শুল্কমুক্ত কোটা
আওয়ামী লীগের সাবেক ২৪ এমপির গাড়ি নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু
২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:১৩ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শুল্কমুক্ত কোটায় আমদানি করে খালাসের আগেই ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের ২৪ জন সাবেক সংসদ সদস্যের গাড়ি নিলামে তুলেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। আমদানিকারক সাবেক সংসদ সদস্যদের কেউ আত্মগোপনে, কেউ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। কয়েকদফা তাগাদার পরও খালাস না নেওয়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেগুলো নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইনে গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে নিলামের প্রস্তাবিত দর গ্রহণ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে নিলামের প্রস্তাবিত দর গ্রহণ করা হয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে অথবা সরাসরি বাক্সে দর প্রস্তাব নেওয়া হবে। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গাড়িগুলো নিলামে অংশগ্রহণকারীরা সরেজমিনে দেখতে পারবেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি নিলামে অংশগ্রহণকারীদের দরপ্রস্তাব পর্যালোচনা করে বিক্রির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
নিলাম তত্ত্বাবধানকারী চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা বিজন কুমার তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকায়ও নিলামে অংশ নিতে আগ্রহীদের জন্য বাক্স রাখা হয়েছে। অনলাইনে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ নিলামে অংশ নিতে পারবেন। নিলাম পণ্যও অনলাইনে প্রদর্শন করা হবে। ১৬ ফেব্রুয়ারি সময়সীমা শেষ হচ্ছে। ঢাকা থেকে বাক্স আনার জন্য একদিন সময় নেওয়া হচ্ছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টায় বাক্স ওপেন করা হবে। এরপর বিক্রির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।’
রোববার মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে। এরমধ্যে ২৪টি গাড়ি সাবেক সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত কোটায় এনেছেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর জুলাই পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আনা এসব গাড়ির সবগুলোই টয়োটা ব্র্যান্ডের ল্যান্ড ক্রুজার।
যেসব সাবেক সংসদ সদস্যের গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সানজিদা খানম, মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, অনুপম শাহজাহান জয়, সাজ্জাদুল হাসান, মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তারানা হালিম, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, মো. আবুল কালাম আজাদ, আবদুল মোতালেব, শাম্মী আহমেদ, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ, রুনু রেজা, মো. তৌহিদুজ্জামান, শাহ সারোয়ার কবীর, একরামুজ্জামান, এস এম আল মামুন, এস এম কামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান, মো. আসাদুজ্জামান, নাদিয়া বিনতে আমিন ও আখতারউজ্জামান।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাস্টমস শুল্ক-করসহ গাড়িগুলোর সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করেছে ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রথম নিলামে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি সর্বোচ্চ দরদাতা এ গাড়ি কিনতে পারবেন। এ হিসেবে প্রতিটি গাড়ি কিনতে ন্যূনতম পাঁচ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দিতে হবে। ২৫ শতাংশ করসহ এই গাড়ির সর্বনিম্ন দাম পড়বে সাত কোটি ২৫ লাখ টাকা।
গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির মাধ্যমে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করছে।
এর আগে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের আরও দুই জন সংসদ সদস্যের আনা দুটি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে তুলেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস।
উল্লেখ্য, এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৮ সালের ২৪ মে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। এরশাদের পতনের পরও এ সুযোগ বহাল থাকে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সংসদ সদস্য তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদে একটি করে গাড়ি আমদানি করতে পারেন।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৫৭৬টি গাড়ি আমদানি করেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ৫১ জন সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগপর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে আসা এসব গাড়ির মধ্যে মধ্যে ছয় জন খালাস নিয়েছেন।
সাধারণত, আমদানি করা গাড়ি ৩০ দিনের মধ্যে বন্দর থেকে খালাস না নিলে সেগুলো নিলামযোগ্য হয়ে যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা যে কোনো পণ্য চার দিন পর্যন্ত বন্দরের শেডে বিনা শুল্কে রাখার সুযোগ পায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে প্রতি চার দিন পরপর ২০ ফুট সাইজের কনটেইনারের জন্য ৬ মার্কিন ডলার এবং ৪০ ফুটের জন্য ১২ মার্কিন ডলার মাশুল আদায় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