বাজারে সহজে মিলছে না সয়াবিন তেল
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩২ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:১০
ঢাকা: রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা খ্যাত মতিঝিল সংলগ্ন গোপীবাগে ১৫ থেকে ২০টি ছোট-বড় মুদি দোকান রয়েছে। এসব দোকানের প্রায় সব গুলোতেই বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়। পাওয়া যায় টিনের কন্টেইনারও। কিন্তু সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে অধিকাংশ দোকানেই সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। যে কয়েকটিতে পাওয়া গেছে, সেগুলোও বোতল প্রতি ৫ টাকা বেশি দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। মুদি দোকানিরা বলছেন, শুক্রবার থেকে তেলের সরবরাহ বন্ধ। ডিলারদের কাছে গিয়ে তেল পাওয়া যায়নি। যা ছিল তা গত দুই দিনে বিক্রি হয়ে গেছে। এ জন্য কাস্টমারকে পণ্য দেওয়া যাচ্ছে না।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে গোপীবাগ এলাকার মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানে সয়াবিন তেল নেই।
সালাম ইকোনমিক সেন্টারের ম্যানেজার নাসির সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকেই তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) তেলের জন্য ডিলারের কাছে গিয়েছিলাম। সেখানে তেল নেই। রোববার পাঠাবে বলেছিল। আজও আসেনি। গত সপ্তাহ ধরেই তেলের সংকট। ১ লিটারের বোতল দীর্ঘ দিন ধরে নেই। দুই লিটারের বোতলের দাম ডিলার থেকেই ৫ টাকা করে বেশি রাখছে। এদিকে কাস্টমার তেলের জন্য মাথা খারাপ করে ফেলছে। কাউকে দিতে পারছি না। দাম বাড়ানোর থাকলে বাড়িয়েও সাপ্লাই দিক। সেটাও তো দিচ্ছে না।’
![](https://sarabangla.net/wp-content/uploads/2025/02/salam-center.jpg)
সালাম ইকোনমিক সেন্টার। ছবি: সারাবাংলা
দেলোয়ার ডি. স্টোরের ইকবাল বলেন, ‘সকালেও ছিল ৫ ও ২ লিটারের কয়েকটা বোতল দোকান খুলতেই শেষ। সচরাচর মানুষ এক এবং দুই লিটারের বোতলই খোঁজে। যে কারণে বড় বোতল ভেঙে বিক্রি করতে হয় কখনো কখনো। কিন্তু গত দুই দিন ধরে পুরো বোতলই বিক্রি হয়েছে। আমি জানি না সয়াবিনের সংকট কি না। তবে আপাতত আমার কাছে নেই। দুপুরে ডিলারের কাছে যাব তেল আনতে তখন বলতে পারব।’
বিসমিল্লাহ স্টোরের শফিকউল্লাহ বলেন, ‘তেল তো দুই দিন আগেই শেষ। ডিলাররাও দিতে পারছেন না।’
তবে সুমন মুদি মনোহরি দোকানে দেখা যায়, কিছু বোতলজাত তেল রয়েছে। তবে প্রতি বোতলে ৫ টাকা করে দাম বেশি। বেশি দামের কারণ জানতে চাইলে দোকানদার জানান, ডিলার বাড়িয়েছে।
এই বেশি দামেই তেল কিনছেন ক্রেতারা। একজন ক্রেতা নির্মল চন্দ্র দে বলেন, ‘পুরো গোপীবাগ ঘুরে এই দোকানে তেল পেলাম। দেখেন এক লিটারের বোতলে পাঁচ টাকা করে বেশি রাখছে। এটা জুলুম না? রোজার আগেই যদি এমন মুনাফার চিন্তা করে তাহলে রোজা এলে এরা কী করবে?’
শুধু গোপীবাগ না, সয়াবিন তেল মিলছে না আশে পাশের হাটখোলা, রাজধানী সুপার মার্কেট, গোপীবাগ রেল লাইন বাজারসহ মতিঝিলের আশেপাশের খুচরা বাজারগুলোতে।
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো তেলের সরবরাহ কমিয়েছে। এর আগে, গত ডিসেম্বরেও সরবরাহ কমিয়ে এক দফা দাম (লিটারপ্রতি ৮ টাকা) বাড়িয়েছিল কোম্পানিগুলো। আসন্ন রমজানের আগে আরও এক দফা দাম বাড়ানো হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
![](https://sarabangla.net/wp-content/uploads/2025/02/gopibag.jpg)
ছবি: সারাবাংলা
নানা মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন রাজধানীর বেশিরভাগ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না বললেই চলে। আর কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও সেগুলোর গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি রাখছেন বিক্রেতারা। আর এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা। ক্রেতা ধরতে অনেক বিক্রেতা এখন খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি শুরু করেছেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম যেমন বাড়েনি, তেমনি নেই সংকট। এমন তথ্য সরকারের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) কার্যালয়ে রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) ভোজ্যতেলের সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিটিটিসি জানায়, বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো ঘাটতি নেই। যেটি হয়েছে তা কৃত্রিম সংকট এবং প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থেকে তা সৃষ্ট।
কাস্টমসের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভোজ্যতেলের আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। ঋণপত্রও বেড়েছে একই হারে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে প্রতি কেজি সয়াবিন তেলে ৮ টাকা বাড়িয়েছিল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার তেল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে। এতে প্রতি কেজি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক কর ১০ থেকে ১১ টাকা কমেছে। এরপরও দাম কমেনি। বরং বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট তৈরি করেছে কোম্পানিগুলো।
সারাবাংলা/জেআর/ইআ