৩ দেশে ট্রাম্পের শুল্কারোপে মেক্সিকোর পালটা শুল্ক ঘোষণা
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৩১
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার (২ জানুয়ারি) তিনটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, যার মাধ্যমে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের সমস্ত আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে কানাডা থেকে আমদানি করা জ্বালানি, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং বিদ্যুতের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকানদের সুরক্ষার জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মাদক ফেন্টানিল এবং অবৈধ অভিবাসনজনিত জাতীয় জরুরি অবস্থা শেষ হয় এই শুল্কারোপ বহাল থাকবে।
ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের নির্দেশ দেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ঘোষণা করেছেন, ১৫৫ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে তার দেশ।
চীন এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
আল জাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে সীমান্তের উভয় পাশে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কানাডার জনগণ এই বিষয়ে বেশ চিন্তিত, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েটের বাসিন্দারাও দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’ অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, এই শুল্কের ফলে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হতে পারে এবং এটি কানাডাকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ট্রাম্প এই শুল্কের জন্য আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন এবং জাতীয় জরুরি আইন ব্যবহার করেছেন, যা প্রেসিডেন্টকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ দেয়।
নতুন শুল্ক ব্যবস্থা ৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) রাত ১২টা (ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম) থেকে কার্যকর হবে। তবে যেসব পণ্য শনিবার (১ জানুয়ারি) রাত ১২:০১-এর আগে জাহাজ বা পরিবহনে উঠেছে, সেগুলো শুল্কের আওতামুক্ত থাকবে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই শুল্ক বহাল থাকবে যতক্ষণ না সংকট লাঘব হয়, তবে সংকট লাঘবের শর্ত সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, এই শুল্ক ব্যবস্থার কোনো ব্যতিক্রম থাকবে না। যদি কানাডা, মেক্সিকো বা চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে ট্রাম্প আরও কঠোর শুল্ক আরোপ করতে পারেন।
কানাডার ক্ষেত্রে, ‘ডি মিনিমিস’ শুল্ক ছাড় (৮০০ ডলারের কম মূল্যের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা) বাতিল করা হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, কানাডা ও মেক্সিকো ছোট পার্সেলের মাধ্যমে ফেন্টানিল ও এর রাসায়নিক উপাদান যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ৩০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন অ্যালকোহল ও ফলের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে এবং এটি মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হবে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে ট্রাম্পের ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকার ফেন্টানিল সমস্যা সমাধান করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত নিজেদের শহরগুলোতে মাদক বিক্রির বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং অবৈধ অর্থপাচার বন্ধ করা, যা তাদের জনগণের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর।’
বিসেষজ্ঞদের মতে, মেক্সিকোর মোট রফতানির ৮০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে যায়। ফলে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে তাৎক্ষণিকভাবে দামের ঊর্ধ্বগতি এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে ডেমোক্র্যাট ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছে। ডেমোক্র্যাটরা সরাসরি ট্রাম্পকে মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন।
ট্রাম্পের এই শুল্ক সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার মধ্যে নতুন বাণিজ্যযুদ্ধের সম্ভাবনা উসকে দিয়েছে। এতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কানাডা ও মেক্সিকো পালটা শুল্ক আরোপের ঘোষণা এই সংকটকে আরও তীব্র করতে পারে।
সারাবাংলা/এনজে