Tuesday 11 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রিয় মুহূর্তগুলো ক্যানভাসে তুলে আনেন তারা

আহমেদ জামান শিমুল
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪৫ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:০০

স্বল্প সময়ে ছবি আঁকেন বইমেলার শিল্পীরা। ছবি: শিমুল

প্রিয় মুহূর্তগুলো ধরে রাখা এখন মানুষের জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছে। কাউকে এখন কষ্ট করে স্টুডিওতে যেতে হয় না ছবি তুলতে, কিংবা ক্যামেরা ভাড়া নিতে হচ্ছে না। ছবি কিংবা ভিডিও এখন হাতের মুঠোয়। চাইলেই যে কোনো মুহূর্ত, স্মৃতিকে মোবাইল নামক ডিভাইসের মেমোরিতে ধরে রাখা যায়।

তবে কিছু মানুষ থাকেন আলাদা, যারা কিনা চান একটু ভিন্নতা, একটু অন্যরকমভাবে স্মৃতি ধরে রাখতে। তারা এর জন্য বেছে নেন পেশাদার চিত্রশিল্পীর। যারা কিনা তুলির ছোঁয়ায় কিংবা পেন্সিলের লিডের কালিতে তুলে আনেন প্রিয়জনের সুন্দর মুখায়ব। আর তা যদি হয় স্বল্পমূল্যে তাহলে তো কথায় নেই। এমনই চিত্রশিল্পীদের দেখা মিলবে বইমেলায়।

বিজ্ঞাপন

যত্ন নিয়ে ক্যানভাসে ছবি আঁকেন শিল্পীরা। ছবি: শিমুল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনের গেট গিয়ে মেলায় প্রবেশ করার পর দেখা মিলবে পেশাদার চিত্রশিল্পীদের। যারা কিনা আপনাকে সামনে বসিয়ে মাত্র ১৫-২০ মিনিটে এঁকে দিবে আপনার ছবি। আর এর জন্য খুব বেশি অর্থমূল্য সম্মানী হিসেবে দিতে হবে, তা না। মাত্র ৬০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা।

পিছনে নিজেদের আঁকা কয়েকটি ছবি। সামনে দুটি বা তিনটি চেয়ার ও একটি ক্যানভাস। এক পাশে টাঙ্গানো পোস্টারে লেখা, এখানে ১০-১৫ মিনিটে ছবি আঁকা হয়। আরেকটি পোস্টারে লেখা রয়েছে ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের ক্যানভাসে ছবি আঁকার পারিশ্রমিকের তালিকা।

ফারুক-আসমা দম্পতির ছবি আঁকছেন মনজুরুল হক। ছবি: শিমুল

মেলায় ঘুরতে আসা অনেকের চোখ পোস্টারগুলোর দিকে আটকে যায়। তেমনি ফারুক হোসেন-আসমা আক্তার দম্পতি বসেছিলেন এক শিল্পীর সামনে। ফারুক ব্রুনাই প্রবাসী। ছুটিতে দেশে এসেছেন। প্রথমবারের মত সঙ্গীনীকে নিয়ে মেলায় এসেছেন। কিছু বই কিনে ফিরে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে ছবির আঁকার পোস্টারগুলো। তিনি বলেন, ‘টাঙানো ছবিগুলো দেখে বেশ ভালো লাগলো। তাই আমার স্ত্রীসহ একটা ছবি আঁকানোর জন্য বসে পড়লাম। এটা একটা অন্যরকম স্মৃতি হয়ে থাকবে জীবনে।’

বিজ্ঞাপন

পুরো মেলায় এবার ২৪ জন শিল্পী এভাবে ছবি আঁকার সার্ভিস অফার করছেন। তবে এটি সর্বপ্রথম শুরু করেছিলেন ১৯৯০ সালে শিল্পী মনজুরুল হক। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দিকে আমি একাই অনেক বছর কাজ করেছি। পরবর্তীতে আমার দেখাদেখি এখন অনেকেই বইমেলায় ছবি আঁকার কাজটি করেন। খুব ভালো লাগছে মানুষ এ পেশায় আগ্রহ পাচ্ছে।’

মনজুরুল হক—তিনি প্রথম বইমেলায় এভাবে ছবি আঁকা শুরু করেছিলেন। ছবি: শিমুল

তিনি জানালেন, বাংলা একাডেমির অনুমতি না থাকায় অনেক বছর তাদের কাজ করতে বেশ অসুবিধা হত। তবে তার উদ্যোগে সকল শিল্পীরা মিলে একাডেমির কাছে অনুমতির জন্য আবেদন করে। একাডেমি তাদেরকে অনুমতি দিয়েছে কয়েক বছর আগে। তবে শর্ত হচ্ছে মেলা শুরু হওয়ার আগেই প্রত্যেক শিল্পীকে আলাদা করে অনুমতির জন্য লিখিত আবেদন করতে হবে। আবেদন অনুমোদিত হলে শিল্পীকে এর জন্য আলাদা কোনো ফি কিংবা ভাড়া দিতে হয় না।

