নির্বাচনের দাবিতে দ্রুত আন্দোলনের ইঙ্গিত দিলেন সালাহউদ্দিন
২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৫২ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৮
ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে চাপ সৃষ্টি করতে বিএনপি দ্রুত আন্দোলনে যাবে— এমন ইঙ্গিত দিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ইঙ্গিত দেন। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন’।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘সরকার মাত্রই সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করতে পারে। সেটা সব সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এখন অন্তর্বর্তী সরকার সব সিদ্ধান্তই নির্ভূলভাবে নেবে, এটা তো সঠিক নয়। ভুল তাদেরও হতে পারে। সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে চিন্তা করছি যে, সরকারের ভুল শুধরিয়ে সঠিক রাস্তায় এনে গণতান্ত্রিক রাস্তা বিনির্মাণের জন্য এবং একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের পথ পরিস্কার করার জন্য খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেব। সেটাকে আপনারা সরকারবিরোধী আন্দোলনও বলতে পারেন, সমালোচনাও বলতে পারেন।”
তিনি বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা মাঝে মধ্যে বলেন, আমরা যেন বেশি বেশি করে সমালোচনা করি, যাতে সরকার সঠিক পথে থাকে। এই সরকারের একটি ভালো গুণ আছে, তা হচ্ছে, সরকার মাঝে-মধ্যে ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও সমালোচনার মুখে সেই ভুলগুলো শুধরায়, গো ধরে বসে থাকে না। সরকার যখন ভুল শুধরায়, তখনই মনে করতে হবে এই সরকার জনগণের সরকার।”
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘আজকের দিনে প্রশ্ন হচ্ছে যে, আমরা কী কী সংস্কার চাই, কীভাবে নির্বাচন চাই, কখন নির্বাচন চাই ইত্যাদি, প্রশ্ন হচ্ছে এই সরকারের সফলতা, ব্যর্থতা, সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে। আমরা যদি এই সরকারকে সফল হতে দিতে চাই, তাহলে সরকারকে গাইড করার জন্য, পরিচালনা করার জন্য আমাদেরকে যথেষ্ট সমালোচনা করতে হবে। এমনকি আমাদেরকে রাজপথে আন্দোলনও করতে হতে পারে সরকারকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসার জন্য।”
তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন যদি বিলম্বিত করেন, সেই যৌক্তিকতা আপনাদেরকে জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। ইতিমধ্যে ৬ মাস পার হয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলো রিপোর্ট দিয়েছে। সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলার কথা। রিপোর্ট দেওয়ার পরে প্রায় ১৪/১৫ দিন পার হয়ে গেছে। সেই উদ্যোগ অবশ্য এখনো দেখা যায়নি। আমি আশা করি- যে সমস্ত বিষয়ে রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি ও বিশেষজ্ঞগণ ঐক্যমত পোষণ করতে পারে, সেগুলো আগে চিহ্নিত করুন।”
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলো অত্যন্ত সুন্দর বুঝলাম। কিন্তু সকল বিষয় কি এসেছে? অবশ্যই না। আবার কিছু বিষয় কি অতিরিক্ত আসেনি? অবশ্যই হ্যাঁ। আর কিছু বিষয় এসেছে যেগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে না। যে বিষয়গুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচারে, সামাজিক কালচারে যায় না সেগুলো আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে। কারণ, যারা সংস্কার কমিশনের বসেছেন আপনারাও মানুষ। আপনাদের সকল বক্তব্য, রিকমন্ডেশন শত ভাগ সঠিক— এর কোনো নিশ্চয়তা নাই। সেজন্য আলোচনার কথা এসেছে।”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলছি। কালকেও দেখলাম যে, আওয়ামী লীগ এদেশে নির্বাচন করতে পারবে না, করতে দেওয়া হবে না, নিষিদ্ধ করা হবে। এ বিষয়ে আমরা পরিস্কার বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে। যে দল ফ্যাসিবাদী চরিত্রে দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যে দল দায়ী, সে দলের নির্ধারিত সরকার দায়ী। শেখ হাসিনা অনির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীত্ব করেছেন, তার সিদ্ধান্তে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এই দেশে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং ব্যক্তির সাথে সেই সংগঠনের বিচার করতে হবে।”
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘ব্যক্তির বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্রাইব্যুনাল ও অন্যান্য আদালতে মামলা হয়েছে কিন্ত সংগঠন হিসেবে বিচার করার প্রভিশন সংবিধানের আর্টিক্যাল ৪৭ এ আছে। তাহলে সংগঠনের বিচারের বিষয়ে আমরা সোচ্চার নই কেন? সংগঠন হিসেবে বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে একটা সংশোধনী আনার কথা ছিল। কিন্তু সেখান থেকে সরকার সরে গেল। এখন যদি সরকারের অংশ হিসেবে কোনো কোনো উপদেষ্টা বলেন যে, আমরা আওয়ামী লীগের বিচার চাই। তো বিচারের বিষয়ে আপনারা কিছু করছেন না কেন?’’
‘‘বিচার করার জন্য আমরা দাবি করছি, আপনারা দাবি করছেন, এদেশের জনগণ দাবি করছে ফ্যাসিবাদী শক্তি, গণতন্ত্র হত্যাকারী, গণহত্যাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধী যারা, তাদের এবং সেই সংগঠনের বিচার হোক, বিচারের মাধ্যমে নির্ধারিত হোক, তা হলে জনগণ মেনে নেবে”— বলেন সালাহউদ্দিন।
সংগঠনের সভাপতি পার্থ সারথি দাসের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি বাছির জামাল প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/আরএস