এক্সপ্রেসওয়ে-আউটার রিং রোড নির্মাণে অনিয়ম তদন্তে দুদক
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়ন করা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও আউটার রিং রোড প্রকল্পে দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য প্রথমবারের মতো সিডিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুদকের টিম।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত চলা অভিযানে দুই প্রকল্পের বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই-বাছাই করেন দুদকের কর্মকর্তারা।
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও সাগরিকা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আউটার রিং রোড প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল দুদকের কাছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে ফাটল, প্রয়োজনের অতিরিক্ত র্যাম্প, রেলিং, নাট-বল্টু ঠিকমতো না লাগানো, প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে- এ ধরনের অভিযোগ ছিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রে।
আর সাগরিকা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আউটার রিং রোড প্রকল্পে সিডিএর আট কর্মকর্তা অতিরিক্ত ভাতা নেওয়ার অভিযোগে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়–১ এর সহকারী পরিচালক সাঈদ মাহমুদ ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের প্রধান কার্যালয় থেকে সিডিএতে অভিযান পরিচালনা করার জন্য বলা হয়েছিল। অভিযোগ মূলত দুটি প্রকল্পে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের। এটার নির্মাণ কাজে অনিয়ম, বিশেষ করে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগে যেখানে সেখানে ফাটল দেখা যাচ্ছে। যেখানে সেখানে র্যাম্প করা হয়েছে। রেলিং এ ঠিকভাবে নাট-বল্টু লাগানো হয়নি। প্রয়োজনের বেশি অর্থ এখানে ব্যয় করা হয়েছে। এ ধরনের বেশকিছু অভিযোগ আমাদের কাছে ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটা হচ্ছে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড প্রকল্প, যেটা সাগরিকা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত গিয়েছে। ওটার বিষয়ে অভিযোগ ছিল এমন যে সিডিএর আটজন কর্মকর্তা সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ হচ্ছে উনারা সিডিএ থেকেও বেতন নিচ্ছেন আবার ওই প্রকল্প থেকে বেতনের ৪০ শতাংশ ভাতা নিচ্ছেন, যেটা আসলে অনেক টাকা।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা দেড় হাজার টাকা পান। উনারা যে ৪০ শতাংশ ভাতা নিয়েছেন সেটা কীভাবে নেওয়া হয়েছে খতিয়ে দেখতে আমরা এসেছি।’
দুদকের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নিজেও বলেছেন এখানে কিছু অনিয়ম আছে। ওই দুটি প্রকল্পের যাবতীয় নথিপত্র আমরা নিয়েছি। কিছু রেকর্ড পাইনি। কালকের মধ্যে সেগুলো আমাদের দিতে বলেছি। সব পেলে আমরা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ঢাকায় দাখিল করব।’
জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রকৌশলী রাজিব দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুদুকের কিছু কর্মকর্তা আমাদের অফিসে এসেছিলেন। তারা আমাদের কিছু নথিপত্র যাছাই-বাছাই করেছেন। সিডিএর দুটি প্রকল্পের বিভিন্ন ফাইল ও নথিপত্র তারা আমাদের কাছে চেয়েছে। আমরা দিয়েছি। তারা সেগুলো দেখে চলে গেছেন।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে নেওয়া ১৩ প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা তদন্তে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যে ১৩টি প্রকল্পের বিষয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করবে সেগুলোর মোট ব্যয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে ছয়টি প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। চলমান আছে সাতটির কাজ।
উল্লেখ্য, চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রশস্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তবে প্রকল্পের আওতায় ২৪টি লুপ ও ১৪টি র্যাম্প নির্মাণের কাজ এখনো শেষ হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হলে বাণিজ্যিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
অন্যদিকে ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর পতেঙ্গায় টানেলের প্রান্ত থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সাগরতীর ধরে নির্মাণ করা হয় আউটার রিং রোড। চার লেনের ৮৪ ফুট চওড়া রোডটি ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ। ২০২০ সাল থেকে আউটার রিং রোড দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।
সারাবাংলা/আইসি/এইচআই
আউটার রিং রোড প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন