নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীকে বিদায় জানাতে হাসপাতালে উপদেষ্টা
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:০৭ | আপডেট: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:২৭
ঢাকা: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নির্যাতনের শিকার কল্পনা (১৩) দীর্ঘ সাড়ে তিনমাস চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানান অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তবে আগামী রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) আদালতের মাধ্যমে কল্পনাকে বাবা মার জিম্মায় দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ঢাকা মেডিকেল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে কল্পনাকে বিদায় জানান। এ সময় তার হাতে ২৫ হাজার টাকার একটি চেক তুলে দেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, ‘শিশু নির্যাতন নিয়ে সবাইকে শক্তিশালী ভাবে কাজ করতে হবে। নির্যাতনের হার কমাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কল্পনার চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার পাশাপাশি তাদের পুর্ণবাসনের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। শিশু গৃহকর্মী কল্পনাকে নির্যাতনের কারণে তার শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। চিকিৎসকরা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে। তাদের আইনি সহযোগিতাসহ যেকোনো সহযোগিতার জন্য আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না। এখন সে পুরাপুরি সুস্থ। কল্পনা পড়াশুনা করতে চাইলে তাকে সার্বিক সহায়তা করা হবে।’
উপদেষ্টা কল্পনার মা-বাবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যদি আসামি পক্ষ কোনো প্রকার লোভ দেখায় অথবা মীমাংসার কথা বলে। আর যদি মীমাংসা করা হয় তাহলে সকল প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে।’
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মেয়েটিকে আমরা ভয়ংকর অবস্থায় পেয়েছিলাম। সে সময় রক্তশূন্যতায় ছিল, দাঁত ছিল না। শরীরের এমন কোনো জায়গা ছিল না যেখানে ক্ষত নেই। চোখে-মুখে ছিল ভয় ভীতি। কল্পনার শরীরের বিভিন্ন জখমে পুঁজ হয়ে গিয়েছিল। প্রথম অপারেশনে কেবল আধা কেজির মতো পুঁজই বের করেছি আমরা। ওর শরীর কোনো ধরনের সার্জারির জন্য ফিট ছিল না। পুঁজ বের করার পর খাওয়া-দাওয়া করানো হয় ঠিক করে।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ছিল মানসিক ভীতি। মানসিকভাবে সে ছিল বিধ্বস্ত। সেজন্য কাউন্সেলিং করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে সে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। চিকিৎসার বিষয়ে ওর মনের ভেতরে যেন কোনো সংশয় বা আক্ষেপ না থাকে। সেজন্য তাকে ছয় মাস পর আবার আসতে বলা হয়েছে।’
কল্পনা গৃহকর্মীর কাজ করত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় দিনাত জাহান আদরের বাসায়। সেখানে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় কল্পনা। এমনকি আদরের ভাই তাকে ধর্ষণ করতে চাইত বলেও অভিযোগ করেন সে। তার বর্ণনা দিতে গিয়ে কল্পনা বলেছিল, ‘কাজ না পারা বা ভুল করার অজুহাতে ছ্যাকা দেওয়া হতো হেয়ার স্ট্রেইনার মেশিন দিয়ে, পেটানো হতো লাঠি দিয়ে।’
কল্পনার বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায়। তার বাবার নাম শহিদ মিয়া ও মা আফিয়া বেগম। পাঁচ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সে পঞ্চম। আফিয়া বেগম বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে মাসে ৫ হাজার টাকা বেতনে ওই বাসায় কাজ করছিল তার মেয়ে। পরে দশ হাজার বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব টাকা তারা পেতেন না। এমনকি তাদের সঙ্গে কথাও বলতে দেওয়া হতো না। ফোন করলেই দিনাত বলত, মেয়ে ভালো আছে। তবে যখন কথা হতো, তখন দিনাত সামনে থাকত। যার কারণে নির্যাতনের কথা বলতে পারত না।’
ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর মেয়েকে মারধরের অভিযোগে মা আফিয়া বেগম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ভাটারা থানায় দিনাত জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পরপরই দিনাত এবং তার ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দুজনই এখন কারাগারে আছেন।
সারাবাংলা/এসএসআর/এইচআই