‘১৭ বছর যাদের জ্বালায় অতীষ্ঠ ছিলাম, রূপ পালটে তারাই আবার জ্বালাচ্ছে’
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:০১ | আপডেট: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:০৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নিজ দলের একাংশের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে হামলা-ভাঙচুর, চাঁদাবাজি-লুটপাট, খুনোখুনির অভিযোগ তুলেছে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা বিএনপি। দলটির নেতারা বলেছেন, ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মীর অত্যাচারে বিএনপির নেতাকর্মীরা অতীষ্ঠ ছিলেন, ৫ আগস্টের পর তারা রূপ পরিবর্তন করে ফেলেছে। তাদের সঙ্গে আঁতাত করে (বিএনপির) একটি পক্ষ তারেক রহমানের সৈনিকদের ওপর আঘাত করছে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করে রাউজান উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি। এতে লিখিত বক্তব্য করেন উপজেলা কমিটির সভাপতি জসীম উদ্দিন চৌধুরী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
রাউজান উপজেলা বিএনপির বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে একপক্ষ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তারা বিবদমান অপরপক্ষ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন। তারা গিয়াস কাদেরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা কোনো নেতার বিরুদ্ধে নই। আমরা ১৭ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি। ৫ আগস্টের পর এলাকায় গিয়ে দেখলাম, যারা ১৭ বছর ধরে আমাদের জ্বালিয়েছে, তারা রূপ পরিবর্তন করে, মানুষ একই, কিন্তু রূপ পরিবর্তন করে তারা আজও আমাদের জ্বালাচ্ছে। যারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদধারী নেতা ছিল, এমপির সঙ্গে যাদের ছবি আছে, ব্যানার-পোস্টার ছিল, তারাই দেখি এখন রূপ পরিবর্তন করে তারেক রহমানের সৈনিকদের অত্যাচার-নির্যাতন করছে। আমরা এই ক্ষোভ জানাতে এসেছি, কোনো নেতার সঙ্গে রেষারেষি করতে আসিনি।’
বড় অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বিএনপিতে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ করে সভাপতি জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে পুরো রাউজানবাসী জিম্মি ছিল। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সাধারণ জনগণ স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল, রাউজানের একটি পক্ষ (বিএনপি) যারা দীর্ঘসময় এলাকায় ছিল না, তারাই আজ পতিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের সাথে নিয়ে পুরনো কায়দায় এলাকার বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, রাহাজানি ও খুনের সঙ্গে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি দলের ‘অপরপক্ষের’ বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট রাউজান থানায় হামলা করে অস্ত্র লুটপাট, রাউজানের ৪৮টি ইটভাটা থেকে দুই লাখ টাকা করে চাঁদা আদায়, কাঠবোঝাই ট্রাক থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা আদায়সহ আরও বিভিন্ন অভিযোগ করেন।
এছাড়া রাউজানের পশ্চিম গুজরায় ১৫ শতাংশ চাঁদা পরিশোধ না করায় ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া, চাঁদা না পেয়ে প্রবাসী সিআইপি ইয়াছিন ও ফোরকানের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, ব্যবসায়ী-প্রবাসীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করা হয়েছে।
জসীম উদ্দিন বলেন, ‘রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়ন বিএনপির তথাকথিত সাধারণ সম্পাদক দাবিদার মোজাহের আলম নগরীর খুলশীতে এক বাসায় গোয়েন্দা পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে প্রশাসনের হাতে ধরা পড়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি চাঁদা না দেয়ায় রাউজানের নোয়াপাড়ায় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এখন এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপি নেতাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে অপরপক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে যারাই এ ঘটনায় জড়িত তাদের গ্রেফতারের দাবি জানাই।’
সংবাদ সম্মেলনে রাউজান পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আবু আহাম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার উদ্দিন খান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