প্রস্তাবিত একীভূত তথ্য সার্ভিসের বিষয়ে বিসিএস তথ্য ক্যাডারের উদ্বেগ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৮ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৩৫
ঢাকা: প্রস্তাবিত একীভূত তথ্য সার্ভিস বিষয়ে বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডাররা বিবৃতি দিয়েছেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা হলে বিসিএস তথ্য ‘একটি অকার্যকর সার্ভিসে’ পরিণত হতে পারে- বলে মনে করছে বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনটির সভাপতি আবুল কালাম মোহাম্মাদ শামসুদ্দিন ও মহাসচিব মো. মামুন অর রশিদ এর সই করা এক যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রণীত সংস্কার প্রতিবেদনের প্রতি বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারের সদস্যদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। প্রতিবেদনে ভিন্ন প্রকৃতির তিনটি গ্রুপ ‘সাধারণ’, ‘অনুষ্ঠান’ ও ‘বার্তা’-কে একীভূত করে বাংলাদেশ তথ্য সার্ভিস নামে যে সার্ভিস গঠনের কথা বলা হয়েছে, তাতে এ ক্যাডারের সদস্যদের উদ্বেগের কারণ রয়েছে। গ্রুপ তিনটির কর্মপ্রকৃতি এতটাই ভিন্ন যে, এগুলোকে কোনো একক সার্ভিসে একীভূত করা হলে- তা একটি অকার্যকর সার্ভিসে পরিণত হতে পারে।’
বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরে বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশনের এর নেতারা বলছেন, তথ্য-সাধারণ ক্যাডারের কাজ ‘প্রচার’, বাংলাদেশ বেতারের কাজ ‘সম্প্রচার’। তথ্য-সাধারণ ক্যাডারের কাজ ‘গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনা’, ‘জনসংযোগ’ ও ‘গণযোগাযোগ’, বাংলাদেশ বেতারের কাজ ‘সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার’। বেতার একটি মিডিয়া হাউজ হিসেবে এ নির্দিষ্ট কাজটিই করবে, গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনা বা জনসংযোগ তাদের কাজ নয়।
আরও ব্যখ্যা দিয়ে সংগঠনটি বলছে, সম্প্রচার ব্যবস্থাপনা নির্দিষ্ট কর্মীগোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হয়। এ কাজের জন্য বিশেষ ধরণের কারিগরি ব্যবস্থা অপরিহার্য। এজন্য বেতারের অনুষ্ঠান ও বার্তা অনুবিভাগ দক্ষ ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ বেতারের ‘অনুষ্ঠান’ ও ‘বার্তা’ গ্রুপকে সাধারণ ক্যাটাগরির ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু তাদের কাজের প্রকৃতি ও বিষয় থেকে যায় আগের মতোই। এভাবে কাজ ও জনবলের মধ্যে ধরনগত ভিন্নতা সৃষ্টি হয়।
এর আগে ১৫ মার্চ ২০২১ তথ্য মন্ত্রণালয়ের নাম ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়’ করা হয়। এর আগে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তারা স্বতন্ত্র ‘সম্প্রচার ক্যাডার’ গঠনের উদ্যোগ নেন এবং সে উদ্যোগের ফলেই প্রাথমিক কাজ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তিত হয়। বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) এবং বাংলাদেশ বেতারের ‘অনুষ্ঠান’ ও ‘বার্তা’ তিনটি গ্রুপের কম্পোজিশন, ক্যাডার রুলস্, রিক্রুটমেন্ট রুলস্, ক্যাডার তফসিল, পদনাম ও পদসোপান, কার্যবণ্টন এবং পদোন্নতির যোগ্যতা/শর্তাবলি ও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা।
ব্যখ্যায় বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বেতারের ‘অনুষ্ঠান’ ও ‘বার্তা’ গ্রুপকে বিসিএস (সাধারণ তথ্য) ক্যাডারের সাব-ক্যাডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ক্যাডারের নাম বিসিএস (তথ্য) এবং বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) এর একটি সাব-ক্যাডার। বিসিএস (প্রশাসন), বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা)-সহ কোনো সাধারণ ক্যাটাগরির ক্যাডারেই ‘সাধারণ’ শব্দটি নামের অংশ নয়। বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারে ‘সাধারণ’ শব্দটি সাব-ক্যাডারের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রথাগতভাবে বেতারের ‘অনুষ্ঠান’ ও ‘বার্তা’ সাব-ক্যাডার/গ্রুপের নামে সঙ্গে ‘সাধারণ’ শব্দটি ব্যবহার করা যায় না।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারের সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারের কোনো অংশকে একীভূত করা সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের কাজের মান বৃদ্ধি, কর্মকর্তাদের কল্যাণ কিংবা জনস্বার্থ কোনোটির জন্যই যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হয় না। বিদ্যমান বাস্তবতায়, কেবল বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) গ্রুপকে নিয়ে বাংলাদেশ তথ্য সার্ভিস করা যায়। পাশাপাশি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের নামের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য একটি স্বতন্ত্র ‘সম্প্রচার সার্ভিস’ গঠন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারের সুবিবেচনা প্রত্যাশা করছেন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনজে