Monday 27 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সরকারে কেউ কেউ অন্য কোনো ইস্যুতে বেশি মনোযোগী’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:০৫ | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৫২

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে আয়োজিত শিক্ষক সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান।

ঢাকা: বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের সাধ্যের মধ্যে রাখতে না পারার কারণ হিসেবে ‘সরকারের কেউ কেউ অন্য কোনো ইস্যুতে বেশি’ মনোযোগী কি-না, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে আয়োজিত শিক্ষক সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণ বিশ্বাস করে, অন্তর্বর্তী সরকারের মত একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষে বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়া সহজ। তাহলে এখন প্রশ্ন, অন্তর্বর্তী সরকার এতদিনেও কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ? জনগণের ওপর কেন উলটো ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এখনো কেন বাজার সিন্ডিকেটের দৌরত্ম চলছে? এমন পরিস্থিতিতে কিন্তু জনগণের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক- তাহলে কি সরকারে কেউ কেউ অন্য কোনো ইস্যুতে বেশি মনোযোগী, নাকি সরকার পারছে না?’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে সংবিধান, সেই সংবিধানে কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি। আমরা দেখেছি পলাতক যে স্বৈরাচার, তারা তাদের ইচ্ছামতো কাটাছেড়া করে রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে দলীয় সংবিধানে রূপ দিয়েছিল। ঠিক একইভাবে নির্বাচন কমিশন ও দুদুকের মত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একদম অকার্যকর করে দিয়েছিল। এমন বাস্তবতায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন, দুদক ও সংবিধান সংস্কারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি ও অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে দুয়েকটি মৌলিক বিষয় ছাড়া তেমন কোনো ভিন্নমত বা বিরোধ নেই। বিএনপির সংস্কার ও নির্বাচন দুটোরই পক্ষে। দুটোই অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার নাকি নির্বাচন— কেউ কেউ এমন কথা বলে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বিতর্কের চেষ্টা করেছে। আমাদের দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি যদি দেখি, তাহলে কিন্তু সেটা ভিন্ন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন ও সংস্কারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার পরিচালনা করা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ভ্যাটের বোঝা। ফলে দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কাছেও সংসার টেকানোই অনেক ক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।’

তারেক রহমান বলেন, ‘কীভাবে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ দুর্দশা লাঘব করা যায়, কীভাবে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের হাতের নাগালের মধ্যে রাখা যায়, কীভাবে জনগণকে ফ্যাসিস্টদের আমলের নিত্যপণ্যের ঊর্ধগতি থেকে রেহায় দেওয়া যায়, কীভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়— অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অগ্রাধিকারের তালিকায় এই বিষয়গুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মনে করি এই সরকারকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কারণ, এই সরকার হাজারও শহিদের রক্ত মারিয়ে একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের ছাত্র তরুণরা রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। এইসব তরুণ গত দেড় দশকে একটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি। গণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বঞ্চিত এইসব তরুণদের কেউ যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে অবশ্যই বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে। তবে, রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেন, সেটি জনগণকে হতাশ করবে।’

বিজ্ঞাপন

‘আজকের তরুণইরা আগামীর বাংলাদেশ। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে তরুণরা নতুন পথ রচনা করবে। তবে সেটা কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথে নয়। পথটি অবশ্যই হওয়া উচিত স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক’— বলেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি বা অযথা কুতর্ক আমি সময়ের অপচয় বলেই মনে করি। তবে, একইসঙ্গে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, জনগণ যদি বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য ধরে মেনে নিতে পারে, তাহলে যারা সরকারে রয়েছেন তাদের ধৈর্য এবং সহনশীলতা আরও অনেক বেশি থাকা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি মনে করে জনগণকে নিয়ে রাজনীতি নয়, বরং জনগণের জন্যই রাজনীতি। এ জন্য যে কোনো মূল্যে বিএনপি জনগণের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চায়। নির্বাচন হচ্ছে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার অন্যতম কার্যকরী হাতিয়ার। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার অর্থ নিজেদের অজান্তে পরাজিত, পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মাফিয়া প্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর গণতান্ত্রিক, বৈষম্যমুক্ত, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার এক অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পলাতক স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র বা গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে যেন সেই সুযোগ ও সম্ভাবনা হুমকির সম্মুখীন না হয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

সারাবাংলা/এজেড/এমপি

তারেক রহমান নির্বাচন বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর