শোষণ-বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সমতার রাষ্ট্র গড়তে হবে: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫২ | আপডেট: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৯
ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘গরিব-মেহনতি মানুষের উন্নতি হলেই কেবল দেশের উন্নতি হচ্ছে- বলে আমরা মেনে নেবো না। যারা ঢাকা শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রিকশা বন্ধের আলাপ করেন, তারা জানেন না যে, আসল সৌন্দর্য নিহীত আছে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার মধ্যে। মানুষের রুটি-রুজির নিশ্চয়তা যেখানে রাষ্ট্রের নিশ্চিত করার কথা, সেখানে রাষ্ট্রকে আমরা বিপরীত ভূমিকায় দেখছি। মনে রাখতে হবে, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের আকাঙ্খায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেহনতি মানুষের সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সে চেতনার ধারাবাহিকতায় ২৪’র অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমেও বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্রের আকাঙ্খা পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। তাই শ্রমিক, মেহনতি মানুষের রুটি-রুজির নিশ্চয়তা বিধান পরিপন্থী যেকোনো সিদ্ধান্ত গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী হিসেবেই বিবেচিত হবে।’
তিনি বলেন, বড় লোকের স্বার্থে রাষ্ট্র পরিচালনার কারণে দেশে গরিব মেহনতি মানুষের ওপর শোষণ-নিষ্পেষণ নেমে এসেছে। আমরা শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সকল শোষণ-বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সমতার রাষ্ট্র গড়বো।
মঙ্গলবার ( ৪ ফেব্রুয়ারি ) কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে যারা জীবন উৎসর্গ করেছে তাদের অধিকাংশই শ্রমিক। এই শ্রমিকরা দেশের সভ্যতার চাকা অগ্রসর করে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ তারাই সমাজে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এবারের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্খা হলো বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার। আর এই বৈষম্যের প্রধান শিকার হলো দেশের শ্রমজীবী মানুষ। শ্রমজীবী মানুষ রিকশার চাকা ঘুরিয়ে নিজের শরীরের ঘাম ঝরিয়ে সমাজের চাকা সচল রাখলেও শ্রমজীবী মানুষের জীবনের চাকা সচল নেই। শ্রমজীবী মানুষের জীবনের চাকা সচল করতে সচেতন দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি সারাদেশে রিকশা-ভ্যান চালকদের শ্রমকে লাঘব করার জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা, এসব যানবাহনের সুলভ প্রাপ্তি, অবাধ চলাচলের অধিকার নিশ্চিত ও গণপরিবহন হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানান। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্যাতনের পথ পরিহার করে, শ্রমজীবী মানুষদের জীবন-মান উন্নয়নে এবং সর্বত্র বৈষম্য দূর করার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার প্রতি আহ্বান জানান।
রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্খা হলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। তিনি এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ হিসেবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানান।
সম্মেলনে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- দেশের সড়ক উপযোগী নকশায় আধুনিকায়নসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স ও যৌক্তিক রুট পারমিট প্রদান; চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা; ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলে নীতিমালা প্রণয়ন করা; শ্রমিকদের ওপর সব জুলুম-নির্যাতন-চাঁদাবাজি-হয়রানি বন্ধ করা; শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা; সড়কের লেন পদ্ধতি সচল ও সার্ভিস লেন এবং চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করা; শ্রমিক নেতাদের নামে মিথ্যা হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করা; জীবিকা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও ব্যাটারিচালিত যানবাহন সংক্রান্ত সব রিট দ্রুত নিষ্পত্তি করা; ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে গণপরিবহন ও শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান; অসৎ বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে রিকশা যন্ত্রাংশসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো; শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা; । দেশের অর্থনৈতিক ও মানবিক বিবেচনায় ব্যাটারিচালিত যানবাহনের পুঁজিকে নিরাপদ করে পর্যায়ক্রমে প্যাডেলচালিত বাহনের অমানবিক শ্রম থেকে মানুষকে মুক্ত করা।
‘শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শোষণহীন রাষ্ট্র গড়ো’-এই স্লোগানকে সামনে রেখে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে উন্মুক্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে আব্দুল কুদ্দুসকে সভাপতি ও আব্দুল হাকিম মাইজভান্ডারিকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আরএস