৩৩ ঘণ্টা পর কমলাপুর থেকে ছাড়ল ট্রেন, স্বস্তিতে যাত্রীরা
২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:১৪ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:১৮
ঢাকা: দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। শেষ রাতে ঘোষণা আসার পর থেকেই ট্রেনে বসেছেন স্টাফরা। যে কারণে সকাল থেকে চলছে ট্রেন। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় যাত্রীরাও স্বস্তিতে ভ্রমণ করতে পারছেন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে কমলাপুর স্টেশন থেকে যথা নিয়মে ট্রেন ছেড়ে গেছে। দেশের অন্যান্য স্টেশনগুলো থেকেও ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করে রেলের রানিং স্টাফরা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। সেখানে তিনি স্টাফদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলেন। তারপর দুপুরে রেলপথ সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে বৈঠকে সমঝোতা না হওয়া বিকালে রেল ভবনে আবারও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রেলপথ উপদেষ্টাসহ রেলের উর্দ্ধতন কর্মর্কতাদের সঙ্গে স্টাফদের চার ঘন্টার বৈঠকেও কোনো সমাধান হয়নি।
পরে মধ্যরাতে রেলপথ উপদেষ্টার বাসভবনে ফের বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে রেলের উদ্ধর্তন কর্মকর্তা, রানিং স্টাফ প্রতিনিধি ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে রানিং স্টাফদের মাইলেজ সমস্যা বুধবারের (২৯ জানুয়ারি) মধ্যে সমাধান করা হবে- রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের এমন আশ্বাসে মধ্যরাতে কর্মবিরতি থেকে সরে আসে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়ন। রাত আড়াইটার সময় সংবাদ মাধ্যমের সামনে রেলওয়ের যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান। একই সঙ্গে সব রানিং স্টাফদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান। তখনি ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়।
রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এখন রাত আড়াইটা। আমাদের সঙ্গে শ্রমিক নেতা, ছাত্র নেতারা আছেন। রেলের একটা কর্মবিরতি চলছিল। শ্রমিক নেতারা মনে করেন, এটা চললে মানুষের অসুবিধা হয়। আমরাও মনে করি অসুবিধা হয়। রেলের শ্রমিক নেতারা আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময় দেখা করেছেন কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে। এরমধ্যে একটা দাবি ছিল রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধার বিষয়ে। এটি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে টেকআপ করি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু সুবিধা দিয়েছে। এরপরেও উনাদের আরও কিছু দাবি আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটা বিষয় বলেছে তাদের মাইলেজ এক মাসের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু শ্রমিক নেতারা বলেছেন, এটি তুলে দেওয়ার জন্য। আমি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলব। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমি এটা করতে সক্ষম হব।’
সোমবার দিবাগত রাত ১২ টা থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ৩৩ ঘণ্টা সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। কর্মসূচি প্রত্যাহারের ফলে সকাল ৯ টা থেকে সিডিউল ট্রেনগুলো প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে। কারণ, বাংলাদেশ রেলওয়ে মধ্যরাতে জানিয়েছে আন্দোলনের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টা পর্যন্ত সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এসব ট্রেনের টিকিট রিফান্ড নিয়ে শতভাগ টাকা যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হবে। এর আগে ২৮ জানুয়ারির সব ট্রেনের যাত্রাও বাতিল করে রেলওয়ে।
উল্লেখ্য, কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬২ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল। সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়। এরপর থেকে শুরু হয় রানিং স্টাফদের আন্দোলন কর্মসূচি। রেলওয়ে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেয় আর রানিং স্টাফরা আন্দোলন স্থগিত করে। এভাবে তিন বছরের বেশি সময় কেটে গেছে। শ্রমিক নেতারা বলছেন, এবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাই আন্দোলন থেকে সরে আসার উপায় ছিল না। এবার দেখি দাবি পূরণে এ সরকার কতটা মনোযোগী হন।
সারাবাংলা/জেআর/এমপি