আর্থিক অনটনে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারছেন না রওশন
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:১০
ঢাকা: জাতীয় সংসদের টানা দুইবারের প্রধান বিরোধী দলের নেতা, সাবেক ফাস্ট লেডি প্রায়ত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ আর্থিক অনটনের কারণে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। যেতে পারছেন না বিদেশ। এমন পরিস্থিতিতে দিনদিন তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হচ্ছে। সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে জীবন। বার্ধক্যজনিত কারণে শরীরে বাসা বাঁধেছে নানান ব্যাধি। এর মধ্যে তার শরীরের অক্সিজেন কমে যাচ্ছে, লিভারের সমস্যা বেড়েছে। তিনি এখন রোগে শয্যাশায়ী।
উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ব্যাংককে যেতে চিকিৎসকরা সময় বেঁধে দিলেও অর্থাভাবে যেতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্টজনরা। তারা জানান রওশন এরশাদের খোঁজখবর জাপার কেউ রাখছেন না। এমনকি তার দেবর জিএম কাদের (সেলিম) সেও খোঁজখবর নিচ্ছেন না। যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
এ সর্ম্পকে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপার মহাসচিব কাজী মামুন জানান, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা তেমন একটা ভালো না। দ্রুত বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেওয়া প্রয়োজন। তাকে বিদেশ নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তবে অর্থাভাবসহ নানান জটিলতার কারণে ব্যাংককে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি জটিলতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেননি।
জাতীয় পার্টির অপর এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, জিএম কাদের ‘অমানুষ’। এরশাদ সাহেব কাদেরকে সহ্য করতে পারতেন না। দল থেকে জিএম কাদেরকে তিনবার বহিষ্কার করেছিল জাপা প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রায়ত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। কিন্তু রওশন এরশাদের কারণে জিএম কাদেরকে পুনরায় পার্টিতে নেওয়া হয়। যখন রওশন এরশাদ পুত্রবধূ হয়ে এরশাদের রংপুর বাড়িতে গেছেন, তখন জিএম কাদের খুবই ছোট। তাকে সেলিম নামে ডাকতেন রওশন এরশাদ। রাজনৈতিক কারণে এখন দেবর-ভাবীর সর্ম্পক নেই।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রওশন এরশাদ আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। তারা বলছেন, দলের কোনো পর্যায় থেকেই সহায়তা বা সমর্থন মিলছে না। মায়মনসিংহে রওশন এরশাদের পৈতৃক ভিটা থেকে আসা সামন্য আয় দিয়ে নামমাত্র চিকিৎসা খরচ চলছে তার।
২০২১ সালের শেষার্ধে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এর মধ্যে ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে ১৪ আগস্ট তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। ওই সময় তাকে কয়েকদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেও (আইসিইউ) রাখতে হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। পরে আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ২০ অক্টোবর তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
সিএমএইচ- এ দীর্ঘ সময় চিকিৎসাতেও খুব বেশি উন্নতি না হওয়ায় রওশন এরশাদকে দেশের বাইরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেন চিকিৎসকরা। ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নেওয়া হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। সে সময় রওশন এরশাদ ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা। তিনি চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেই সংসদে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে যোগ দিতে প্রায় আট মাস পর ২০২২ সালের ২৭ জুন ব্যাংকক থেকে দেশে ফেরেন তিনি।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ওই সময় গুলশানের বাসায় ওঠেননি রওশন এরশাদ। বিমানবন্দর থেকে তাকে সরাসরি গুলশানের একটি হোটেলে নেওয়া হয়। সেখানেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার চিকিৎসা করানো হয়। ৪ জুলাই পর্যন্ত তিনি হোটেলে থাকার সময় তার চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক থেকে চিকিৎসক ও নার্স নিয়ে আসা হয়। অধিবেশন শেষে ৫ জুলাই তিনি ফের ব্যাংককে যান। দেশে ফেরেন ২৬ নভেম্বর।
এরপর থেকে রওশন এরশাদ দেশেই আছেন। মাঝে মাঝে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে ব্যাংককে গেছেন তিনি। সবশেষ গত বছরের ১০ জুলাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে ব্যাংকক যান তিনি। দেশে ফেরেন ৮ আগস্ট।
রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতেন জাপার শীর্ষ নেতারা। এমনকি জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান তার দেবর জি এম কাদেরও প্রায় প্রতিদিনই গিয়ে দেখা করতেন, কথা বলতেন নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচনের পর থেকেই আর দলের কোনো নেতার উপস্থিতি দেখা যায়নি রওশন এরশাদের বাসভবনে। কেবল জাপা রওশন এরশাদ অংশের নেতা কাজী মামুনুর রশিদ ও সাবেক ছাত্র নেতা জহির তার খোঁজখবর রাখেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এসআর
আর্থিক অনটন চিকিৎসা ব্যাহত জাতীয় পার্টি দেবর জিএম কাদের বেগম রওশন এরশাদ রওশন এরশাদ সাবেক ফাস্ট লেডি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী