অমর একুশে বইমেলা: এবার দারুণ কিছু হবে!
৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:১৪ | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪১
ঢাকা: শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টা। ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনস্টিটিউশন সংলগ্ন গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সময় চোখ আটকে গেল তিনটা ডিসপ্লে বোর্ডে। সাদা, কালো এবং লালের মিশ্রণে প্লেটনিক ডিজাইনে তৈরি এ ডিসপ্লে বোর্ডে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের থিম। ডিসপ্লে বোর্ডের লেখা ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৫’।
বইমেলার সঙ্গে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি যুক্ত হওয়ার পর ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলা একাডেমি, একাডেমি সংলগ্ন সড়ক, দোয়েল চত্বর ও টিএসসি মোড়ে দেখা যেত এসব দৃশ্য। ২০১৪ সালে মেলার পরিসর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত হলে উদ্যানের প্রবেশ পথগুলোতেও একই দৃশ্য চোখে পড়ত মেলা শুরুর কয়েকদিন আগেই।
গত বছর ঘটে হঠাৎ ছন্দপতন। মেলার শুরুর পরও নান্দনিক এই কাজ চোখে পড়েনি। নিগিঢিগি অবস্থায়ই শেষ হয় ২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলা। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জেগেছিল— এবার কী হবে? একদিন আগে এ প্রশ্নের জবাবে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন বলেছিলেন, ‘একটু সময় দিন, মাত্র দুইটা দিন সময় দিন। আপনারা যেভাবে চাচ্ছেন, ঠিক সেইভাবেই হবে।’
কথা দিয়ে কথা রাখতে পারার মতো চরিত্র বাঙালি সমাজ রপ্ত করতে পারেনি। সে কারণে শঙ্কাটা থেকে যায়। তবে, শুক্রবার বিকেলে প্রথম দফায় দোয়েল চত্বরে অর্ধাকৃতির দারুণ দুইটি গেট এবং ফেরার পথে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সিটিউশন সংলগ্ন প্রবেশ পথে নয়নাভিরাম ডিসপ্লে বোর্ড দেখার পর শঙ্কাটা দূর হয়েছে বৈকি! বাকিটা দেখার জন্য হয়তো আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
সাধারণত বইমেলা শুরুর দুই-তিন মাস আগে থেকেই ইভেন্ট থিম, ইভেন্ট নিমোনিক, ভিজ্যুয়াল আইডেন্টিটি, সাদৃশ্যপূর্ণ রঙ নির্দেশিকা বা কালার গাইডলাইন অ্যান্ড হারমনি, ক্রিয়েটিভ ভিজ্যুয়ালাইজেশন, থিমেটিক এক্সিকিউশন, ভেন্যু লেআউট ও গ্রাউন্ড প্রস্তুতি, বাংলা একাডেমির স্টল ডিজাইন, গেট ডিজাইন, ইভেন্ট ব্র্যান্ডিং, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চ ডিজাইন ও প্রস্তুতকরণ, বইমেলার ভেতরে চার থেকে পাঁচটি মঞ্চ প্রস্তুতকরণ, স্পনসর সমন্বয়, গ্রাউন্ড ম্যানেজমেন্টসহ সম্পূর্ণ অবকাঠামো ডিজাইন, এক্সিকিউশন স্পনসরদের স্বার্থ রক্ষা, বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে সমন্বয় সাধন, থিমের ওপর ভিত্তি করে সৃজনশীল ইনস্টলেশন, পাবলিক ফাংশন ডিজাইন, প্রবেশ ও প্রস্থান পথের ডিজাইন, ভিজিটর এনগেজমেন্ট প্ল্যানসহ সামগ্রিক প্রস্তুতি পর্ব শুরু করতে হয়। আর এ কাজগুলো করে থাকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো।
২০০৬ সাল থেকে অমর একুশে বইমেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করেছে দেশের স্বনামধন্য তিন-চারটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি। ২০১৯ বইমেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে ‘নিরাপদ ইভেন্ট’, ২০২০, ২০২১ ও ২০২৩ সালে ‘ক্রসওয়াক’ এবং ২০২২ ‘সেমস’-এর মতো জায়ান্ট ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে কোম্পানিগুলো বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব পালন করেছে। এবার এ জাজের দায়িত্ব পেয়েছে ‘ড্রিমার ডংকি’ নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। অর্থ দিয়ে বইমেলার আয়োজনকে সহযোগিতা করছে রকেট (ডাচ্-বাংলা ব্যংক পিএলসি)। তাদের সঙ্গে কো-স্পন্সর হিসেবে আছে `আমা চা’ ও `সেভয় ইসক্রিম’। এতগুলো প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণে এবার দারুণ কিছু হবে— এমনটিই প্রত্যাশা বাংলা একাডেমির।
শুধু কি বাংলা একাডেমি আর দায়িত্বপ্রাপ্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠারগুলোর সদিচ্ছা বা আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা বা পরিষেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় ভূমিকায় অমর একুশে বইমেলা অনন্য, অসাধারণ হয়? বইমেলা তো পাঠক, প্রকাশক, লেখকের মিলনামেলা। এখানে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর দায়িত্বও সবচেয়ে বেশি। মানসম্মত বই প্রকাশের পাশাপাশি প্রকাশিত বইগুলোর নান্দনিক উপস্থাপনের জন্য স্টল-প্যাভিলিয়নের সাজ-সজ্জায় মনোযোগী হতে হয় তাদের। স্টল-প্যাভিলিয়নের দৃষ্টিনন্দন সাজ-সজ্জা বইমেলার আবেদন বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। মেলার আগের দিন বিকেলে সরেজমিন ঘুরে মনে হল, সে জায়গায়ও অনেকটা এগিয়ে আছে এবারের বইমেলা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জায়গা পাওয়া ৬০৯ স্টলের মধ্যে অধিকাংশের কাজই ৮০ থেকে ৯০ ভাগ সম্প্ন হয়েছে আর বাংলা একাডেমির অংশের ৯৯ টি স্টলের কাজও শেষের দিকে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির একটি প্যাভিলিয়ন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৩৬টি প্যাভিলিয়নও মোটামুটি প্রস্তুত। অবকাঠামো তৈরি শেষে এখন চলছে সাজ-সজ্জার কাছ। প্যাভিলিয়ন এবং স্টলের ডিজাইনের কাজ গত বছরের চেয়ে ভালোই মনে হলো। অবশ্য ২০২২ সালের বইমেলার আঙ্গিক বিন্যাস এবং অঙ্গসজ্জার কাছাকাছি যেতে এখনো অনেক পথ পারি দিতে হবে বাংলা একাডেমি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, স্পন্সর প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের।
শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ‘লেখক বলছি মঞ্চ’, ‘মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ’, টিএসসি সংলগ্ন প্রবেশ পথ, কালী মন্দির প্রবেশ পথ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অংশের বেষ্টনী এবং এর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথের কাজ শেষ করতে পারেনি আয়োজকরা। এই মুহূর্তে তাদের সব মনোযোগ উদ্বোধন পর্বটা নিয়ে; যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জানতে চাইলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। উদ্বোধন হয়ে গেলে আগামী কাল রাতের মধ্যে সব কিছুর মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। তাছাড়া আপনি যেহেতু বিকেল ৪টা পর্যন্ত ছিলেন, পরের ৬ ঘণ্টায় অনেক কিছুতে পরিবর্তন আসছে।’
সারাবাংলা/এজেড/এইচআই