একাগ্রচিত্তে ছবি আঁকছেন শিল্পী বাঁধন। ছবি: শিমুল

প্রথমবারের মত মেলায় শিল্পী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন বাঁধন। শ্রবণপ্রতিবন্ধী এ শিল্পী বলেন, ‘মেলার এ ১১ দিনে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ মানুষ আমার কাছে ছবি আঁকিয়েছে তাতে আমি খুশি। কেউ এসে হয়তো মোবাইলে ছবি দেখিয়ে বলে হুবহু এঁকে দিতে। আমরা যখন এঁকে দিই তখন তারা অনেক খুশি হন। আঁকা ছবি পছন্দ হলে তারা অনেক সময় খুশি হয়ে বাড়তি টাকাও দেন।’

পুরানো যারা আছেন তারা ১০-১৫টি পর্যন্ত ছবি প্রতিদিন আঁকেন। তবে প্রতিদিন গড়ে প্রত্যেকে ৪-৫টি ছবি নূন্যতম আঁকতে পারেন বলে জানালেন শিল্পীরা। সাধারণত পেন্সিল স্কেচ করেন তারা। বেশিরভাগের ক্যানভাস থাকে সাদাকালো। রঙিন চিত্র আঁকেন দু-তিন জন। তৈলচিত্র কিংবা ওয়াটার কালার করাতে চাইলে অগ্রিম অর্ডার করে ৩-৪ দিন সময় দিতে হয়।

নিজের আঁকা ছবির সামনে শিল্পী নিয়াজ। ছবি: শিমুল

১০-১৫ মিনিটে কি কোনো ছবির ডিটেইলিং করা সম্ভব হয়? ‘পুরো সম্ভব হয় না—এটা অস্বীকার করবো না। তবে যতটুকু সম্ভব করে দিই। পুরোপুরি করতে হলে কমপক্ষে ২ দিন সময় দিতে হবে। সেক্ষেত্রে একটা ছবির জন্যই চার্জ দিতে হবে ১৫ হাজার টাকার ওপরে’—বলেন নিয়াজ।

ছবি আঁকার এ পেশায় আসার আগে অনেকে অন্য পেশায় যুক্ত ছিলেন। শিল্পী বসু জানালেন, তিনি এক সময় সিনেমার পোস্টার ডিজাইন করতেন। ২০১০-এর পর এ পেশায় চলে আসেন। তিনি বলেন, ‘একটা সময় হাতে আঁকা পোষ্টারের চাহিদা একেবারেই নাই হয়ে গেল। সে জায়গা নিলো কম্পিউটার গ্রাফিক্স। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে এ পেশায় আসা।’

একাগ্রচিত্তে ছবি আঁকছেন শিল্পী বসু। ছবি: শিমুল

বেশিরভাগ শিল্পী সারা বছরই বিভিন্ন মেলা, ঐতিহাসিক স্থান কিংবা ইভেন্টে ছবি আঁকেন। তাদের প্রত্যকের রয়েছে ফেসবুক পেইজও। সেখানেও তারা অর্ডার নেন। বেশিরভাগের মূল পেশা ছবি আঁকা হলেও অনেকে অন্য পেশার পাশাপাশি এটি করেন। মনজুরুল হক একসময় এনজিওতে চাকরি করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি স্কুলের শিক্ষক। তার মত শিল্পী নিয়াজও অন্য ব্যবসার পাশাপাশি ছবি আঁকেন। শিল্পী নিয়াজ বলেন, ‘ভালোভাসা থেকেই ছবি আঁকি। দ্রুততম সময়ে মানুষকে সবচেয়ে ভালো আউটপুট দেওয়ার চেষ্টা করি। সে তুলনায় আমরা সম্মানী যেটা নিয়ে থাকি, সেটা নিয়েও অনেক মানুষ মাছ বাজারের মত দামাদামি করেন, যেটা দুঃখজনক।’

এভাবে শিল্পীরা তাদের আঁকা ছবিগুলো টাঙিয়ে রাখেন। ছবি: শিমুল

জানা গেছে, মনজুরুল হকসহ মাত্র দুজন শিল্পী চারুকলা থেকে পড়াশোনা করেছেন। বাকিদের এ নিয়ে পড়াশোনা নেই। নিয়াজ বলেন, ছোট বেলা থেকে ছবি আঁকি। আমাকে স্বশিক্ষিত শিল্পী বলতে পারেন।

ছবি আঁকতে গিয়ে কখনও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়নি বলে দাবি করেলন শিল্পীরা। তবে সুখকর স্মৃতি অনেক আছে। শিল্পী বাসু বলেন, ‘সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত যখন আঁকা ছবি দেখে মানুষের চোখে মুখে আনন্দ ফুটে উঠে—ওই মুহূর্তগুলো ভোলার মত না।’

সারাবাংলা/এজেডএস

বইমেলা ২০২৫

বিজ্ঞাপন

‘সড়ক দুর্ঘটনা যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ’
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:১২

৬ জেলায় বিএনপির সমাবেশ আজ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর