Sunday 26 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বোর্ডে এখনো আওয়ামীপন্থিরা
নকলবাজ শিক্ষার্থীকে ঢাবির শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা

আরফাতুল ইসলাম নাইম, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৫৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও ভালনারিবিলিটির পরিচালক এক নকলবাজ শিক্ষার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষার্থী অনার্সে থাকাকালীন মিডটার্ম পরীক্ষায় নকল করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে শাস্তি দিয়েছিল। যার তথ্য-প্রমাণ সারাবাংলার হাতে রয়েছে।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও ভালনারিবিলিটি ইনস্টিটিউটে শিক্ষক স্বল্পতা থাকায় গত ২৭ নভেম্বর অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। যার ভিত্তিতে ১১ জন প্রার্থী আবেদন করেন। যাদের ভেতর থেকে ছয় জনকে আগামী ২৭ জানুয়ারি মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছে। যেখানে নৈতিকতা স্খলনজনিত কারণে শাস্তি পাওয়া এক শিক্ষার্থীও রয়েছেন বলে অভিযোগ ‍উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

‘নকলবাজ’ সেই শিক্ষার্থীর নাম ইশরার তাহমিন আনিকা। তিনি ইনস্টিটিউটের খণ্ডকালীন শিক্ষক অধ্যাপক ইউনুস মিয়ার একটা কোর্সে নকল করতে গিয়ে ধরা পড়েন। পরে ওই শিক্ষক ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবগত করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। পরবর্তী সময়ে ইনস্টিটিউটের বর্তমান পরিচালক সেই শাস্তি তুলে নেয়। শুধু শাস্তি তুলে নেওয়াই নয়, ওই শিক্ষার্থীকে একই ইনস্টিউটের প্রভাষক পদে নিয়োগ দিতে নানা বন্দোবস্ত করছেন বলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

এই নিয়োগের ক্ষেত্রে জড়িতরা হলেন- ইনস্টিটিউটের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান খান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন। তারা দু’জন এই নিয়োগ বোর্ডে সদস্য হিসেবে আছেন বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এই দু’জনের মধ্যে পরিচালক মনিরুজ্জামান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নেতা ছিলেন। জানা গেছে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের আস্থাভাজন হওয়ায় ঢাবিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। আর সেই দায় থেকে জুলাই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজাকারের সঙ্গে তুলনা দিয়েছেন। এমনকি তার সহকর্মীদের অনেককে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য ফেসবুকে লেখালেখির আহ্বান জানিয়েছিলেন এই শিক্ষক। এছাড়া, অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের পদধারী নেতা ছিলেন এবং পদকে কাজে লাগিয়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হন। তারাই এ শিক্ষার্থীকে শিক্ষক বানিয়ে নিজেদের দল ভারীর চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়াও জানা গেছে, এই শিক্ষার্থী ইনস্টিটিউটের পরিচালক মনিরুজ্জামান খানের অধীনে থিসিস করেছেন। ফলে, মনিরুজ্জামানই তাকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং সেকারেণ মৌখিক পরীক্ষায় ডেকেছেন। নৈতিকতা স্খলিত শিক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষার জন্য কীভাবে ডাক পেলেন? জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট পরিচালক মনিরুজ্জামান খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। বলতে পারছি না। রেজিস্ট্রার বিল্ডিং বলতে পারবে। ওখানে কথা বলেন।’

এদিকে বিষয়টি লোকচক্ষুর সামনে চলে আসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্ররা আন্দোলনে যারা বিরোধিতা করেছেন তাদের শিক্ষকতা থেকে বাদ দেওয়া উচিত। তাদের শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার নেই। তাদের যারা পুনর্বাসন করছে তারা জুলাই শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছে। আজকের বাংলাদেশ জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। সেই বাংলাদেশে যদি তারা এখনো স্বপদে বহাল থাকে, তাহলে এটা শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।’

নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ আশা করি। সেখানে যদি নীতি-নৈতিকতাহীন কাউকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে এ দায়ভার প্রশাসনের। এ ধরনের কোনো নিয়োগ হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীর নীতি-নৈতিকতার চর্চা নেই, সে শিক্ষার্থী যদি শিক্ষক হয় তাহলে এ দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কারণ, যারা আলো দেখাবে তারাই যদি নৈতিকতাহীন হয়, সমাজ তো আর ন্যায়পরায়ণ মানুষ পাবে না। সব চোর, বাটপার হবে।’

এ বিষয়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষকতা একটা মহৎ পেশা। তাই, শিক্ষকতা পেশায় যারা আসবেন, বা আসতে চান, তাদের অবশ্যই সৎ ও পরিচ্ছন্ন চিন্তার অধিকারী হতে হবে। আর তার আগেই যদি কারও বিরুদ্ধে নৈতিকতা স্খলনসংক্রান্ত অভিযোগ ওঠে তার এই পথ থেকে সরে আসা উচিত।’ নিয়োগ বোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামীপন্থি কেউ যদি এখনো নিয়োগ বোর্ডে থাকেন, তাহলে সেটা আমাদের জন্য দুঃখ ও অনুতাপের বিষয়।’

নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঢাবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ খানের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি, ওই শিক্ষার্থী যদি শিক্ষক হয় তাহলে সেটা আমাদের কমিউনিটির জন্য ভালো হবে না। আর বিষয়টি মূলত উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) দেখেন। তিনি ভালো বলতে পারবেন, কোনো প্রক্রিয়ায় তাদের ডাকা হয়েছে।’ নিয়োগ বোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাপারটা আমাদের নজরে এসেছে। আমি নিজেও কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। দেখি প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়।’

নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি ঢাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাইমা হক বিদিশাকে অবগত করা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়গুলো উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) দেখেন। তাই, এ বিষয়ে এখনই স্যারকে জানিয়ে রাখছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিধান আছে, সেই মোতাবেক আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে, এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- তা জানতে ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/এআইএন/পিটিএম

আওয়ামীপন্থিরা ঢাবির শিক্ষক নকলবাজ শিক্ষার্থী নিয়োগ বোর্ড নিয়োগের পরিকল্পনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর