চট্টগ্রামে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫৭ | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান মোড়। ট্রাকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ন্যায্যমূল্যে বিক্রির পণ্য। ট্রাকের পেছনে মানুষের লম্বা সারি। কোলের সন্তান নিয়ে নারী, মধ্যবয়সী পুরুষ থেকে বৃদ্ধা, তরুণ-যুবক, সারিতে দাঁড়িয়ে শত, শত মানুষ। কেউ কেউ ভোর থেকেই দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ বা সকাল গড়াতেই এসে দাঁড়িয়েছেন লাইনে। টাকা দিয়ে বুঝে নিচ্ছেন টিসিবির ন্যায্যমূল্যের নিত্যপণ্য।
এ দৃশ্য মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর জামালখান মোড়ের। চট্টগ্রাম নগরীতে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির শুরুতেই এভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিড় করছেন বিভিন্ন পয়েন্টে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু করেছে।
টিসিবি’র কর্মকর্তারা জানান, প্রতি ওয়ার্ডে একটি পয়েন্ট ধরে প্রতিদিন ২০টি পয়েন্টে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি পয়েন্টে ২০০ জনের কাছে বিক্রির মতো পণ্য নিয়ে থাকছে একটি ট্রাক। প্রতি পয়েন্টে ৪০০ কেজি করে মসুর ডাল ও ছোলা, ২০০ কেজি চিনি, ১০০ কেজি খেজুর এবং ৪০০ লিটার করে তেল সরবরাহ করছে টিসিবি।
সোমবার প্রথমদিনে নগরীর এক নম্বর থেকে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ২১ নম্বর থেকে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে।
নগরীর জামালখান ও আন্দরকিল্লা মোড়ে টিসিবির পণ্যের ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে আসা কেউ কেউ ভোরেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। শুধু নিম্ন আয়ের মানুষই টিসিবির পণ্য কিনছেন, এমন নয়। ক্ষুদ্র-মাঝারি দোকানি, রিকশা-অটোরিকশার চালক, কারখানার শ্রমিক, আবার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্কুলশিক্ষক, বিভিন্ন ছোটখাট বেসরকারি কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও দেখা গেছে লাইনে।
নগরীর জেল রোডের বাসিন্দা বেগম ফয়জুন্নেছা। মধ্যবয়সী এ নারী আন্দরকিল্লা মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন ভোর ৬টা থেকে। তিনি সারাবাংলাকে জানান, ভোর ৬টায় এসেও তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছেন অন্তত ৩০ জনের পরে। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বুঝে নিয়েছেন পণ্য।
নগরীর জামালখান মোড়ে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে পণ্য কেনেন লিচুবাগান গলির বাসিন্দা গৃহিণী রিংকু সেন। তিনি সারাবাংলাকে জানান, সকাল সাতটার দিকে তার স্বামীকে প্রথমে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে যান। কিন্তু তিনি অসুস্থ হওয়ায় বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেন না, এ জন্য ঘণ্টাখানেক পর আবার রিংকু নিজেই এসে দাঁড়ান। তিনি বলেন, ‘আগে ফ্যামিলি কার্ড দেখে মাল (পণ্য) বিক্রি করত। এখন সবার জন্য ওপেন করে দিয়েছে, এ জন্য ভিড় বেশি।’
নগরীর জামালখানের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের এক শিক্ষিকাও লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। আবার বেসরকারি বীমা কোম্পানিতে ‘এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করা প্রায় ৪৫ বছর বয়সী একজনের দেখা মিলেছে আন্দরকিল্লার মোড়ে। উভয়ই জানালেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য তাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। এ জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য কিনতে মানুষের কষ্টবোধ হচ্ছে না।
একজন ভোক্তা টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাক থেকে যেসব পণ্য কিনতে পারছেন, সেগুলো হলো- প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে ২ কেজি মসুর ডাল, ৭০ টাকা দরে ১ কেজি চিনি, প্রতি লিটার ১০০ টাকা দরে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৬০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি ছোলা এবং ৭৭ টাকা ৫০ পয়সা দিয়ে ৫০০ গ্রাম খেজুর পাওয়া যাবে। মোট ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় পাওয়া যাচ্ছে সম্পূর্ণ প্যাকেজ।
জামালখান মোড়ে মধ্যবয়সী মো. বাশার পণ্য কিনতে পেরে খুবই উচ্ছ্বসিত। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে তো সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এখান থেকে নিলাম। ট্রাকে তেলের দাম কম। চিনি, ডালও খুবই কাজে লাগবে। ৫৮৭ টাকা দিয়ে যতগুলো পণ্য কিনলাম, বাজার থেকে কিনলে ডবল লাগত।’
টিসিবি, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মানুষ খুবই উৎসাহ নিয়ে টিসিবির পণ্য কিনছেন। কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পণ্য আমরা ট্রাকে দিচ্ছি, লাইনে দাঁড়ানো সবাই পাচ্ছে। আমাদের কাছে পণ্যের মজুতও পর্যাপ্ত আছে। শবে কদর পর্যন্ত আমরা এ নিয়মে পণ্য বিক্রি করব। সামনে পণ্যের তালিকায় চালও যুক্ত হবে।’
টিসিবির এ কর্মকর্তা আরও জানালেন, প্রতিদিন নগরীর ২০টি পয়েন্ট ধরে সপ্তাহের ছয়দিন মোট ১২০টি পয়েন্টে টিসিবি পণ্য বিক্রি করছে। এ হিসেবে প্রতিটি পয়েন্টে টিসিবি সপ্তাহে একবার করে পণ্য বিক্রি করছে। শুরুর দিকে কোথাও কোথাও ভিড় বেশি হলেও সপ্তাহখানেক পর সেটা কমে আসবে বলে মনে করছেন তিনি।
সারাবাংলা/আরডি/এইচআই
চট্টগ্রাম টিসিবি টিসিবি পণ্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)