ঢাকা: আর মাত্র নয়দিন বাকি। ঋতুরাজ বসন্ত আসছে। মৃদু মন্দ হিল্লোল বাতাস বইতে শুরু করেছে। বাগানে ফুটতে শুরু করেছে পলাশ, শিমুল, ডালিয়া আর আমের মুকুল। ঝড়তে শুরু করেছে গাছের শুকনো পাতা। আর কয়দিন পরেই বসন্তের রঙে রঙীন হবে প্রকৃতির রং। রমনায় শোনা যায়, কোকিলের কুহু কুহু ডাক। কোকিলের ডাকই জানান দেয় বসন্তের আগমনের আগাম বার্তা।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশেও ষড়ঋতুর আদি চিরচেনা বৈশিষ্ট্যগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। এলোমেলো খেয়ালি রুক্ষ রুদ্র আচরণ করছে আবহাওয়া-জলবায়ু। মানুষ, পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতির ওপর পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব প্রতিক্রিয়া।
প্রকৃতি থেকে শীত বিদায় নিতে শুরু করেছে। গরমের আগমনী বার্তাও টের পাওয়া যাচ্ছে। মেঘমুক্ত নির্মল নীল আকাশ। দিনের বেলায় ঠা ঠা রোদ পড়তে শুরু করেছে। সূর্যের তেজ শুরু হয়েছে। শেষ রাতে শীতল আমেজ। ভোর বেলায় কুয়াশা ঝরছে হালকা কিংবা মাঝারি।
এদিকে প্রাণ-প্রকৃতি রাজ্যেও আগাম চোখে পড়ছে বসন্তের আমেজ। পলাশ ফুটতে শুরু করেছে। পলাশ ফুলের মধু পান করতে আসছে কাঠ বিড়ালী। ডালিয়া ফুলে বসছে মৌমাছি আর কালো ভোমর। শিমুল গাছের ডালে ডালে রক্তিম আভা ছড়িয়ে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। পরাগ রেণুর গন্ধে বিভোর হয়ে ভন ভন করছে কালো ভ্রমর। রঙিন পাখা মেলেছে হরেক প্রজাপাতি। রমনায় দেখা গেছে সানবার্ড।
ঋতুরাজ বসন্ত বাঙালি আর বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নিয়ে আসে প্রেম ও বিদ্রোহের যুগল আবাহন। এমনই এক বসন্তে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা কারাগারে ‘ধূমকেতু’ প্রকাশের কারণে দেশদ্রোহের অভিযোগে আটকে রেখেছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন ‘বসন্ত’ নামক গ্রন্থটি তাকে উৎসর্গ করে প্রকাশের মাধ্যমে নজরুলের সঙ্গে নিজের একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নজরুল সে গ্রন্থ পাওয়ার পর রচনা করেছিলেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘প্রলয়োল্লাস (আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে)’। দুই কবির ঐক্যবন্ধনে প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পেয়েছিল পরাধীন জনগোষ্ঠী। আমাদের চেতনায় ভাস্বর মাতৃভাষার আন্দোলন তুঙ্গে পৌঁছেছিল এই কৃষ্ণচূড়া-পলাশ ফোটার বসন্তকালে। মহান গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব অসহযোগ আন্দোলনও দানা বেঁধেছিল বসন্ত ঋতুতে। স্বাধীন বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের দাবিতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বার বার পথ খুঁজে পেয়েছে বসন্তকালে। বসন্ত তাই বাঙালির জীবনে বাঁধনহারা হয়ে সৃষ্টির উল্লাসে প্রেমের তরঙ্গে ভাসার সময়। তাই নজরুলের কলম থেকে বেরিয়ে আসে, ‘এল খুলমাখা তূণ নিয়ে/ খুনেরা ফাগুন …’। আর কবিগুরুও লেখেন, ‘হাসির আঘাতে তার/ মৌন রহে না আর,/ কেঁপে কেঁপে ওঠে খনে খনে।