Tuesday 28 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলজাজিরার প্রতিবেদন
আ.লীগে বিভাজন, নেতাদের থেকে বিচ্ছিন্ন কর্মীরা

সারাবাংলা ডেস্ক
২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৩১ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৫৭

ছাত্র-জনতার আন্দোলন

৫ আগস্ট— বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। সেদিন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তৎকালীন সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এর পরে অনেক নেতাকর্মী একে একে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন অনেকেই। নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তাদের ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্রলীগ’কে। এমন পরিস্থিতিতে দলটি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? আলজাজিরার প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরা বিশ্লেষণধর্মী এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিকেলে রংপুরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা ছাত্রনেতা আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। কিন্তু সেদিন ঢাকায় দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্যপট।

সেদিন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুর রহমান তার অফিসে অনায়াসে বসে স্থানীয় এক কবির কবিতা পাঠ উপভোগ করছিলেন। সেদিনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আবদুর রহমান তার চেয়ারে হেলান দিয়ে, গালে হাত রেখে বসে একমনে কবিতা শুনছেন। পাঠ শেষে তিনি মন্তব্য করেন, ‘দারুণ’।

কিছুক্ষণ পরে যখন একজন সহযোগী সাঈদের হত্যার পর ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার কথা তাকে জানালে, তিনি উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘ওহ, কিছুই হবে না। নেত্রী সবকিছু সামলাবেন।’

এই ঘটনার পর সহিংসতা যখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন একজন জ্যেষ্ঠ নেতার এমন স্বাভাবিক আচরণ অনেকের কাছে আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে কর্তৃত্ববাদ ও বর্বরতার অভিযোগে হাসিনা সরকারে পতন ঘটায় ছাত্র-জনতা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সেই আন্দোলনে অন্তত ৮৩৪ জন নিহত হন। আহত হন আরও ২০ হাজার। এর মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারে ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরইমধ্যে পাঁচ মাস অতিবাহিত হয়েছে। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় দলটি সরূপে ফিরতে লড়াই করছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র বিভাজন দেখা দিচ্ছে। একদিকে ক্ষমাশীল না হওয়া প্রবীণ নেতারা, আর অন্যদিকে মধ্যম স্তরের নেতাকর্মীরা যারা মনে করেন দলকে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এই বিভাজন কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা-ই দলটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

বিজ্ঞাপন

বিভাজন

দলটির অনেক নেতা এখনো দায়িত্ব এড়িয়ে চলছেন। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাসিম ১৬ জানুয়ারি একটি অজানা স্থান থেকে আল জাজিরাকে ফোনে বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। এটা শিগগিরই প্রমাণিত হবে।’ তবে কাকে অভিযুক্ত করছেন তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের দাবি নেতৃত্বের ব্যর্থতা এবং জনসাধারণের অভিযোগ মোকাবিলায় অক্ষমতাকে তুলে ধরে।

এমন পরিস্থিতিতে দলের তৃণমূল স্তরের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। এদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে আছেন অথবা হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে নিজেকে আত্মগোপন করেছেন। তারা আক্ষেপ করেন, দলটি জনগণের সঙ্গে সংযুক্ত একটি সংগঠন থেকে একতরফাভাবে শীর্ষ নেতৃত্বাধীন কাঠামোতে রূপান্তরিত হয়েছে।

খুলনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নাম প্রকাশে একজন স্থানীয় নেতা আল জাজিরাকে বলেন, ‘ ৫ আগস্ট যখন নাটকীয়ভাবে পালানোর ঘটনাটি টিভিতে সম্প্রচারিত হচ্ছিল, তখনও আমি কিছু কর্মীর সঙ্গে খুলনার রাস্তায় ছিলাম। আমি আমাদের একজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে ফোন করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিল। তখনই আমি নিজেকে প্রতারিত মনে করেছি।’

এর পর, ২৩ অক্টোবর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। খুলনার একসময়ের প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতা তার নিরাপদে যাওয়ার বেদনাদায়ক যাত্রার কথা বর্ণনা করেন। তিনি গোপালগঞ্জে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে ভুয়া পরিচয়ে ঢাকায় চলে আসেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ফোন নম্বর এবং সবকিছুই পরিবর্তন করেছি। এখন জীবিকার জন্য একটি ছোট ব্যবসা শুরু করেছি। দল আমাদের ত্যাগ করেছে। আমি আর কখনো রাজনীতিতে ফিরে যাব না।’

দেশজুড়ে তৃণমূল কর্মীরা একই ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।

অনেক সদস্য নীরব থাকলেও আওয়ামী লীগপন্থি সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহকারী সম্পাদক সামিউল বশির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় আছেন। তিনি আলজাজিরাকে বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কর্মীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে সুবিধাবাদী এবং স্থানীয় আইন প্রণেতাদের পরিবারের সদস্যরা তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কাঠামোর ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। ফলে এই বিপর্যয় ঘটেছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসক সমিতির একজন নেতা একই রকম হতাশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দলের যারা মুখপাত্র হিসেবে উঠেছে, তাদের কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য বিশেষ করে গত কয়েক বছরে বিপর্যয়কর ছিল। এটা একটা কঠোর বাস্তবতা ছিল যে আমাদের দল সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। আমি অনেক শীর্ষ নেতাকে দেখেছি, সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয় বা কারা নিচ্ছে তা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতান্ত্রিক অনুশীলনের অভাব দলটিকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গত দশক ধরে ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সমস্ত তৃণমূল ইউনিটগুলো পুরোনো কমিটিগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। কোনো পরিবর্তন ছাড়াই একই পুরানো সদস্যদের ওপর নির্ভর করছে।

