ফাঁক-ফোকর গলে বইমেলায় ঢুকছে হকার
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:১০ | আপডেট: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:১৪
বয়স ১৩ কিংবা ১৪। নাম তানিশা। ঢাকার নাজিরা বাজার থেকে বইমেলায় প্রতিদিন আসেন। গলায় ঝুলানো ঝুড়িতে করে বিক্রি করেন হরেকরকম চকলেট। বেচা-বিক্রি বেশ ভালোই। প্রতিদিন দেড়-দুই হাজার টাকার মতো বিক্রি হয় তার। লাভও বেশ ভালো।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ঘুরে ৪০-৫০ জন হকারের দেখা মিলল। সেইসঙ্গে দেখা মেলে কিছু ভিক্ষুকেরও। দেখা গেছে, হকারদের কেউ ঝাল মুড়ি, কেউ বাদাম, কেউ চা-কফি কিংবা ফুল বিক্রি করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো বইমেলায় তানিশার মতো ভাসমান হকাররা ঢুকল কীভাবে?

হকারদের সঙ্গে ঢুকে পড়ছে ভিক্ষুকও। ছবি: সারাবাংলা
‘তোমরা কীভাবে মেলায় ঢোকো? পুলিশ বা আনসার তোমাদের কিছু বলে না?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তানিশা সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনে কি সাংবাদিক? তাহলে তো বলব না।’ এমন উত্তর দিয়ে সরে গেল সে।
তবে সারাবাংলার এই প্রতিবেদক আরও কয়েকজন হকারের সঙ্গে পরিচয় গোপন রেখে কথা বলে। ফারুক নামের এক বাদাম বিক্রেতা সারাবাংলাকে জানান, তারা সবাই সাধারণ দর্শনার্থী হিসেবে মেলায় ঢোকেন। কেউ কিছু বলেন না। কিন্তু আপনাদের পণ্য ঢোকান কীভাবে? উত্তরে ফারুক বলেন, ‘আমাদের লোক আছে, তারাই সাহায্য করে।’

সন্ধ্যা হতেই দেখা মেলে চানাচুরওয়ালার। ছবি: সারাবাংলা
আশরাফুল নামের এক কফি বিক্রেতা জানালেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দেয়াল টপকে ঢোকেন তারা। পুলিশ বা আনসার দেখলে লুকিয়ে যান। হাওয়ায় মিঠাই বিক্রেতা তৌকির বলেন, ‘নানাভাবে লুকিয়ে মেলায় ঢুকি। অনেক সময় পুলিশ উঠিয়ে দেয়। আবার কোনো কোনো সময় কিছু বলে না। পুলিশ চাঁদা না নিলেও আনসার সদস্যদের কেউ কেউ নেন।’
বেশ কয়েকজন হকার জানালেন, তারা মূলত মেলা ছাড়া অন্য সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পণ্য বিক্রি করেন। তাই উদ্যানে প্রবেশের নানা ফাঁক-ফোকর তাদের জানা। সেসব জায়গা দিয়ে তারা সেখানে ঢোকেন। আবার কিছু হকার জানালেন, মেলায় বিভিন্ন স্টলে বই বা অন্যান্য সামগ্রী প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত ভ্যান চালকদের সহায়তায় তাদের পণ্যসামগ্রী ঢোকান।

মেলায় যেকোনো ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও হকাররা বিক্রি করছে প্লাস্টিক বোতলের পানি। ছবি: সারাবাংলা
এ বিষয়ে ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫’-এর পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল বাশার ফিরোজের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘গতকাল (৪ ফেব্রুয়ারি) আমরা পুরো মেলা ঘুরেছি। তখন কাউকে পাইনি। তবে আমরা এ বিষয়ে শুনেছি। মন্ত্রণালয়সহ পুলিশের সঙ্গে মিটিংয়ে এ বিষয়ে কথা বলেছি। আশা করছি তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে মেলায় অবস্থিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তাদের দাবি, হকাররা দেয়াল টপকে মেলায় ঢোকে। চোখে পড়লে তাদের বের করে দেন কিংবা মালামাল জব্ধ করেন।

এইসব হকাররা দেয়াল টপকে মেলায় ঢোকে। ছবি: সারাবাংলা
সারাবাংলা/এজেডএস/পিটিএম