বইমেলায় ‘দৃষ্টিজয়ী’দের নিয়ে একমাত্র স্টল
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১১ | আপডেট: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৬
ঢাকা: অমর একুশে বইমেলায় স্থান পেয়েছে অসংখ্য বই। সেখানে যেমন রয়েছে সাহিত্য, গবেষণা, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী কিংবা রাজনৈতিক বই তেমনি রয়েছে খাবারের দোকানসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংগঠনের স্টল। কিন্তু দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে স্টল মাত্র একটি।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে অবস্থিত স্টলটির নাম ‘স্পর্শ ফাউন্ডেশন’। তারা মূলত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ‘ব্রেইল’ পদ্ধতিতে বই প্রকাশ করেন।
স্টলটির সামনে তিন বোন এসেছিল মিরপুর থেকে। ছোট্ট শিশু তারিন ব্রেইলে প্রকাশিত বইগুলো দেখছিল। খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো এগুলো কীভাবে পড়ে।
স্টলের বিক্রয়কর্মী ঊষা তারিনকে বুঝিয়ে দিলেন কীভাবে বইটি পড়তে হয়। বলেন, বিভিন্ন ডটের মাধ্যমে বইগুলো পড়তে হয়।
ঊষা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ থেকে বইমেলায় বই প্রকাশ করে। তারা প্রতি বছর বই প্রকাশ করে। এ বছর তারা ৮টি বই প্রকাশ করছে। এগুলোর সবই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ফ্রিতে দিচ্ছেন তারা। এর জন্য ফ্রিতে তাদের প্রতিষ্ঠানে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়।’
প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা সদস্য রবিউল হাসান সারাবাংলাকে জানান, তারা এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক ব্রেইল বই প্রকাশ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জাবীনের ২০০৮ এর দিকে প্রথম বই প্রকাশিত হয়। তার বইটি একজন অন্ধ শিশু উলটে পালটে দেখছিল। বিষয়টি তার মনে দাগ কাটে।
তিনি আরও জানান, তারা এখন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, সৈয়দ শামসুল হক, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, হুমায়ুন আহমেদ, সেলিনা হোসেনসহ অনেক লেখকের বই তারা ব্রেইলে রূপান্তর করেছেন। এ ছাড়া তারা নাজিয়া জাবীনের লেখা দেশের প্রথম ব্রেইল বই ‘ছড়ার তালে আমার মনটা দোলে’। ছড়ার এ বইটি ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমির সহায়তায় প্রকাশিত হয়। এটি ছাপানো হয় সরকারি ব্রেইল প্রেস থেকে। উল্লেখ্য দেশের একমাত্র ব্রেইল প্রেসও এটি।
তারা ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী’ বলতে নারাজ। তাই ‘দৃষ্টিজয়ী’ বলেন। ব্যাখ্যায় বলেন, ‘চোখের আলো না থাকলেও তারা মনে আলো দিয়ে পুরো জগতকে দেখেন। আর তাই দিয়েই সব কাজ একজন সাধারণ মানুষের ন্যায় করেন। তাই তারা ‘দৃষ্টিজয়ী’।’
স্পর্শ ফাউন্ডেশন মাসিক ১৭০০ টাকা করে এসব দৃষ্টিজয়ীদের ভাতা দিয়ে থাকে।
স্টলে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আরিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার আমাদেরকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতিতে বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্রেইল বই নেই। যার কারণে আমাদেরকে অডিও বুকের সাহায্য নিতে হয়। এতে করে আমরা সঠিক বানান শিখতে অসুবিধায় পড়ি।
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু পাঠ্য বই না, বিভিন্ন লেখকের বই তারা পড়তে চান। কিন্তু দেশে খুব পাওয়া যায় না। তাই অন্যান্য প্রকাশকদের কাছে অনুরোধ তারা যেন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেন।’
সারাবাংলা/এজেডএস/এইচআই