Thursday 30 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বইমেলা উদ্বোধন করবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:০৮ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:১২

সংবাদ সম্মেলনে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: আগামী শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় অমর একুশে বইমেল ২০২৫ উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিতবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।

লিখিত বক্তব্যে ড. সরকার আমিন বলেন, ‘‘জ্ঞানভিত্তিক, মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বই এবং বইমেলা সহায়ক। আমরা আশা করি সকল সম্ভাবনায় আলোকিত হবে এবারের মেলা-আমাদের প্রাণে মেলা।’’

তিনি বলেন, ‘‘ভাষাশহিদ-ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর শহিদ, আহত ও অংশগ্রাহণকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবারের বইমেলার মূলপ্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।’’

ড. সরকার আমিন জানান, এবারের বইমেলায় মোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ৭০৮টি, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি, উদ্যানে ৬০৯টি। মোট ইউনিট ১০৮৪টি (গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি এবং ইউনিট ছিল ৯৪৬টি)। এবার মোট প্যাভিলয়ন সংখ্যা ৩৭টি, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি।

লিটল ম্যাগাজিন চত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গছতলায়। সেখানে প্রায় ১০৯ লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিশুচত্বরে মোট প্রতিষ্ঠান ৭৪টি এবং ইউনিট ১২০টি (গত বছর ছিল ৬৮টি এবং ইউনিট ছিল ১০৯টি)।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, এবারের বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে। তবে, কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বের হওয়ার পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির গেটের কাছাকাছি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমরআটি বেসিং প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অংশে মোট চারটি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ থাকবে।

ড. সরকার আমিন জানান, খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সীমানা ঘেষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এগুলো এবার বিশেষভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে।

শিশুচত্বর রাখা হয়েছে মন্দির গেটের প্রবেশের ডান দিকে বড় পরিসরে; যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে— জানান সরকার আমিন।

তিনি জানান, বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ অন্যান্য প্রকাশনী ২৫ শতাংশ ছাড়ে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে। ৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ১১ টায় থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুদের চিত্রাঙকন, আবৃত্তি এবং সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।

ড. সরকার আমিন জানান, বইমেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দ সংস্থা। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্বরর্তী এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধূলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনির চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।

২০২৪ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খানা দাদা ভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছর মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।

ড. সরকার আমিন জানান, ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন কের কেউ মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবে না না। ২১ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়। শেষ হবে রাত ৯ টায়।

তিনি আরও জানান, এবারের বইমেলা আয়োজনকে পরিবেশ সুরক্ষা সচেতন এবং জিরো ওয়েস্ট বইমেলায় পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে আয়োজনস্থল এবং পার্শ্বর্তী এলাকার স্টল, দোকান, মঞ্চ, ব্যানার, লিফলেট, প্রচারপত্র, ফাস্টফুড, কফি শপ, খাবার দোকান প্রস্তুতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার শতভাগ পরিহার করে পুনঃব্যবহারযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ, যেমন— পাট, কাপড়, কাগজ ইত্যাদি ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সরকার আমিন বলেন, ‘‘স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। কারও কোনো রাজনৈতিক দর্শন, মতবাদ বা বিশ্বাসকে প্রাধান্য বা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এবং বইমেলার নীতিমালা অনুসরণ করে সব সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

বঙ্গবন্ধুর বই প্রকাশ, প্রদর্শন বা বিক্রির ব্যাপারে কোনো ‘মব সংস্কৃতি’র আশঙ্কা করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘‘কোনো আশঙ্কাই আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। এ জন্য আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করেছি। ওইসব বৈঠকে এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’

অপর এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘‘একক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব বাংলা একাডেমি নিতে পারে না। কেউ কোনোভাবে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়লে আমরা সেটা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো জানাব। তারাই সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন।’’

বিগত দিনে বইমেলায় জঙ্গি হামলার শিকার ড. হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ, দীপনকে এবারের বইমেলায় স্মরণ করা হবে কিনা এবং তাদের জন্য আলাদা কোনো চত্বর রাখা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘‘তারা স্মরণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তাদেরকে আমরা নানাভাবে স্মরণ করি। কিন্তু, মেলার এই পরিসরে আলাদা করে স্মরণ করা সুযোগ নেই।’’

সারাবাংলা/এজেড/ইআ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বইমেলা উদ্বোধন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর