Tuesday 04 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে বিএনপির রূপরেখা ঘোষণা
সকলের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:১২ | আপডেট: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৪৪

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

ঢাকা: সকলের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে  জিডিপি’র ৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে দলীয় রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ রূপরেখা তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বিজ্ঞাপন

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবা উন্নয়নে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যগত। ১৯৭৮ সালে ‘আলমা আতা’ ঘোষণায় স্বাক্ষর দানের মাধ্যমে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান “সবার জন্য স্বাস্থ্য” নিশ্চিতকরণের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও প্রতিরোধ যে প্রতিকারের চাইতে উত্তম এই ধারণা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার যে মডেল দেশব্যাপী প্রবর্তন করেছিলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা আধুনিকায়নে সেটাই ছিল যুগান্তকারী প্রথম পদক্ষেপ। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সমন্বিত টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সক্ষম দৃঢ় একটি নবপ্রজন্ম সৃষ্টির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে মান সম্পন্ন চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণ করেছিলেন।’’

তিনি বলেন, ‘‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা যেমন আজও নিশ্চিত হয়নি, তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষাও আজ পরিকল্পিত নয়। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করেনি। সাধারণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির জন্য বিদেশ গমন প্রবণতায় এখনো রয়েছে উচ্চ হার। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত সর্বজনীন জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি । স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া দেশের জনগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার, কথাটির বাস্তব প্রতিফলন আজও প্রত্যাশিত মাত্রায় উপনীত হতে পারেনি ৷ একটি পরিকল্পিত স্বাস্থ্য নীতির অনুপস্থিতি, চিকিৎসক – চিকিৎসা প্রার্থীর সম্পর্ক উন্নয়ন, ‘‘প্রতিরোধই যে প্রতিকারের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ’’ এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি।’’

বিজ্ঞাপন

‘‘যদিও বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের জন্য প্রতিশ্রতিবদ্ধ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এর অন্তর্ভুক্তি সূচকে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ১০০-তে পেয়েছিলো ৫২। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ সূচকে বাংলাদেশের নিচে ছিল শুধু পাকিস্তান ও আফগানিস্তান’’— বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির ক্ষমতায় গেলে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে উন্নত কল্যাণকামী রাষ্ট্রে বিদ্যমান ব্যবস্থার আলোকে সকলের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। দারিদ্র্য বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করা হবে। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৫ শতাংশ এর কম হবে না। প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত নারী ও পুরুষ পল্লী স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থা করা এবং সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা, শিক্ষা এবং গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।’’

এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিএনপির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার আলোচনায় প্রায়শই বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের অধীনে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের বিবেচনায় রেখে সকল পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নীতিমালা প্রণীত হয়, ফলে দেশে বিদ্যমান প্রচলিত ও ঐতিহ্যবাহী ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি চিকিৎসা ব্যবস্থার অস্তিত্ব উপেক্ষিত হয়। ফলে অতীতের প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় অধিকতর উন্নয়ন আধুনিকায়ন ও বৈজ্ঞানিক করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও বিবিধ সহায়তা প্রদান সমান গুরুত্বপূর্ণ।’’

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘বিগত আওয়ামী শাসনকালে স্বাস্থ্যখাতে আর্থিক দুর্নীতি, অনিয়মসহ পদোন্নতি, বদলি, প্রশাসনিক দুর্বিত্তায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধনের সাথে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দলীয়করণের আবরণে আচ্ছাদিত করা হয়েছে ৷ ফলে স্বাস্থ্য সেবায় জনগণের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি বঞ্চিত হয়েছে, সমগ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তীব্র বিদেশ মুখিতা সৃষ্টি হয়েছে, চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্কের হয়েছে অবনতি, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ হয়ে পড়েছে অনিরাপদ, সরকারি স্বাস্থ্য সেবার অধিক্ষেত্রে জনগণ উচ্চ মূল্যের বেসরকারি চিকিৎসা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে ।’’

স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে বেশ কিছু স্বল্প মেয়াদি প্রস্তাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে ইউনিয়ন সাব সেন্টার উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত সংখ্যক ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহকারী’ নিয়োগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার গুণগত মান উন্নয়ন, জিপি (জেনারেল ফিজিশিয়ান) অধীনে প্রত্যেক নাগরিককে একজন সরকারি রেজিস্টার্ড চিকিৎিসকের অধীনে রাষ্ট্রীয় খরচে সর্বোত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, বিদ্যমান দ্বিতীয় (জেলা ও সদর হাসপাতাল) এবং তৃতীয় স্তরের বিষেশায়িত স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালীকরণ, স্বাস্থ্যসেবায় ন্যায় বিচার, রোগী ও সেবা প্রদানকারীর জন্য সমতাভিত্তিক আইন প্রণয়ন, সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে চিকিৎসক ও রোগী সম্পর্ক উন্নয়নের কার্যকর ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও মিডিয়ার যথাযথ এবং ইতিবাচক ব্যবহার।’’

মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তাবনা তুলে ধরে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য কার্ড প্রবর্তন ও স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে সুবিধা প্রবর্তন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতা সক্ষম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে স্বক্ষম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং স্বাস্থ্য পর্যটন উপযোগী একটি আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যপরিকাঠামো নির্মাণ।’’

তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের জন্য ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ প্রোগ্রামের সূচনা, প্রস্তাবনা অথবা এনআইডি কার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্য তথ্য এনআইডি কার্ড সংযোজন করা। এই উন্নতর কার্ডের প্রধান উদ্দেশ্য হবে জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় প্রবেশাধিকার সহজ করা এবং তাদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ সহায়তা করা। প্রতিটি নাগরিকের এনআইডি কার্ড প্রাপ্তি সাপেক্ষে এটি প্রদান করা এবং পরবর্তী পর্যায়ে সয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ করা।’’

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘সকল ক্ষেত্রেই সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা ক্রমাগত বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও পরিশীলনের মাধ্যমে বাস্তবধর্মী ও প্রয়োগযোগ্যভাবে বাস্তবায়নই সফলতার মূল কথা। এই বিবেচনায় উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবটি একটি ধারণাগত কাঠামো। চলমানভাবে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক পর্যালোচনা, অংশীজনের চাহিদা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের সমন্বয়ে যেকোনো সংস্কার প্রস্তাব জনকল্যাণে কার্যকরভাবে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।”

তিনি বলেন, ‘জনকল্যাণমুখী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সকলের মতামতকে পুনঃমর্যাদা দেওয়ার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে জনগণের কল্যাণে স্বাস্থ্যসংস্কার প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

সারাবাংলা/এজেড/ইআ

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিএনপি স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে রূপরেখা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর