বইমেলায় দর্শনার্থী বেশি, বেচাকেনা জমবে ১৫ ফেব্রুয়ারির পর
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪৪ | আপডেট: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪৯
ঢাকা: বইমেলা শুরু হয়েছে মাত্র তিনদিন হলো। এরই মধ্যে জমে উঠেছে মেলা। দুপুর গড়াতেই দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হতে শুরু করেছে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। যদিও এখনো অনেক স্টলের কাজ বাকি। এর মধ্যেই দর্শনার্থীরা আসছেন, ঘুরছেন, বই দেখছেন, আবার কেউ কেউ বই কিনছেন।
স্টলের কর্মীরা জানিয়েছেন, এখনো সব বই আসেনি। নতুন নতুন বই আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের সংখ্যাও বাড়ে। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবারের বইমেলার আয়োজন। তাই পাঠক-দর্শনার্থীদেরও আশা, এবারের বইমেলায় ভিন্নতা থাকবে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, দুপুরের পর থেকেই বইমেলায় আসতে শুরু করেছেন দর্শনার্থীরা। তিনটায় মেলার প্রবেশ দ্বার খোলা হলেও দুইটা থেকেই গেটে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে অনেককে। গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীও বাড়তে দেখা গেছে। মেলার তৃতীয় দিনে প্রায় সব স্টলেই পাঠকের আনাগোনা ছিল।
এদিন বিকেলে সময় প্রকাশনে বাবা-মায়ের সঙ্গে বই কিনতে এসেছে কিন্ডারগার্টেন পড়ুয়া জাবেদ। তার বাবা জহিরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূলত বাচ্চার জন্য ছড়ার বই কিনতেই মেলায় আসা। অনেক স্টল ঘুরেছি, বই কিনেছি। এখন কিছু উপন্যাস দেখছি। তবে এখনই কিনছি না। শেষ দিকে মেলায় এলে নতুন নতুন আরও বই পাওয়া যাবে, তখন কিনব।’
বিদ্যানন্দের স্টলে এসেছেন ফাহিম আহমেদ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু বই নির্বাচন করে এসেছি। সেগুলো বিদ্যানন্দে পাওয়া যায়। যা এরই মধ্যে প্রকাশ হয়েছে। সেগুলো কিনলাম।’ জ্ঞানকোষে দেখা গেল, কয়েক বন্ধু মিলে এসেছেন বই কিনতে। তবে কেনার চেয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতেই ব্যস্ত দেখা যাচ্ছিল তাদের। তাদেরই একজন প্রিয়তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বই দেখছি, পছন্দ হলে কিনব।’ কথা প্রকাশেও যত পাঠক দেখা গেল বিক্রি তার চেয়ে অনেক কম।
ঐতিহ্য প্রকাশনী এবার তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। আগে মেলার শুরুর দিন থেকেই পাঠক ক্রেতাদের যে ভিড় দেখা যেত, তা এবার নেই। বাতিঘরেও ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি। অন্যপ্রকাশে এখনো ভিড় করেন হুমায়ুন ভক্তরা। এবারে প্রথমবারের মতো জিয়াউর রহমান, খালেদা, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিয়ে বই দেখা গেলো ইতি প্রকাশনীতে। স্টলটি একটি ঘরের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। তাই বই কেনার চেয়ে ছবি তুলতেই আগ্রহ বেশি দেখা গেল পাঠক ক্রেতাদের।
এদিকে পাঠক ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে স্টলগুলোতেও আনা হয়েছে নতুনত্ব। এ সব স্টলের সামনে ছবি তুলছেন ও ঘুরে ঘুরে দেখছেন ক্রেতারা। পুঁথি নিলয় স্টলটির চারটি খুঁটি বড় বড় আকারের বই দিয়ে করা হয়েছে। যা মেলায় আর কোনো স্টলে দেখা যায়নি। ভিন্ন ডেকোরেশন করা হয়েছে অয়ন প্রকাশনী, বাতিঘরের মতো অনেক স্টলে। শিশুদের স্টলগুলোতে এবার তেমন ভিন্নতা চোখে না পড়লেও এখানে ক্রেতাদের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। শিলা প্রকাশনীর কর্মী বাদল সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দিন থেকে বই বেশ বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ জ্ঞান আর গল্পের বই কিনছে বেশি।’
প্রকাশকরা জানান, দর্শনার্থীরা মেলায় বই দেখছেন, কেনার সময় এখনো আসেনি। পছন্দের লেখকের নতুন বইয়ের খোঁজ করছেন তারা। শুক্র ও শনিবার এবং বিশেষ দিনগুলোতে ভালো বিক্রির আশা করছেন তারা। ঐতিহ্য স্টলের ম্যানেজার বিকাশ সারাবাংলা বলেন, ‘আরও অনেক বই আসবে। শুরুতে বিক্রি একটু কমই থাকে।’ অক্ষর প্রকাশনীর কর্মী আফসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্টল এখনো ওভাবে গোছানো হয়নি। এর মধ্যেই ক্রেতারা আসছেন, বই কিনছেন।’
এদিকে এখনো সব স্টল প্রস্তুত হয়নি। কেউ ঘর তৈরি করছেন, আবার যাদের ঘর তৈরি হয়েছে তারা রং করছে। আবার কোনো কোনো স্টল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হয়েছে। তেমনি একটি মিডিয়া স্টল ‘সারাবাংলা’র উদ্বোধন হলো আজ। উদ্বোধন করেন সারাবাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক। বইমেলার খবর দ্রুত ও গুছিয়ে পাঠকের সামনে তুলে ধরতে তারা এই প্রথমবারের মতো বইমেলায় স্টল নিয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার ছিল সরস্বতী পূজা। যে কারণে বইমেলায় দুপুর থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। যারা রমনা কালী মন্দিরে অঞ্জলি নিতে এসেছেন তারা দুপুর থেকেই বইমেলা ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তবে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য প্রবেশ দ্বার খোলা হয় বিকাল ৩টায়।
সারাবাংলা/পিটিএম