কোনো অনুশোচনা নেই

‘জুলাই আন্দোলন’ নামে পরিচিত ছাত্র-নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর কর্মকাণ্ডের জন্য এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ক্ষমা বা বিবৃতি দেননি। তা না করে দলটি বারবার আন্দোলনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। উদাহরণস্বরূপ, দলের যুব সংগঠন যুবলীগের ১০ জানুয়ারির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাদের দাবি, এটি একটি ‘পাকিস্তানি মতাদর্শে’ দেশকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ।

আলজাজিরার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার কথোপকথনের সময় নাসিম বারবার অভিযোগ করে বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে শিক্ষার্থীদের ‘বিভ্রান্ত’ করেছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনে সরকারি দমন-পীড়ন এবং ব্যাপক রক্তপাতের কারণে এটি ক্রমবর্ধমানভাবে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন শিবিরের প্রতি নাসিমের অভিযোগ এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতার কারণে জামায়াতের বিতর্কিত অবস্থান রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত। আওয়ামী লীগের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধের জন্য পাঁচজন শীর্ষ জামায়াত নেতা এবং প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর একজন জ্যেষ্ঠ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। হাসিনা সরকারের অধীনে বিএনপি এবং জামায়াত উভয়ই কঠোর দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছিল। এরমধ্যে ব্যাপকভাবে জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত ছিল। নাসিম স্বীকার করেছেন, তাদের দল ‘কৌশলগত ভুল’ করেছে। তবে এর ব্যর্থতার জন্য তিনি মূলত ‘গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতাকে’ দায়ী করেছেন।

১১ বছর ধরে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একটি প্রধান ভারতীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ ‘ইসলামি সন্ত্রাসী ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভ্যুত্থানের’ শিকার হয়েছে।

তবে দলের ঘনিষ্ঠ অন্যরা দ্বিমত পোষণ করেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের পুত্র এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ দলের ভেতরে জবাবদিহিতার অভাবের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে অন্যায়, নিপীড়ন, দুর্নীতি, লুণ্ঠন এবং কোটি কোটি টাকা পাচারের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। আমি এখনো কাউকে আত্ম-উপলব্ধি, আত্মসমালোচনা বা অপরাধ স্বীকার করতে দেখিনি।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং বিশ্লেষক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান মনে করেন, দলের কঠোর অবস্থান এবং সিদ্ধান্ত জনসাধারণের ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে। এতে অভ্যত্থানের সাফল্যের পথ প্রশস্ত হয়েছিল।

ফিরে আসা সহজ হবে না

প্রবাস জীবন শেখ হাসিনার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। সেসময় হাসিনা দীর্ঘ সময় ভারতে ছিলেন। পরে ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেন। দলের পুনর্গঠনে ও ক্ষমতায় ফিরে আসতে তাকে ২১ বছর লড়াই করতে হয়েছিল।

তবে হাসানুজ্জামান বলেছেন, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ এখন নেতৃত্ব ও ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে। ‘ছাত্র-নেতৃত্বাধীন এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলন এবং সামরিক বাহিনীর সমর্থনে দল ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভাবমূর্তি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া দলের পুনর্গঠন কঠিন হবে এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজনও বাড়বে।’

অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াত উভয়ই বলেছে, গত জুলাই ও আগস্টে গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিচার হতে হবে। তবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ দেশের জনগণেরে ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে ছাত্র নেতারা। অন্তর্বর্তী ইউনুস সরকারের উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাহফুজ আলম বলেন, আওয়ামী লীগকে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। ড. ইউনূস এরইমধ্যে জানিয়েছেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের শুরুর মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হল খুন, গুম ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা, সংস্কার বাস্তবায়ন ও সকল প্রো-বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচন করা।’

হাসানুজ্জামান বলেন,‘যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, তাহলে এটি দলের জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করবে। তবে নেতৃত্ব, সংগঠন ও তৃণমূলের সঙ্গে সংযোগ পুনরুদ্ধার ছাড়া আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক পুনরুত্থান অত্যন্ত কঠিন হবে।’

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলী রিয়াজ আওয়ামী লীগের পুনরুত্থানের জন্য চারটি শর্ত উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো- ১৬ বছরের শাসনামলে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া; দলের বর্তমান মতাদর্শ পরিত্যাগ করা; শেখ হাসিনার পরিবারের কোনো সদস্যকে আর নেতৃত্বে না রাখা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সকল নৃশংস অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় যেসব ব্যক্তি গণহত্যার জন্য সরাসরি দায়ী, তাদের বিচার হতে হবে, যার মধ্যে শেখ হাসিনাও অন্তর্ভুক্ত। এই শর্তগুলো পূরণ হলে তাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।’

তবুও অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী এখনো শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখেন। যদিও তারা মাঝে মাঝে তার পরিবারের ক্ষমতার অপব্যবহারের সমালোচনা করেন। বিদেশে থাকা জ্যেষ্ঠ নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টকশোতে কর্মীদের পুনর্গঠনের আহ্বান জানাচ্ছেন। একইসঙ্গে দাবি করছেন ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার “ব্যর্থ হতে চলেছে।’ কিন্তু এই বক্তব্য দলীয় কর্মীদের কাছে সেভাবে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। এসব বক্তব্যের নিচে মন্তব্যের ঘরে, আওয়ামী লীগের জুনিয়র কর্মীরা পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন। তারা বলছেন, ‘বিদেশের নিরাপদ আশ্রয় থেকে বক্তব্য দেওয়া সহজ। কিন্তু দেশে কর্মীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।’

খুলনার সাবেক এক ছাত্রনেতার মতো অনেকেই তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন। রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন এখন অনেক দূরের বিষয় মনে হচ্ছে।

সারাবাংলা/এইচআই

অন্তর্বর্তী বাজেট আওয়ামী লীগ আলজাজিরা গণঅভ্যুত্থান ছাত্রলীগ জুলাই আন্দোলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর