পর্দা উঠল অমর একুশে বইমেলার
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৪ | আপডেট: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩০
ঢাকা: পর্দা উঠল অমর একুশে বইমেলার। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪ টায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মাসব্যাপী এ বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহম্মদ আজম, সচিব ড. মোহম্মদ সেলিম রেজা, মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন উপস্থিত ছিলেন।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর বিকেল সাড়ে ৪টায় সর্বসাধারণের জন্য বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ খুলে দেওয়া হয়। এ সময় আগ্রহী ও কৌতূহলী পাঠক, দর্শনার্থীরা বইমেলার চারটি গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকেন এবং প্রস্তুত, অর্ধপ্রস্তুত, আংশিক প্রস্তুত ও অপ্রস্তু স্টল-প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন। প্রকাশনা সংস্থার কর্মকর্তা, কর্মচারী, বিক্রয় কর্মী ও স্টল-প্যাভিলয়ন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি এবং শ্রমিকরা মেলায় প্রবেশ করে নিজ নিজ কাজে মনোযোগ দেন।
ভাষাশহিদ-ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর শহিদ, আহত ও অংশগ্রাহণকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বইমেলার এবারের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।
এবারের বইমেলায় মোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ৭০৮টি, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি, উদ্যানে ৬০৯টি। মোট ইউনিট ১০৮৪টি। এবার মোট প্যাভিলয়ন সংখ্যা ৩৭টি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ০১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি।
লিটল ম্যাগাজিন চত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় রাখা হয়েছে। সেখানে প্রায় ১০৯ লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিশুচত্বরে মোট প্রতিষ্ঠান ৭৪টি এবং ইউনিট ১২০টি।
এবারের বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুন্ন রেখে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে মেলা থেকে বের হওয়ার পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির গেটের কাছাকাছি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমরআটি বেসিং প্ল্যান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অংশে মোট চারটি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রাখা হয়েছে।
খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সীমানা ঘেষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এগুলো এবার বিশেষভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা আগের মতোই রাখা হয়েছে। শিশুচত্বর রাখা হয়েছে মন্দির গেটের প্রবেশের ডান দিকে বড় পরিসরে; যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।
বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ অন্যান্য প্রকাশনী ২৫ শতাংশ ছাড়ে বই বিক্রি করছে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে। ৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ১১ টায় থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।
বইমেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত রাখা হয়েছে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং ধূলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনির চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০২৪ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খানা দাদা ভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছর মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন কের কেউ মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবে না। ২১ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়। শেষ হবে রাত ৯ টায়।
এবারের বইমেলা আয়োজনকে পরিবেশ সুরক্ষা সচেতন এবং জিরো ওয়েস্ট বইমেলায় পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে আয়োজনস্থল এবং পার্শ্বর্তী এলাকার স্টল, দোকান, মঞ্চ, ব্যানার, লিফলেট, প্রচারপত্র, ফাস্টফুড, কফি শপ, খাবার দোকান প্রস্তুতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার শতভাগ পরিহার করে পুনঃব্যবহারযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ, যেমন— পাট, কাপড়, কাগজ ইত্যাদি ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এজেড/ এইচআই