কৃতিত্ব চাই না, শহিদদের তালিকা জাতীয় সম্পদ: জামায়াতের আমির
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩০ | আপডেট: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩০
ঢাকা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই আন্দোলনের ছয় মাস হয়ে গেল তবু জাতি একটি শহিদদের তালিকা হাতে পায়নি। যেই কাজটা সরকার করার কথা ছিল, সেটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে করা হয়েছে। এ জন্য কৃতিত্ব চাই না। শহিদদের এই তালিকা একটি জাতীয় সম্পদ। এটি দেশের মানুষের জন্য একটি ইতিহাস।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ২৪ এর আন্দোলনে জুলাই শহিদের তালিকা সম্বলিত ১০ খন্ডের বইয়ের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমিরে জামায়াত এসব কথা বলেন।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব ছাড়াও সারাদেশের বিভাগীয় আট শহরে এবং গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা প্রেসক্লাবে একযোগে অনলাইনের মাধ্যমে বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করা হয়। ১০ খন্ডের এই বইগুলোতে সারাদেশের ৭৭০ জন শহিদের নাম স্থান পেয়েছে। বইয়ে শহিদদের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাজের সঙ্গে সংযুক্ত সংশ্লিষ্টরা।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের তালিকা করা হয়নি। এর আগে ১৯৫২ সালের শহীদদেরও পুর্ণাঙ্গ তালিকা করা হয়নি। এরপর ১৯৯০ এর গণ অভ্যূত্থানে নিহতের তালিকাও সঠিকভাবে করা হয়নি। কিন্তু ২০২৪ এর জুলাই আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের তালিকা প্রণয়ণের কাজ থমকে আছে। সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু দল হিসেবে জামায়াতের একটি নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। সে জন্য শহিদদের সঠিক তালিকা প্রণয়নের জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল।
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা এই কাজ চলমান রেখেছি তবে শহিদ পরিবারগুলো যেন শক্তি পায় সে জন্য প্রাথমিকভাবে দুই হাজার ৫০০ পৃষ্টার ১০ খন্ডের শহিদের বিস্তারিত বইয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। আজ সেগুলোর মোড়ক উম্মোচন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আরও বই প্রকাশ করা হবে।
সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র এখনো পায়নি শহিদ পরিবার। পৃথিবীর সকল বিপ্লবের ঘোষণাপত্র রয়েছে। শহিদের তালিকা রয়েছে কিন্তু সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। ৫ আগস্টকে জাতীয় ছুটির তালিকায় এনে জাতীয় দিবস ঘোষণা করতে হবে। শহিদদের স্মৃতি ফাউন্ডেশন করতে হবে। শহিদদের পরিবারগুলোর পাশে দাড়াতে হবে। আন্দোলনে আহতদের পাশে দাড়াতে হবে। তাদের উপযুক্ত সহায়তা দিয়ে উন্নত চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
শহিদ আবু সাইদের বাবা গাজিউর রহমান রংপুর থেকে সংযুক্ত হয়ে বলেন, ৭১ এর স্বাধীনতার পর মাত্র চার বছরের মাথায় কিভাবে শেখ মুজিবুর রহমান এক দলীয় শাসন কায়েম করেন। ৭৪ এ দুর্ভিক্ষ নামে। তখন তো বিএনপি বা জাতীয় পার্টি ছিল না। তাহলে ওই সময় কেন গুম খুনে লিপ্ত ছিলেন শেখ মুজিব। একই স্টাইলে তার মেয়ে শেখ হাসিনা গুম খুনে লিপ্ত হয়। আয়না ঘর তৈরি করে। গুম করে, খুন করে, গুলি চালায়।
নাসিব রায়হানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংস্কার আর বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আমরা আবারও আন্দোলনে নামব। ফ্যাসিস্ট সরকারের যে ভয়ানক রুপ আমরা দেখেছি তা পুনরায় বাংলার মানুষ দেখতে চায় না।
শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দীর্ঘ দিন পুরো পরিবার ট্রমায় ছিলাম। ফাইয়াজের মা এখনো অসুস্থ। আমরা এখন ঘুরে দাড়িয়েছি কেন জানেন, এত ত্যাগের পরও আমরা ভারতের তাবেদারি থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। দ্রুত নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছে অনেকে। শহিদরা কি চেয়েছিলেন, কেন বুক পেতে দিয়েছিলেন, তারা চেয়েছিল ব্যাংক লুট হবে না, দুর্নীতি হবে না, গুম খুন হবে না। এই দেশটা যাতে শান্তিতে থাক। তিনি শেখ হাসিনাকে অনলাইনে ভাষণ নয় বরং ভারত থেকে দেশে আসুন। সরারসি কথা বলতে আসুন। আপনাকে বিচারের কাটগড়ায় সবার আগে দাঁড় করানো হবে।
ইমাম হাসান তাইনের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, যাত্রাবাড়ীতে যাকে গুলি করছে পুলিশ, আর একজন গুলিবিদ্ধ সেই ছেলেটিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, পুলিশ আবারও গুলি করছে, সেই গুলিবিদ্ধ ছেলেটিই হচ্ছে ইমাম হাসান তাইন। আর তার ভাই আমি। আপনারা দেখেছেন কতটা নির্মমভাবে মায়ের সন্তানদের গুলি করে হত্যা করেছে। এত হত্যার পর কিভাবে বিচার না করে ভোটের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে কেউ কেউ। ভোট হবে তবে বিচারের আগে নয়। গণহত্যার বিচার আগে এরপর ভোট।
নেফাজত নেতা মামুনুল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়নি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ভাতা নিয়ে কাড়াকাড়ি করা হয়। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর ৬ মাস হয়ে যাচ্ছে। আজকে পলায়নরত নেত্রী নাকি অনলাইনে বক্তব্য দেবেন। তিনি মাঝে মধ্যেই বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, আমার কি অপরাধ। ওনি খুঁজে পান ওনার কি অপরাধ। আমরা কোরআন থেকে জানি, ইবলিসকে যখন বিতারিত করলেন, তখন ইবলিশ আল্লাহকে বলেছিলেন, আমার কি অপরাধ। এতবড় হত্যাকাণ্ড ঘটল যার নির্দেশে আর তিনি জানেন না, এর চেয়ে জঘন্য অপরাধ আর কি হতে পারে।
সারাবাংলা/ইউজে/ইআ