উন্নততর বীজ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়াতে ৪৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৪ | আপডেট: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৭
ঢাকা: বীজ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়াতে চায় সরকার। এজন্য ধান, গম ও ভুট্টার উন্নততর বীজ উৎপাদন এবং উন্নয়ন তৃতীয় পর্যায়’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)।
এ প্রসঙ্গে সম্পতি একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “আমাদের এমন ধরনের বীজ উৎপাদন করতে হবে যাতে বিদেশীরা আমাদের কাছ থেকে বীজ কিনতে পারে। কৃষি গবেষণায় আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে আছে। কিছু বীজ উৎপাদনেও এগিয়ে যেতে হবে। বীজের ক্ষেত্রে নিজস্ব ভান্ডার তৈরি করতে প্রকল্পটি কাজে লাগাতে হবে।”
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলেন, জাতীয়ভাবে উন্নত প্রযুক্তিতে গুণগত মানসম্পন্ন দানাশস্য (ধান, গম ও ভুট্টা) বীজ উৎপাদন এবং চুক্তিবদ্ধ ও প্রশিক্ষিত চাষীদের কাছে বিতরণ করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের বীজের বাড়তি চাহিদাপূরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে দেশে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য একর প্রতি ফলন বাড়ানোই একমাত্র পথ। এ জন্য উন্নতমানের বীজ কৃষকদের কাছে সরবরাহ করার মাধ্যমে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভব। চাষীদের উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করার জন্য সরকারী খাতে বীজ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা আবশ্যক। বিএডিসি চুক্তিবদ্ধ চাষীদের বিভিন্ন ফসলের ভিত্তি বীজ সরবরাহ করে। যেহেতু বীজ উৎপাদনের জন্য সরকারিভাবে পর্যাপ্ত খামার বা জমি নেই, সেহেতু কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স পদ্ধতি অবলম্বন ছাড়া দেশের সাধারণ কৃষকদের ভাল বীজের (পরীক্ষিত ও প্যাকেটজাত) চাহিদা পূরণের বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এই প্রকল্পটির প্রতিষ্ঠিত অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও চুক্তিবদ্ধ চাষী স্কীম, বীজ উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রয়োজন রয়েছে। বীজ উৎপাদন ও বিতরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এছাড়া জাতের বিশুদ্ধতা ও বীজের মান নিয়ন্ত্রণ কৃষক পর্যায়ে সম্ভব নয়। তাই এই প্রকল্পটির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম হলো- চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মাধ্যমে ১ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন ধান, গম ও ভুট্টা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সরবরাহ এবং ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন হাইব্রিড ভুট্টা বীজ ক্রয়,লোডিং-আনলোডিং শেড, পাকা রাস্তা, হেরিংবোন বড় রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ; বীজ উৎপাদনকারী চুক্তিবদ্ধ চাষী এবং কর্মকর্তাগণের প্রশিক্ষণ দেওয়া, ক্লিনার কাম গ্রেডার মেশিন, ডিজিটাল ওজন যন্ত্র, ময়েশ্চার মিটার, পিউরিটি বোর্ড, ডিজিটাল সীড কাউন্টার, সীড ডিভাইডার, ডানেজ, ত্রিপলু, ফিউমিগেশন শীট ইত্যাদি ক্রয় ও বিতরণ; ১টি জীপ, ১টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ৬টি ট্রাক (৫ থেকে ৭ টন), ৬টি ট্রাক (১০ থেকে ১২ টন) পরিবহন সেবায় হায়ারিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা এবং ১৬টি মোটর সাইকেল (১২৫ সিসি) ও ১২টি বাই সাইকেল ক্রয় করা হবে।
কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. মোঃ নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া বলেন, ফসল উৎপাদনে বীজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুণগত মানসম্পন্ন বীজের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেবল গুণগত মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারের মাধ্যমেই ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। গুণগত মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করার মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি তথা দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস