বইমেলায় বসন্তের আবহ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৬
ঢাকা: বাঙালির প্রাণের মেলা বইমেলা। যে মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে একুশের চেতনা। তবে প্রতিবছরই এর সঙ্গে জড়িয়ে যায় ফাল্গুন। কারণ, এই ফেব্রুয়ারিতেই দেখা মেলে প্রিয় ঋতু বসন্তের। সঙ্গে সাথে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। আর মূল চেতনা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে ২১ ফেব্রুযারি। এই সবকিছু নিয়ে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে থাকে বইমেলা। একুশ, বসন্ত, ভালোবাসা ও বইমেলা। এই চার সংস্কৃতিই বাঙালির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে যায়।
বসন্ত আসতে এখনো দু’দিন বাকি। কিন্তু তার আগে থেকেই বইমেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের পোশাকে বসন্তের রং লেগেছে। বাসন্তী শাড়ি ও রক্তিম পাঞ্জাবিতে সাজসজ্জা করে অনেকেই বসন্তের আগাম দূত হয়ে এসেছেন মেলার মাঠে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবরিনা প্রিয়ন্তী, লাল ও হলুদ রংয়ের শাড়ি পরনে। খোপায় গাঁদা ফুলের মালা। গলায় ও কানে পরেছে সোনালী রংয়ের গহনা। হাতে লাল-হলুদ ও সোনালী রংয়ের রেশমি চুড়ি। প্রিয়ন্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস এলেই মনে হয় যেন বসন্ত চলে এসেছে। তাই এই মাসে একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস বাদে বেশির ভাগ আয়োজনেই বাসন্তী সাজ সাজা হয়। আর বই মেলাতো আমাদের বাঙালির একটি কৃষ্টিতে পরিণত হয়েছে। সেই বইমেলায় বাঙালি সাজে আসতেই ভালো লাগে। নতুন বইয়ের মোড়কেও কেমন যেন বসন্তের ফুলের মতো ঘ্রাণ পাওয়া যায়। তাই যতবারই বই মেলায়া আসি, এভাবে বাসন্তী ও বাঙালিয়ানা সাজেই আসি।’
প্রিয়ন্তীর সঙ্গেই ছিল তার সহপাঠী মৌটুসি। মৌটুসি কাঁচা হলুদ ও কালো রংয়ের শাড়ি পরেছেন। গলায় কানে মাটির গহনা। হাতে কাঠের লাল হলুদ বালা। চুলে বেণী কেটে গুঁজেছেন গোলাপ। মৌটুসি সালাবাংলাকে বলেন, ‘আসলে আমরা সব সময়তো একই রকম সাজেই থাকি। বসন্ত এমন একটা ঋতু, যে ঋতুর সঙ্গে মিলিয়ে নিজেকে সাজানো যায়। আর প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে সাজাতে কার না ভালো লাগে বলেন? বইমেলা এমন একটা জায়গা, যেখানে নতুন সাজে সেজে মিলন মেলায় মেতে উঠতে পারি। তাই বসন্ত ১৪ ফেব্রুয়ারি হলেও, যতবার মেলায় বই কিনতে আসব ততবারই বসন্তের সাজেই আসব।’
একই কথা হয় এক দম্পতির সঙ্গে। রাসেল আহমেদ ও তার স্ত্রী শান্তা আহমেদ। সঙ্গে তাদের একবছর বয়সী ছেলে। তারা তিন জনই বাসন্তী রংয়ের কাপড়ে সেজেছেন। শান্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসলে আমরা পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষ্যে তিনজন একই কাপড়ের ম্যাচিং পোশাক কিনেছি। কিন্তু হঠাৎ করেই একটা কাজ পড়ে যাওয়ায় আমরা বসন্তের দিন ঢাকার বাইরে থাকব। আজ যেহেতু বইমেলায় আসা, তাই বসন্তের পোশাক পরেই এলামা। কারণ, বসন্ত ও বইমেলা কোনোটাই মিস করতে চাই না।’
ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, বসন্ত তো আসবেই। তার আবহ আগে থেকেই জানান দিচ্ছে বাঙালি। বইমেলায় নানা রংয়ের নতুন মলাটে মোড়ানো বই, সেইসঙ্গে আছে বইপ্রেমী পাঠক। সবমিলিয়ে প্রাণের মিলন মেলায় পরিণত অমর একুশে বইমেলা।
সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম