Monday 21 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘অন্ধাকারে’ থাকা জাপা নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:১২ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:২৭

জাতীয় পার্টি। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ’৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর থেকেই জাতীয় পার্টি (জাপা) ঠিক মতো উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি নিজেদের পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর সাহসও তারা কোনোদিন দেখায়নি। বলতে গেলে ক্ষমতার পালাবদলে জাপা সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্রীড়ানক হিসেবে কাজে লেগেছে। এর মধ্য দিয়ে দলটি প্রায় সবসময়ই ক্ষমতার বলয়ে অবস্থান করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ছিল দলটি। এমনকি তারা তাদের রাজনীতিও করতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, জাপার দলীয় সিদ্ধান্তসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো আওয়ামী লীগ। আর এই নিয়ন্ত্রণের গ্যাঁড়কলে পড়ে থাকাটাই এখন তাদের জন্য আরও ‘কাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনে জাতীয় পার্টি পূর্ণ সমর্থন ছিল। তাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাপাও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় পরামর্শের জন্য সেনাবাহিনীর ডাক পায়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সঙ্গে বিতণ্ডতায় জাপা ধীরে ধীরে সেই জায়গা হারিয়ে ফেলে। ফলে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকেও তাদের ডাকা হয় না। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে তাদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। এতে জাপার সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি। সেই দূরত্ব এখনো ঘোচেনি।

বিজ্ঞাপন

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টি বলতে গেলে অন্ধকারে। দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত। এ ছাড়া, অগোছালো জাপাকে গোছাতেও পারছেন না নেতারা। এতে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা হাতাশা। দলটির দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ছাত্র-জনতার পক্ষ নিয়ে সামনে এগোতে চেয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎও করেন। কিন্তু জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে আখ্যা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে জিএম কাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আর সাক্ষাৎ করার অনুমতি পাননি। এমনকি জাপা কাকরাইলে পার্টির প্রধান কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করলে ছাত্র-জনতা তাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর পর থেকে দলটির সবপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাই তারা গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন বলে জানা গেছে। সেইসঙ্গে আছে পার্টির মধ্যে বিভক্তি। এ কারণে তাদের আর রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, পার্টি গোছানোর জন্য জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সভা-সমাবেশ এবং নতুন কমিটি করার কথা ছিল। এ ছাড়া, গত অক্টোবরে দলটির কাউন্সিল করার কথা থাকলেও দ্বাদশ নির্বাচন ও দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কাউন্সিল করতে পারেনি। তবে বর্তমানে ঘরোয়াভাবে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছে। দ্রুতই জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়রে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময় শুরু করবে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরই দলটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পদক্ষেপও নেন কয়েকজন। তবে বিশেষ ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে দেশ ছাড়েননি তারা। বরং আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে চলে আসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন।

জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম গোপন রাখার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য কতদিন সময় নেয় তা বোঝা মুশকিল। এখন তাদের সংবিধান সংশোধন ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়া উচিত। তবে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টারা আসছে ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল চুপ থাকলে জাতীয় পার্টিও ওই পথ অনুসরণ করবে। জাতীয় পার্টি এককভাবে কোনো পদক্ষেপ নেবে না। যৌক্তিক ও কৌশলী হয়ে জাতীয় পার্টি এই দুঃসময়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।’

তবে অপর এক প্রেসিডিয়াম সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নিতে পারবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত দলটির চেয়ারম্যান। কারণ, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার রোষানলে পতিত আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি ভেঙে দেওয়ার পর থেকে পার্টির নেতাকর্মীরা বেশি আতঙ্কগ্রস্থ। সেজন্য দেশের সব জেলা-উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতারা দলীয় কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছে।

এ সব বিষয়ে জানতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আ্যডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমর এখন দল গোছাতে ব্যস্ত। সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ঘরোয়াভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দল গোছানো ও আগামী নির্বাচনের জন্য প্রার্থী খুঁজে নেওয়া হবে। কারণ যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন হবে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

জাতীয় পার্টি টপ নিউজ নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর