩ সালের জুনে ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন চারতলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর রাঙ্গামাটি জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার বরকল উপজেলার দুর্গম ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের জুনে। নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় ২০২৩ সালের জুনে। এটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। বর্তমানে বিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিতেন চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের সন্তান। আমাদের এমনও শিক্ষার্থী আছে, যাদের বিদ্যালয় থেকে বাড়ির দূরত্ব ২-৩ ঘণ্টার বেশি হাঁটা ও নৌপথ। বিদ্যালয়টিতে দুর্গম এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রত্যন্ত এলাকার শিশুরা বিদ্যালয়ের আশপাশে এলাকায় প্রতিবেশীদের বাড়িসহ নানাভাবে বসবাস করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভূষণছড়া ইউনিয়নে দুইটি উচ্চ বিদ্যালয় থাকলেও একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব অনেক। আগে ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি সেমি পাকা ঘর ছিল। এখন সরকার ৪ তলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন করে দিয়েছে। শিক্ষকদের জন্য কক্ষ, হল রুমসহ পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। আগের থেকে বিদ্যালয়ের পরিবেশ অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক হয়েছে। আগে গ্রামের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষালাভের জন্যও রাঙ্গামাটি শহরে কিংবা বরকল উপজেলা সদরে যেতে হতো। এখন স্থানীয়ভাবেই যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকার যেসব ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার বাহিরে ছিল; তারাও এখন বিদ্যালয়মুখী হচ্ছেন।’

বরকল উপজেলার বাসিন্দা ও সমাজকর্মী সুশীল বিকাশ চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়টি একেবারেই সীমান্তবর্তী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঠেগা নদীর এক পাড়ে বাংলাদেশ আরেক প্রান্তে ভারত। বাংলাদেশ প্রান্তেই ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়টি। সীমান্তবর্তী এলাকা ও এর আশপাশের এলাকার পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা এই বিদ্যালয়েই পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়টিতে নতুন একাডেমিক ভবন হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ের পারিপার্শ্বিক দিকেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। সীমান্তবর্তী এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্য সুন্দর পরিবেশ পাবে।’ একই সঙ্গে সরকারকে পাহাড়ের অন্যান্য প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) রাঙ্গামাটি জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজক চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় স্কুল-কলেজ পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রাঙ্গামাটির দুর্গম অঞ্চলের বরকল উপজেলার ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয়সহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী চার তলা বিশিষ্ট ভবন করে দেওয়া হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ে পাহাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার উপযোগী সুযোগ পাবেন। এতে করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হবেন এবং ঝরে পড়া কমবে।’

সারাবাংলা/এসআর

ঠেগা খুব্বাং উচ্চ বিদ্যালয় রাঙ্গামাটি সীমান্তের ‘দীপশিখা’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর