বিশ্বব্যাংকের সেমিনারে বক্তারা
সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধাভোগীদের স্বাবলম্বী করার তাগিদ
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:০০
ঢাকা: উদ্ভাবন ও শক্তিশালী বিতরণ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কার্যকারিতা উন্নত করার মূল চাবিকাঠি। এজন্য পরিবর্তন এনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীগুলোকে উৎপাদনমুখী করতে হবে। এক্ষেত্রে দিনের পর দিন শুধু আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে না। নগদ টাকা প্লাসের সঙ্গে কর্মসূচীর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ, লাইফ স্কিল ও উৎপাদন বাড়ানোর কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয় শেখানো হবে। যাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর সহায়তা পাওয়ার পাশাপাশি একসময় ওই উপকারভোগী নিজেই স্বাবলম্বী হতে পারেন। সেই সঙ্গে উপকারভোগী নির্বাচনে বর্তমানের যে অনিয়ম দুর্নীতি রয়েছে, তা কমাতে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগ এবং সোশ্যাল ইন্স্যুরেন্সের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বব্যাংক আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব পরামর্শ ও তাগিদ দেন।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মোর্শেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোমতাজ আহমেদ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিউদ্দিন। বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অভিরুপ সরকার সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। সংস্থাটির সিনিয়র সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বিশেষজ্ঞ সারায়ানা ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল বাসার মো. আমির উদ্দিন এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিটিএম প্রকল্পের পরিচালক নাজমুল আহমেদ।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্বলতা কমাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে নগদ প্লাস পরিষেবাগুলির সঙ্গে নগদ-ভিত্তিক প্রোগ্রামগুলিকে এককিত্রত করার মাধ্যমে সমন্বিত জীবিকা এবং মানব দক্ষতা বৃদ্ধিকারী কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য সঠিক সুবিধাবেঅগী নির্বাচন, কার্যকর দক্ষতা প্রশিক্ষণ, কাউন্সেলিং, সামাজিক সহায়তা, উৎপাদনশীল অনুদান, প্রশিক্ষণ উপবৃত্তি, সামাজিক পরিষেবা, পুষ্টি সমর্থন বা জলবায়ু স্থিতিস্থাপক সম্প্রদায় অবকাঠামো-বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
সেমিনারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষার ভবিষ্যৎ্-এর উপর পরিকল্পিত জ্ঞান বিনিময় পরামর্শের একটি সিরিজের অংশ। এ আয়োজনের লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে উদ্ভাবনী নগদ-প্লাস এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া এবং সর্বাধিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য আর্থিক স্থায়িত্ব এবং প্রভাব বৈশ্বিক প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করা। নগদ-প্লাস সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো দুর্বল সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জীবিকার প্রশিক্ষণ, আচরণগত পরিবর্তন, এবং পুষ্টি গ্রহণ-নগদ প্লাস কর্মসূচীগুলো গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা পরিষেবাগুলির সঙ্গে সরাসরি আর্থিক সহায়তার সমন্বয় করে মানব পুঁজি তৈরি করতে হবে। দারিদ্রের দুষ্ট চক্র ভাঙতে এবং গরীব সম্প্রদায়গুলোকে অর্থনৈতিক এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত ধাক্কাগুলির জন্য স্থিতিস্থাপক করতে সহায়তা করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারমিন মোর্শেদ বলেন, অর্থনৈতিক সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের তথ্য মতে, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর সুবিধাভোগী নির্বাচনে ৪০/৫০ শতাংশ ভুয়া। এক্ষেত্রে প্রকৃত উপকারভোগী নির্বাচনে আমরা ডিজিটাল পদ্ধতি যুক্ত করছি। ইতোমধ্যেই এমআইএস সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এতে সুবিধাভোগী নির্বাচনের অনিয়ম কমবে। সেই সঙ্গে একটি ড্যাশবোর্ড স্থাপন করা হবে। যাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা কমানো যায়। পাশাপাশি শক্তিশালী মনিটরিং সিস্টেমের বিকল্প নেই। সামাজিক নিরাপত্তা বর্মসূচীগুলোকে উৎপাদনশীল করতেই হবে। তাহলে সরকারি অর্থেও প্রকৃত ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, বিশ্বব্যাংক সরকারের উদ্ভাবনী কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পেরে গর্বিত বোধ করছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক নগদ এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলি দুর্বল এবং দরিদ্র সম্প্রদায়কে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসতে এবং ভবিষ্যতের ধাক্কাগুলির জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত থাকতে সহায়তা করে। এছাড়া এই ধরনের একটি কর্মসূচি দরিদ্র এবং দুর্বল যুবকদের উপযোগী পরিষেবাগুলির একটি প্যাকেজের মাধ্যমে আরও ভাল আয়ের সুযোগ পেতে সাহায্য করে যা নগদ স্থানান্তর প্রাপকদের জীবিকার হস্তক্ষেপ, ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং প্রয়োজনীয় মানসিক-সামাজিক সহায়তার সঙ্গে সংযুক্ত করার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা, স্বনির্ভরতা এবং মানব পুঁজি গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
তিনি জানান, বিশ্বব্যাংক ১০০ কোটি ডলারের বেশি অনুদান এবং রেয়াতি অর্থায়নের একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির নকশা, বিতরণ এবং শক-প্রতিক্রিয়া জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
সারাবাংলা/জেজে
সারাবাংলা/জেজে/আরএস