বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই বাস্তবায়ন, ড্রইং ও ডিজাইনে ত্রুটি
২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৫১ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৪
ঢাকা: রংপুরে বাস্তবায়নাধীন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রইং ও ডিজাইনে ত্রুটি ধরা পড়েছে। কোন প্রকার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাশাপাশি বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে গত ১০ বছরে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৭ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রকল্পের ১ম সংশোধনীতে ৮০ কোটি ৫৭ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২ বছর বাড়ানোর (২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত) প্রস্তাব করা হয়েছে। এবারসহ পাঁচ দফা সময় বাড়িয়ে সাড়ে ৩ বছরের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট সময় লাগছে ১২ বছর ৬ মাস।
প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে ড্রইং ও ডিজাইন পরিবর্তন, কিছু অঙ্গের ব্যয় ও পরিমাণ বৃদ্ধি এবং কিছু অঙ্গে গণপূর্ত বিভাগের রেট শিডিউল পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন পদ্ধতি অনুযায়ী, ২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে প্রাক্কলিত ব্যয় সম্পন্ন বিনিয়োগ প্রকল্প নেওয়ার আগে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার কথা রয়েছে। কিন্তু এ প্রকল্পে সেটি করা হয়নি। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই নেওয়া হয়েছে ১৭৮ কোটি টাকার প্রকল্প।
সূত্র জানায়, সংশোধিত প্রস্তাবের বিষয়ে রোববার (২৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকল্পটির নানা অনিয়ম ও ও ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়ে বৈঠকে প্রশ্ন তোলা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় নি। এ কারণে প্রকল্পের ১ম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করে নি কমিটি। সভায় চলমান প্রকল্পটির বিস্তারিত কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। সেগুলো পেলে নতুন করে আবারও পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে প্রধান প্রধান তিনটি অঙ্গের যে ড্রইং বা ডিজাইন ছিল, সেই অনুমোদিত ড্রইং, ডিজাইন পরিবর্তন করে পরিবর্তিত ড্রইং ও ডিজাইন অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। পরিবর্তিত ডিজাইনে অনুমোদিত ডিপিপিতে উল্লিখিত ড্রইং ও ডিজাইনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। যা প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) কোন সভায় উত্থাপন করা হয়নি বা এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এটি নিয়মের ব্যত্যয়।
জানা যায়, এছাড়া বিগত সরকারের আমলে ব্যয় বাড়ানো ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ চতুর্থবার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলে সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী বরাবর একটি ডিও পত্র পাঠিয়েছিলেন। ওই পত্রে সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখে প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করা এবং প্রকল্পের অসমাপ্ত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে শেষ করার জন্য নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি। একইসঙ্গে ইউজিসি এবং আইএমইডির সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে এ প্রকল্পের টেন্ডারসহ বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা ধরণের অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দেন সাবেক মন্ত্রী। কিন্ত এগুলো মানা হয়নি।
সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৭৫ একর জমির উপর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ভবন গড়ে উঠেছে। এখানে প্রতিবছর ১ হাজার ২৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদ রয়েছে। অনুষদগুলো হলো- (১) কলা অনুষদ, (২) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, (৩) বিজ্ঞান অনুষদ, (৪) প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ, (৫) জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদ, (৬) বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ।
এছাড়া নির্মাণাধীন রয়েছে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবাসিক, একাডেমিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল। গবেষণাগারের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং যথাযথ বিনোদনমূলক ব্যবস্থা করা, খেলাধুলার মাধ্যমে মানসিক বিকাশ সাধন করার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ খোলা হয়েছে। এক কথায় মানসিক বিকাশে, শৃঙ্খলাবোধ তৈরিতে, চরিত্র গঠনে, সম্প্রীতির বন্ধন তৈরিতে, জাতীয়ভাবোধ এবং বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস