Thursday 30 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ট্রেনের টিকিট কেটে এখন কষ্ট করে যেতে হচ্ছে বাসে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৯ | আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:০৭

পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই বসে আছেন স্টেশনে। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে বন্ধ থাকা ট্রেনের যাত্রীদের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসের ব্যবস্থা করেছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে কষ্ট কিছুটা লাঘব হলেও দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

যাত্রীরা বলছেন, ট্রেনের টিকিট কেটে বাসে করে যাওয়া অনেক কষ্টের। ট্রেন বন্ধের খবর জানলে তারা টিকেটই কাটতেন না।

বিআরটিসির কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা পর্যন্ত সাতটি বিআরটিসির বাস ট্রেনের যাত্রীদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এরমধ্যে ছয়টি দ্বিতলবিশিষ্ট ও একটি এসি বাস রয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই বসে আছেন স্টেশনে। তারা অনেকেই ট্রেন চলাচল বন্ধের খবর জানতেন না। রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে দাঁড়িয়ে আছে বিআরটিসির চারটি বাস। ট্রেনের টিকিট দেখিয়ে অনেক যাত্রীই বাধ্য হয়ে বাসে চড়েছেন। আবার যারা বিআরটিসির বাসে যেতে অপারগতা জানাচ্ছন তাদের ট্রেনের টিকিটের টাকা ফেরত নিতেও বসে থাকতে দেখা গেছে।

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাধ্য হয়েই চড়েন বিআরটিসির বাসে। ছবি: সারাবাংলা

রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী শাহীন মিয়াসহ তিনবন্ধু ব্যবসায়িক কাজে যাবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ট্রেনের শিডিউল অনুযায়ী রেল স্টেশনে এসে জানতে পারেন রানিং স্টাফদের ধর্মঘটের বিষয়। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাধ্য হয়েই চড়েন বিআরটিসির বাসে।

শাহীন মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কেটেছি ট্রেনের টিকিট। যেতে হচ্ছে বাসে। এটা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে গেল। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ৩০ জানুয়ারি ট্রেনের টিকিটের টাকা ফেরত পাব। জরুরি কাজ হলে বাসে যেতে। তাই বাধ্য হয়েই এখানে উঠেছি। আমরা ১০ দিন আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলাম।’

বিজ্ঞাপন

পরিবার নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলেন ইমা আহমেদ নামে তরুণী। মঙ্গলবার দুপুরে রেলের শিডিউল অনুযায়ী স্টেশনে এসে শুনতে পান তারা ট্রেন করে তাদের গন্তব্যে যেতে পারবেন না। এরপর বিআরটিসির বাসে করে সড়কপথে গন্তব্যে রওনা দেন।

স্টেশনে এসে তারা জানতে পারেন ট্রেন করে তাদের গন্তব্যে যেতে পারবেন না। ছবি: সারাবাংলা

ইমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে ভাই-ভাবী আছেন। আমরা কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়েছিলাম। চার দিন আগে ফিরতি ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু এসে শুনি ট্রেন চলবে না। ট্রেন যদি না চলে তাহলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ টিকিট বিক্রি করলো কেন? এখন বাসে করে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেতে হবে। আবার সেখান থেকে অন্য গাড়িতে কিশোরগঞ্জ। এটা আমাদের জন্য কষ্ট হয়ে গেছে।’

রাহিম নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘আমি যাব ফেনীতে। সঙ্গে স্ত্রী আছে। ধর্মঘটের বিষয়ে জানতাম না। জানলে এখানেই আসতাম না। এসে গেছি যেহেতু তাই বাসে যেতে হচ্ছে। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। চারদিন আগে টিকিট কেটে রেখেছিলাম। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অনেকবার কল দিয়েছি। তারা কল ধরেননি।’

বিআরটিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেলের বিকল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ রেল রুটগুলোতে যাত্রী পরিবহণের জন্য বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। চট্টগ্রামে বিআরটিসির মালিকানায় থাকা ৪২টির মধ্যে ২০টি বাস ট্রেনের যাত্রীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ট্রেনের শিডিউল অনুযায়ী বাসগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে ছেড়ে যাবে।

বিআরটিসির চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক জুলফিকার আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ট্রেনের শিডিউল অনুযায়ী গাড়িগুলো দিয়ে যাচ্ছি। সকালে সিলেটের উদ্দেশ্যে তিনটি গাড়ি ছেড়ে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনটি বাস গেছে। আরেকটি এখন ছাড়বে। ঢাকার উদ্দেশ্যে একটি এসি গাড়ি গেছে। এ নিয়ে মোট সাতটি বাস ট্রেনের যাত্রীদের নিয়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে। শিডিউল অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিআরটিসির আরেকটি বাস চাঁদপুরে যাবে। ট্রেনের টিকিট দিয়েই যাত্রীরা বাসে তাদের গন্তব্যে যেতে পারছে। বাড়তি কোনো ভাড়া নিচ্ছি না। যাত্রীরাও খুশি হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ৩৫টি জেলায় বাস সার্ভিস আছে। যেহেতু একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে তাই যাত্রীরা যাতে কষ্ট না পাই সেজন্য ট্রেন যতক্ষণ না চলে আমরা এ সেবা দিয়ে যাব। ট্রেনের শিডিউল অনুযায়ী আমাদের বাসগুলো ছেড়ে যাবে। যাত্রীদের জন্য আমরা ২০টি গাড়ি রেখেছি। সাতটি বাস চলে গেছে। সন্ধ্যার পর আরও চাপ থাকলে স্মার্ট স্কুল বাসগুলোও আমরা যুক্ত করব।’

মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়াসহ কয়েকটি দাবি মানতে সরকারকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। দাবি মানা না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির মাধ্যমে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) নগরীর পুরাতন রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’র নেতারা।

রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। ১৬০ বছর ধরে মাইলেজ অর্থাৎ এক লিটার জ্বালানি তেলে ট্রেন যতদূর যায়, এর ভিত্তিতে বেতনের সঙ্গে ভাতা পেয়ে আসছিলেন তারা। দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন। এছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এই সুবিধা সীমিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সারাবাংলা/আইসি/ইআ

চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর