খাদ্য নিরাপত্তায় ২ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:১৯ | আপডেট: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪৭
ঢাকা: দেশে নিরাপদ খাদ্যে বিশেষ জোড় দিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘ফুড সেফটি ক্যাপাসিটি ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩৯০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, জাইকার ঋণ থেকে ২ হাজার ১৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, উন্নত দেশগুলোতে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। সেখানে দেখা যায়, যেসব খাদ্য আমদানি করা হয়, সেগুলো যাচাই বাছাই করেই নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, চিংড়ি রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের দুর্নাম আছে। এতে দেশেরও সুনাম নষ্ট হয়। কিন্তু এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এরকম ঘটনা আর ঘটবে না। আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করবো সেগুলো যেমন পরীক্ষা করা যাবে, আবার আমাদের দেশে যেসব পণ্য আসবে সেগুলোও পরীক্ষা করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা নিরাপদ খাদ্য নিয়ে উদাসীন বলে এদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে আছে নানা ধরনের অসুখ। এসব থেকে জনগণকে রক্ষায় প্রকল্পটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে- প্রশাসনিক সক্ষমতা উন্নতকরণে ঢাকায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের স্থায়ী অফিস এবং বিভাগীয় অফিস স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে দেশব্যাপী নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কিত প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা; খাদ্য পরীক্ষার সক্ষমতা উন্নতকরণে প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত ঢাকায় ১টি নিরাপদ খাদ্য রেফারেন্স ল্যাব এবং চট্টগ্রাম ও খুলনায় ২টি বিভাগীয় ল্যাব স্থাপনসহ নিয়ন্ত্রণ ও রেফারেন্স পরীক্ষার জন্য জনবল সরবরাহ করা; খাদ্য পরিদর্শন ও নমুনা সংগ্রহ প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে বৈজ্ঞানিকভাবে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষাগারে পাঠানোর জন্য বিশেষায়িত (কাস্টমাইজড) নমুনা সংগ্রহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা; দক্ষ খাদ্য নিরাপদতা (ফুড সেফটি) জনবল তৈরিতে জাতীয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নিরাপদ খাদ্যসম্পর্কিত একটি পরিপূর্ণ ও কার্যকরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট, হ্যাজার্ড এ্যানালাইসিস অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কন্ট্রোল পয়েন্ট (এইচএসিসিপি), ফুড বিজনেস অপারেটরদের (এফবিও) জন্য ফুড সেফটি বেসিক কোর্স, ফুড সেফটি অফিসার, ইন্সপেক্টর, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তা, খাদ্য বিশ্লেষক, ম্যানেজমেন্ট অফিসার এবং স্টেকহোল্ডারদের (রেস্টুরেন্ট কর্মী, খাদ্য আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং খাদ্য শিল্পকর্মী ইত্যাদির জন্য প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) ইত্যাদি দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হবে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্য পরীক্ষা, ঝুঁকি নিরূপণ, ঝুঁকি বিশ্লেষণ ও খাদ্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি, প্রাণীসম্পদ, মৎস্য এবং সামুদ্রিক খাদ্যসহ সকল প্রকার দেশীয় ও আমদানি করা খাদ্য,খাদ্যপণ্যের নিরাপদ উৎপাদন ও ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে খাদ্যজনিত অসুস্থতা কম করা হবে। খাদ্য রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত খাদ্য পরীক্ষাগার খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মান পূরণ করে খাদ্য, খাদ্যপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি এবং খাদ্য শিল্পের বৈচিত্রতা আনয়ন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে। উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব, বিজ্ঞানভিত্তিক খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা এবং খাদ্য সরবরাহ চেইন অবকাঠামো এবং খাদ্য নিরাপদতা সংক্রান্ত অসচেতনতার কারণে বাংলাদেশে খাদ্যবাহিত রোগ এবং অন্যান্য খাদ্য নিরাপদতার ঝুঁকির প্রকোপ অনেক বেশি। ডায়রিয়াজনিত রোগ, টাইফয়েড জ্বর এবং হেপাটাইটিস বাংলাদেশে অন্যতম খাদ্যবাহিত রোগ। দেশের জন্য খাদ্য, পুষ্টি এবং জীবিকার চাহিদা পূরণে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার ফলে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। খাদ্য উৎপাদনের বৈচিত্রতা ও খাদ্য আমদানি নির্ভর দেশ হওয়ায় কার্যকর নিরাপদ খাদ্য নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে খাদ্য ঝুঁকি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। এরমধ্যে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছে যেখানে নিরাপদ খাদ্য নাগরিকদের অধিকার হিসাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষা করার জন্য বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পাবলিক রেফারেন্স ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরির অভাব রয়েছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশাসনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভবিষ্যতে খাদ্য ব্যবসার লাইসেন্সিং ব্যবস্থা প্রবর্তন, দেশব্যাপী খাদ্য পরীক্ষা ও নির্দেশিকা প্রণয়ন, নজরদারি, খাদ্য ব্যবসা অপারেটরদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ, আমদানি ও রপ্তানিতব্য খাদ্যের জন্য হেলথ সার্টিফিকেট; প্রদানসহ একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস