জ্বালানি খাতের দুর্নীতি তদন্তে গণট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব করেছে বাপা-বেন
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:১০ | আপডেট: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৪
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে আয়োজিত ‘কয়লা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: অভিজ্ঞতা কি বলে’- শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) – ছবি : সারাবাংলা
ঢাকা: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বিগত হাসিনার সরকারের আমলে জ্বালানি খাতের লুটপাট ও দূর্নীতির তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে গণ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জ্বালানি খাতের লুটপাট ও দুর্নীতি তদন্ত করে দ্রুত বিচারের সুপারিশ করেন তিনি।
বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে আয়োজিত ‘কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: অভিজ্ঞতা কি বলে’- শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এমন সুপারিশ করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জাতীয় সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে বর্তমান সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সেমিনারে অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ফসিল ফুয়েলের দীর্ঘ মেয়াদী সুফল নেগেটিভ। কয়লা এর মধ্যে অন্যতম। অপর দিকে গ্যাসে জ্বালানি উৎপাদনে নেট বেনিফিট অনেক বেশী ও পরিবেশ সহনশীল। তাহলে কেন আমরা গ্যাস এর পরিবর্তে কয়লা ভিত্তিক প্রকল্প চালু করেছি একের পর এক। গত সরকার সেটিই করেছে, দেশের পরিবেশ ধ্বংস করেছে দেশের টাকা লুটপাট করেছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ফুলবাড়িতে হত্যার শিকার হয়েছে অনেক নিরিহ মানুষ। কিন্তু এখন আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই আমাদের গ্যাস অনুসন্ধান করতে হবে। কম ক্ষতি করে এমন পরিবেশ বান্ধব জ্বালানির উৎস খুঁজে বের করতে হবে।
মোহাম্মদ মোক্তারুজ্জামান বলেন, সিইজিআইএস এর টিম রামপালের পানি, মাটি পরীক্ষা করে পরিবেশের জন্য বড় ক্ষতিকর কোন লক্ষণ পায় নি। তিনি বলেন এই পরীক্ষাগুলো আমরা দেশের বুয়েট এবং সাইন্স ল্যাব থেকে করা হয়েছে। তবে কয়লা পোড়ালে পরিবেশের ক্ষতি হবে- এটা নিশ্চিত। ফ্লাই এ্যাশ ও সালফারের যে পরিমাণ ক্ষতির কথা বলা হচ্ছে, তা নয়। সেখানকার সকল ইক্যুইপমেন্ট সচল রয়েছে কোনটাই অকেজো নয়।
সিইজিআইএস এর প্রতিবেদন এর প্রেক্ষিতে খুলনা বাপা প্রতিনিধি এডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, সিইজিআইএস এর প্রতিবেদন প্রকৃত অর্থেই এর বিপরীত। সিইজিআইএস এর টিম যখন যায়, তখন তাদেরকে সব স্থান পরিদর্শন করতে নিয়ে যাওয়া হয় নাই কিংবা তারা সব স্থান ও যন্ত্রাংশ পরিদর্শন করেন নাই। সেখানকার মানুষ এখন রান্না করতে গেলে পানিতে ছাই পায়, কাপড় শুকাইতে দিলে কাপড় ছাইয়ে ভরে যায়, গাছের পাতাগুলোর উপর ছাই এর প্রলেপ পড়ে যায়। আপনারা যখন পরিদর্শনে যাবেন, তখন স্থানীয় পরিবেশবাদীদের সাথে নিয়ে যাবেন- তাহলে প্রকৃত চিত্রটা বোঝা যাবে।
মাতারবাড়ির ভুক্তভোগী মো. মহসিন বলেন, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ৫ হাজার মানুষ তাদের কৃষি ও বসতভিটা ছেড়ে আজ উদ্বাস্ত। তাদের সরকার কর্তৃক যে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার কথা ছিল, তা দুই একজন ছাড়া অধিকাংশই পায়নি। সেসময় সরকার বাস্তুহারাদের চাকরির প্রতিশ্রতি দিলেও এখন অধিকাংশই সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম। তিন ফসল জমি নষ্ট হয়েছে, চিংড়ি চাষের জমি ও লবন চাষের জমি এবং কোহেলিয়া নদী ধংস করা হয়েছে।
পায়রা এলাকার ভুক্তভোগী জেএম মাহবুবুল আলম বলেন, পায়রা এলাকার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস মাছ শিকার ও কৃষিকাজ। এখন দুটিই নষ্ট হয়েছে। জেলেরা মাছ ধরতে গেলে মাছ পায় না। জমিতে ফসল ফলাতে গেলে আগে যে পরিমাণ ফলন হতো, এখন তা হচ্ছে না। মানুষের শরীরে বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে, অনেক সময় ওষধেও কোন কাজ হয় না।
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার ভুক্তভোগী এসএম সবুর রানা বলেন, বাংলাদেশের রক্ষাকবজ সুন্দরবন। সেই সুন্দরবনে করা হয়েছে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর ফলে সেখানকার বন ধংস হয়েছে। বনের প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। সুন্দর বনের সাথে যাদের জীবন জীবিকা জড়িত তারা আজ মানবেতর দিনাতিপাত করছে। নদী ও খালগুলোতে মাছ পাওয়া যায় না, এলাকাটা সবসময় ধোয়াচ্ছন্ন থাকে, মৌয়ালীরা মধু পায় না, মাছের প্রজনন নষ্ট হয়েছে, বন্যপ্রাণীর সংখ্যা অনেক কমেছে।
এই সেমিনার থেকে ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- জ্বালানি খাতের নীতি বিষয়ক একটি কমিশন গঠন করা; উচ্ছেদের শিকার স্থানীয় জনগনকে তাদের প্রকৃত অর্থ প্রদান; সন্তোষজনক বিকল্প জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা; কয়লা থকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর গুরুত্ব দেওয়া; দেশের ভেতর জাতীয় সক্ষমতার অধীনে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানো;
দেশজুড়ে বিস্তৃত মাঝারি আকারের সরকারি এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দক্ষ সমাহারের মাধ্যমে স্থায়িত্বশীল জ্বালানী ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা বিধান করা এবং গণ ট্রাইবুনাল করে জ্বালানী খাতের লুটপাট ও দুর্নীতির তদন্ত করে দ্রুত বিচার করা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আরএস