বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক
সীমান্তে হত্যা বন্ধসহ অসম চুক্তি বাতিল গুরুত্ব পাবে আলোচনায়
২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:২৮ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:১০
ঢাকা: আগামী ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এটাই বিজিবি-বিএসএফের শীর্ষ পর্যায়ের প্রথম বৈঠক। বৈঠকে দুইদেশের সীমান্তে হত্যা, গুলি ছোড়া, অনুমতি ছাড়া স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে যে আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে- আলোচনার মাধ্যমে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা থাকবে বলে জানান তিনি।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বিজিবি-বিএসএফ এর বৈঠককে সামনে রেখে এ সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক বৈঠক শেষেে এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে সীমান্ত হত্যা, ভারত কর্তৃক শূন্য লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, নদীসমূহের পানির সুষম বণ্টন, নদী হতে পানি উত্তোলন, পানি চুক্তি বাস্তবায়ন ও নদী তীর সংরক্ষণমূলক কাজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সীমান্তের সকল সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমানা নির্ধারণ এবং উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উভয় দেশের মধ্যে মোট ৪টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চুক্তিগুলো হলো:
1. Land Boundary Agreement-1974 (Brief and disposal of enclaves & disputed lands).
2. Joint India Bangladesh Guide Line for Border Authorities-1975 (Border management
guidelines).
3.Land Boundary Agreement Protocol-2011 (Exchange of enclaves/disposal of disputed land).
4. Coordinated Border Management Plan (CBMP)-2011 (Border patrolling, flag meeting and confidence building measures).
সরকার মনে করছে যে, এ সকল চুক্তির মধ্যে কিছু চুক্তি ও সমঝোতা অসমভাবে করে গেছে সাবেক সরকার। সেগুলো অনুষ্ঠেয় সীমান্ত সম্মেলনে বাতিল করার প্রস্তাব করা হবে। এছাড়াও, উভয় দেশের প্রয়োজনে শূন্য লাইন হতে ১৫০ গজের মধ্যে যেকোন উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্নের ক্ষেত্রে একে-অপরের সম্মতি গ্রহণের বাধ্য-বাধকতা রয়েছে।
বিজিবি -বিএসএফ বৈঠকে আলোচনার বিষয় থাকবে:
ক) বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক/ভারতীয় দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক সীমান্ত হত্যা/সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো/আহত করা বন্ধ করা।
খ) বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া/আটক করা বন্ধ করা।
গ) বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক সীমানা লঙ্ঘন/অবৈধ পারাপার/অনুপ্রবেশ বন্ধ।
ঘ) ভারত হতে বাংলাদেশে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালান প্রতিরোধ।
ঙ) সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ভারত কর্তৃক অনুমোদনহীন উন্নয়নমূলক অবকাঠামো নির্মাণকাজ এবং বিএসএফের বাঁধায় বন্ধ থাকা বাংলাদেশ পার্শ্বের উন্নয়নমূলক কাজ নিষ্পত্তি করা।
চ) আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে বর্জ্য পানি প্রবাহিত হয় এরূপ চারটি খালে পানি শোধনাগার স্থাপন।
ছ) বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী নদীসমূহের পানির সুষম বণ্টন, নদী হতে পানি উত্তোলন, পানি চুক্তি বাস্তবায়ন ও রহিমপুর খালের মুখ পূণঃউন্মুক্তকরণ।
জ) বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক/ভারতীয় দুষ্কৃতিকারী/অপরাধী কর্তৃক আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধ
ঝ) বিতর্কিত মুহুরীর চর এলাকায় সীমানা নির্ধারণ, বিভিন্ন এলাকায় বর্ডার পিলারে স্থাপনের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করা।
ঞ) বাংলাদেশের বর্তমান বিরজমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গনমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো।
ট) সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য ‘কার্যকর সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (Coordinated Border Management Plan-CBMP)’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন
ঠ) পারস্পারিক আস্থা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ।
দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ও দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ সমুন্নত রেখেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক সমময় বিএসএফ ও তাদের দুষ্কৃতকারীরা জমি থেকে কৃষকদের ধরে নিয়ে যায়। সেটা বন্ধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সীমানা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে পারাপারের চেষ্টা করে এটা বন্ধ করতে হবে। মাদকের কারখানায়য় ওষুধ বলে বানায় আসলে ওগুলা ফেন্সিডিল। সেগুলো বানিয়ে বাংলাদেশে পাচার করে। সীমান্তে ১৫০ গজের ভেতরে কতগুলো কাজ আছে যা করার নিয়ম নেই। সেগুলো তারা করতে চায়। আবার কিছু কাজ আছে যা করতে হলে দুই দেশের অনুমতি লাগে। ধরুন আমরা একটা মন্দির করতে চাই, তারা একটা মন্দির করতে চান, এসব করতে হলে পরস্পরের অনুমতি নিতে হয়। সেসব তারা মাঝে মধ্যে মানে না।’
তাদের শিল্প কারখানার বর্জ্য বাংলাদেশে আসে আগরতলা অংশে। খালের পানি নষ্ট হয় এতে। এ বিষয়ে চুক্তি আছে ইটিপি, এসটিপি। আগের সরকার চুক্তিতে শুধু এসটিপি দিয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা হবে। পানির সুষম হবে। পানি চুক্তির বাস্তবায়ন।যদিও এর বড় প্লাটফর্ম আছে। মুহুরি চরে বর্ডার পিলার স্থাপনের মাধ্যমে সীমানা নির্মান। ভারতীয় গনমাধ্যমে মিথ্যা ও অপপ্রচার বন্ধের আলোচনা হবে।
এ ছাড়া দুই দেশের আস্থা বাড়ানো। তিনি বলেন, ‘ছাড় দিয়ে আস্থা বাড়ে না। আলোচনার মাধ্যমেও আস্থা বাড়ে।’
তিনি বলেন, ‘সমঝোতার মাধ্যমে হচ্ছে। চারটা চুক্তি হয়েছে। ২০১০ সালে চুক্তিতে অসম চুক্তি। তারা যা বলে বেআইনি না। কারন আমরা চুক্তিতে সীমানায় কাজ করতে অনুমতি দিয়েছি। তিন বিঘা করিডোর ব্যবহারের অনুমতি আগের সরকার দিয়েছে। তিনি বলেন, এসব বাতিল করতে হবে। এ নিয়ে আলোচনা হবে। আরো আলোচনায় থাকবে কুলাউড়া রেলস্টেশনে বর্ডার থেকে তিন কিলোমিটার ভেতরে। তাদেরকে এত ভেতরে তাদের আসতে দেবো কীনা। সেটা নিয়ে কথা বলবো। ইমিগ্রেশন হবে বর্ডারে।’
সারাবাংলা/জেআর/এমপি