Monday 27 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নদী বাঁচাতে ভূমি কেন্দ্রিক কূটনীতি থেকে বের হওয়ার আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:৩১

‘১০ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নদীগুলো বাঁচিয়ে রাখতে এবং প্রবাহ ঠিক রাখতে ‘ভূমি কেন্দ্রিক কূটনীতি’ থেকে বের হয়ে ন্যায্য পানি বণ্টন কূটনীতিতে জোর দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে বাংলাদেশের চিন্তা ও অবস্থান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় হওয়া উচিত। এখানে বহুমাত্রিক সুযোগ রয়েছে। সেজন্য দেশের নীতি, গবেষণা এবং বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং উদ্ভাবনী চিন্তা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৬ জানুয়ারি) পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটায় শুরু হওয়া ‘১০ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। অ্যাকশন এইডের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এবার ‘পানির ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্রের ভবিষ্যৎ’-প্রতিপাদ্যে সম্মেলনের আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশসহ আন্তঃসীমানায় পানি ও নদী নিয়ে চলমান ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্রের বিদ্যমান সংকট, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত হয় এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা এতে বক্তব্য দেন। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।

সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন ফারাহ্ কবির। আগতদের স্বাগত জানিয়ে তিনি সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন এবং সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘নদী হচ্ছে একটি সত্ত্বা। তা এখন কঠিন সংকটে রয়েছে। সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে নদী অব্যবস্থাপনার বিরূপ প্রভাব আরও ভয়ংকর হতে পারে। নদী কারও একার অধিকার নয়। পানি আর নদীর অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে আন্তঃসীমান্ত দেশগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে। পানি ও নদী বিনিময়ে ন্যায্যতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই নদী বাঁচবে। জীবন-জীবিকায় ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা পাবে।’

আয়োজনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “বিশ্বায়নের ফলে সবকিছু পরিবর্তন হলেও এখানে চিন্তার পরিবর্তন হয়নি। আমাদের চিন্তা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় হওয়া উচিত। এখানে বহুমাত্রিক সুযোগ রয়েছে। বহুমাত্রিক পৃথিবীতে আমাদের আবারও ‘ঔপনিবেশিক’ অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই, সেজন্য আমাদের নতুন করে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে, কাজ করতে হবে।”

বিজ্ঞাপন

পানি সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত, মিয়ানমার এবং চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত বিষয়ক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সংকট কাটিয়ে উঠতে এখানে নতুন সুযোগ এবং আশা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন বিষয়ে দ্বি-পাক্ষিক রাষ্ট্র আলোচনার বাইরে যেতে হবে। এ আলোচনায় চীন এবং অন্যদের যুক্ত করতে হবে। আমরা যখন তাদের তিস্তা নদী বিষয়ে বললাম, তারা সহায়তা করেনি। এখন চীন যখন বাঁধ নির্মাণ করছে, তখন তারা আমাদের আলোচনায় ডাকছে।’

অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের পানি, জ্বালানি এবং জলবায়ু বিষয়ক লিড স্পেশালিষ্ট ড. জন ডোর বলেন, ‘এক্ষেত্রে ন্যায্যতার নীতিতে যাওয়া উচিত।’ বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর অভিন্ন পানিপ্রবাহ নিশ্চিতে ম্যাকং নদী কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আমলে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে গবেষণা এবং যোগাযোগ বাড়াতে কাজ করা যেতে পারে।’

সম্মেলনের প্রথম দিনে ‘তিস্তা ও সীমান্তবর্তী নদীসমূহের ভবিষ্যৎ’, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় উদ্ভাবন’, ‘জলবায়ু ভবিষ্যৎ, পানি অর্থায়ন এবং পানি কূটনীতির ভূমিকা’ নিয়ে আলোচনা হয়। পানির নায্য বণ্টন নিশ্চিত করে এর সাথে সম্পর্কিত নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে। একইসঙ্গে পানিবিষয়ক শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ; এবং সহযোগিতার ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্র ও পানিসম্পদ রক্ষা নিয়ে আলোচনা হবে। সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ এবং প্রস্তাবগুলো পরবর্তীতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নীতি-নির্ধারণী ফোরামে তুলে ধরা হবে।

উল্লেখ্য, পানি সম্পদের গুরুত্ব, পানির ন্যায্যতা এবং নদীর অধিকার নিশ্চিত করবার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। একইসঙ্গে পানিসম্পদ ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের চিন্তার প্রসার, পানি নিয়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটানো, বিভিন্ন ধরনের সংলাপকে উৎসাহিত করা, পানি নিয়ে একত্রে কাজ করতে জোট গঠন, আন্তঃসীমান্ত কার্যক্রমের উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখেই ২০১৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন আয়োজন করে আসছে দেশের অন্যতম শীর্ষ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাটি। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর পানির ভূ-রাজনীতি ও মহাসাগরীয় ভবিষ্যৎ নিয়ে সম্মেলনটির আয়োজন করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

নদী বাঁচাতে বের হওয়ার আহ্বান ভূমি কেন্দ্রিক কূটনীতি

বিজ্ঞাপন

খুলনায় ২ দিনব্যাপী পিঠা উৎসব
২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৩

আরো

সম্পর্কিত খবর