পাঠ্যবইয়ে লিঙ্গবৈষম্য, উদ্বেগ সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের
২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৩ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৮
ঢাকা: সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের নেতারা পাঠ্যবইয়ে লিঙ্গ বৈষম্যমূলক পরিবর্তনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের দাবি ছিল, বৈষম্য দূর করা। অথচ নতুন পাঠ্যবইয়ে শিশুদের লিঙ্গবৈষম্য শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ফেরামের সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এক যৌথ বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ‘নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিঙ্গ সমতা তৈরির লক্ষ্যে ২০২৪ সালের দ্বিতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’ এর ‘আমার বাড়ির কাজ’ শিরোনামে কথোপকথনের মাধ্যমে একটি গল্প সংযোজন করা হয়েছিল। সেই বই পরিমার্জন করা হয় ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য। আগের পাঠ্যবইয়ে ‘তুলি বাজারে যেতে চেয়েছিল’ সংশোধন করা পাঠ্যবইয়ে এবার ‘তুলি ঘরে কাজ করতে চেয়েছে’। এই পরিবর্তনকে লিঙ্গসমতা নষ্ট করে শিশুদের লিঙ্গবৈষম্য শেখানোর উদ্যোগ ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘২০২৪ সালের গল্পে তুলি অর্থাৎ মেয়েটি বাবার সঙ্গে বাজারে যায়। তপু অর্থাৎ ছেলেটি মায়ের সঙ্গে ঘর গোছানোর কাজ করে। ২০২৫ সালে পরিবর্তন করে দেখানো হয়েছে ছেলে বাবার সঙ্গে বাজারে যায়। অন্যদিকে মেয়ে মায়ের সঙ্গে ঘর গোছায়। এটাই সমাজে হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। অথচ ২০২৪ সালে এই গল্প যুক্ত করা হয়েছিল নারী পুরুষ নির্বিশেষে লিঙ্গ সমতার মানসিকতা তৈরির জায়গা থেকে। তাই সমাজে যা সচরাচর হয় না তাই তুলে নিয়ে আসা হয়েছিল এটা বোঝাতে যে ঘর এবং বাহিরের সব কাজই সবাই করতে পারে। বিষয়টা এমন না যে শুধু নারী বলেই তাকে গৃহস্থালি কাজ করতে হবে। এ বছর এই পরিবর্তন চিন্তা জগতে ফের সেই লিঙ্গ বৈষম্যমূলক সমাজেরই চিত্র দেখানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কি প্রমাণ হয়? আমরা লিঙ্গসমতাভিত্তিক সমাজ চাই না? নারীদের ঘরে গৃহস্থালি কাজের মাঝেই আটকে রাখতে চাই? না কি বলতে চাই গৃহস্থালি কাজ শুধু নারীদের?’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরূপণ করা এবং স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি বহুদিনের। সেখানে গৃহস্থালি কাজ সম্পর্কে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই পাঠ্যপুস্তকে কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এখন আবার যদি পূর্বের অবস্থায় ফেরত যায়, সেটা আসলে পিছিয়ে যাওয়া হলো। কেবল এই একটি জায়গায় নয়, পাঠ্যবইয়ে নারী-পুরুষের সমতা, নারীর কাজকে মূল্যায়ন করতে শেখানো দরকার। আর নারীর প্রতি মানুষ হিসেবে মর্যাদার দৃষ্টিভঙ্গি ছোট থেকেই গড়ে তুলতে হবে।’
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের দাবি ছিল, বৈষম্য দূর করতে হবে। এই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষ্যণীয়। যেখানে নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করে একটি সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠা কাম্য, সেখানে পাঠ্যবইয়ে এ রকম পরিবর্তন গণঅভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থি। অবিলম্বে পাঠ্যবইয়ের এই পরিবর্তন রোধ করতে হবে। আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাম্যের সমাজ নির্মাণ করতে চাই। সেখানে ছোট থেকেই লিঙ্গসমতার মানসিকতা গড়ে ওঠা খুব জরুরি।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এইচআই
অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী প্রকৌশলী শম্পা বসু সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম