Wednesday 12 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লিটলম্যাগ চত্বর: ম্যাড়ম্যাড়ে, অনাড়ম্বর

আহমেদ জামান শিমুল
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩১

অনেক স্টল এখনো ফাঁকা।

ঢাকা: দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে লিটল ম্যাগাজিনগুলো। এসব ম্যাগাজিন থেকে উঠে এসেছে দেশের অনেক প্রথিতযশা লেখক, সাহিত্যিক। লেখক তৈরির আতুরঘর বলা হয় লিটল ম্যাগগুলোকে। অথচ লিটল ম্যাগ চত্বরের স্টলগুলো যেন পরিবারের অবহেলায় বেড়ে উঠা কোনো সন্তান।

অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় লিটল ম্যাগ চত্বর। সেখানে প্রায় ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায় চত্বরটির প্রবেশ পথে আলাদা করে কোনো নির্দেশিকা বা ব্যানার নেই। এমন কি অনেক স্টলে বসেননি কেউ। নেই দর্শনার্থী কিংবা ক্রেতা।

বিজ্ঞাপন

লিটলম্যাগ চত্বরে হাতেগোনা কিছু মানুষের উপস্থিতি। ছবি: সারাবাংলা

যাত্রাবাড়ী থেকে আসা দর্শনার্থী নাঈম বসেছিলেন লিটলম্যাগ চত্বরের একটি বেঞ্চে। বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলছিলেন। তিনি জানেনই না এখানকার স্টলগুলোতে বই বিক্রি হয়। তিনি বলেন, ‘এখানে যে বই বিক্রি হয় দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই তো।’

সারাবাংলা বেশ কিছু স্টল মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে। ঘুংঘর-এর নাজমুল আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি গত চার বছর ধরে লিটল ম্যাগ চত্বরে বসি। প্রতি বছরই এদিকে মানুষজন কম আসে। কিন্তু এ বছর আরও কম আসছে। এর কারণ আমার যা মনে হচ্ছে চত্বরের চারদিকে সামিয়ানার পর্দা টাঙ্গানো হয়েছে তাতে অনেকেরই স্টলগুলো চোখে পড়ছে না। এখন কেউ স্টল না দেখলে তো ঢুকবে না।’

‘আমার যেটা মনে হয় বইমেলায় অধিকাংশ মানুষ আসে ছবি তুলতে। আমাদের এদিকে তো ছবি তোলার মতো সাজসজ্জা করা হয়নি। তাহলে পাঠক আসবে কেন?’,- বলেন মগ্নপাঠকের আসাদ অংকন।

বিজ্ঞাপন

চত্বরটির প্রবেশ পথে একপাশে বাংলা একাডেমির একটা লোগো, আরেক পাশে বইমেলার লেগো। ছবি: সারাবাংলা

ঘাঙুড়ের ফিরোজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেমন শিশুচত্বরটা আলাদা করে বাইরে থেকে বুঝা যায়, আমাদেরটা ওইভাবে বাইরে থেকে বুঝার কোনো উপায় রাখেনি। তাছাড়া যেভাবে ঘেরাও করে রাখা আছে, কে বুঝবে ভিতরে বই বিক্রি হয়? কিন্তু এটাতে মানুষজন এই পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হচ্ছে- মনে হয় এটা একটা যাতায়াতের পথ। এখানে ঢুকার সময় গেইটে একপাশে বাংলা একাডেমির একটা লোগো, আরেক পাশে বইমেলার লেগো। লিটলম্যাগ চত্বর এমন নির্দেশনা কই?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে নামমাত্র ৫০০ টাকা স্টল ভাড়া নেন। এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কারণ এতে করে অনেক নতুন লেখক ও প্রকাশক উঠে আসেন। কিন্তু আপনি দেখেন স্টলগুলোর নিচের অংশ ফাঁকা। আমরা বলেছিলাম, নিচের অংশ ব্র‍্যান্ডিং করতে, মেলা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে অনুমতি দেয়নি। শুধু ওপরে একটা ব্যানার টাঙাতে দিয়েছে।’

নানাবিধ অব্যবস্থাপনার কারণে এ বছর আশানুরূপ বিক্রিও হচ্ছে না লিটলম্যাগের প্রকাশকদের। গেল বছর ঘাঙুড়ের বিক্রি হয়েছিল ৪৫ হাজার এবং মগ্নপাঠকের ২০ হাজার টাকা। মগ্নপাঠকের আসাদ অংকন বলেন, ‘আমরা তো ছোট উদ্যোক্ততা। স্বপ্ন দেখি একদিন বড় প্রকাশক হবো। বড় স্টল, প্যাভিলিয়ন নিবো, কিন্তু আমাদের স্টলগুলো নিয়ে এমন অবহেলা হলে কীভাবে আমরা উঠবো?’

চত্বরের চারদিকে সামিয়ানার পর্দা থাকায় অভিমান করে লিখেছেন কবি নুরুল হালিম । ছবি: সারাবাংলা

লিটলম্যাগ চত্বরকে কাপড় দিয়ে ঘেরাও করে রাখার প্রতিবাদে কবি নুরুল হালিম একটি ছোট কবিতা টাঙিয়ে দিয়েছেন। যেখানে চারদিকে ঘেরাও পর্দা তুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ লিটলম্যাগগুলো নামে লিটল হলেও কাজে কিন্তু লিটল না। হয়তো অর্থাভাবে এরা বড় কিছু করতে পারে না, কিন্তু এরা চেতনায় অনেক বড়। দেশের নানান আন্দোলন সংগ্রামে এসব লেখক, কবিদের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘লিটলম্যাগ চত্বর আগে কিন্তু বাংলা একাডেমি চত্বরে ছিল। সেখানে নবীন-প্রবীণ কবি সাহিত্যিকদের আড্ডা বসত। ওখান থেকে এদিকে আসার পর অনেকেই খুঁজে পান না। অনেক প্রবাসী লেখক-কবি খুঁজে না পেয়ে ফিরে যান।’

বইমেলায় লিটলম্যাগ স্টল বসে ২০০১ সাল থেকে। সে বছর বাংলা একাডেমির বহেড়াতলায় লিটলম্যাগ নিয়ে কয়েকজন বসেছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে বইমেলায় লিটলম্যাগ কর্নার যুক্ত হয়। সেসময় লিটলম্যাগে কবি-লেখকদের আড্ডা হতো। পক্ষে বিপক্ষে তর্কবিতর্ক হতো। তরুণ-প্রবীণ প্রথাবিরোধী লেখকদের মিলনমেলা ছিল এটি।

বইমেলার পরিসর বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০১৯ সালে লিটলম্যাগকে নিয়ে আসা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

সারাবাংলা/এজেডএস/এইচআই

অমর একুশে বইমেলা বইমেলা ২০২৫ লিটলম্যাগ চত্বর

বিজ্ঞাপন

মেলার ১২তম দিনে নতুন বই এসেছে ৮৯টি
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:২৯

আরো

সম্পর্কিত খবর