ঢাকা: অপরিকল্পিত প্রকল্প নেওয়ার খেসারত হিসেবে অপচয় হয়েছে জনগণের বিপুল অংকের টাকা। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় কয়লাভিত্তিক ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলেও সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর হচ্ছে না। উপরন্তু অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত ২৫২ একর জমি যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ‘ল্যান্ড এ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফর ইমপ্লিমেন্টেশন অব গজারিয়া ৩৫০ মেগাওয়াট কোল ফায়ার্ড থারমাল পাওয়ার প্ল্যান্ট’ শীর্ষক প্রকল্পে দেখা গেছে এমন চিত্র।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, এক্ষেত্রে শুধু অর্থের অপচয় বললে ভুল হবে। এখানে সময় ও শ্রমেরও অপচয় হয়েছে। কেননা, ওই সময় দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তা না করে হুটহাট করে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পগুলোর ঠিক মতো সম্ভাব্যতা সমীক্ষাই করা হয় না। বিশ্বের অনেক দেশ যখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিচ্ছে, সেখানে আমরা এ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। এটা একটি অপরিনামদর্শী ও অপরিকল্পিত প্রকল্প। তবে যাই হোক, জমি যেহেতু নেওয়া হয়েছে, সেটি অন্য কোন উৎপাদনশীল কাজে লাগানো উচিত। ভবিষ্যতে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদুরপ্রসারী চিন্তা করতে হবে।
আইএমইডি জানায়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মিটাতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রুরাল পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল।
গত ২০১৬ সালের ১৪ জুন অনুষ্ঠিত একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী মোট প্রকল্প ব্যয় হচ্ছে ৫০৪ কোটি ২৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। প্রাথমিক অবস্থায় প্রকল্পের শুরুর তারিখ ছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই এবং প্রকল্পের সমাপ্তির তারিখ ছিল ২০১৮ সালের ৩০ জুন। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণে স্থানীয় জনগণের বাধা ও স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যার কারণ ভূমি অধিগ্রহণ দেরি হয়েছে। ২০১৮ সালের
২৯ মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় মুন্সিগঞ্জ হতে ভূমি হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে সরেজমিনে কাজ শুরু করতে গেলেও প্রথম দিকে স্থানীয় বাধার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। পরে ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে সরেজমিনে কাজ শুরু করা হয় অর্থাৎ অনুমোদিত মূল মেয়াদের মধ্যে কোন কাজই শুরু করা যায়নি। এজন্য প্রকল্পটির মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া ১ বছর বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে ডিপিপি সংশোধন করে মেয়াদ ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
আইএমইডি বলছে, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল ৩৫০ মেগাওয়াট কোল ফায়ার্ড থারমাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণকরা। সেজনই ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হলেও ৩৫০ মেগাওয়াট কোল ফায়ার্ড থারমাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ না করায় এবং মূল প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় অধিগ্রহণ করা ও উন্নয়ন করা ২৫২ দশমিক ৫৬ একর ভূমি বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। সরকারের অনুমোদনক্রমে সংশ্লিষ্ট জমিতে অন্য কোন জ্বালানি কিংবা নবায়ন যোগ্য জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া অধিগ্রহণ করা ও উন্নয়ন করা ভূমির রক্ষার স্বার্থে জরুরীভিত্তিতে ভূমির চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা এবং দেখভাল করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার বা আনসার নিয়োগ করা প্রয়োজন।