রাজস্ব আদায় বাড়াতে আয়কর ও ভ্যাট বিভাগে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন জরুরি: অর্থ বিভাগ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪২ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৫
ঢাকা: রাজস্ব আদায় বাড়াতে আয়কর ও ভ্যাট বিভাগে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন চালু করা জরুরি বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
অতি সম্প্রতি রাজস্ব আহরণ নিয়ে অর্থ বিভাগের এক পর্যবেক্ষণে এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে কর-জিডিপি অনুপাত আরও কমেছে- উল্লেখ করে কর আদায় বাড়াতে অধিকতর করণীয় ৬ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর বাজার উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমে যাবে। ফলে আয়কর ও ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
এ প্রেক্ষিতে রাজস্ব আদায় বাড়াতে আয়কর ও ভ্যাট বিভাগে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন চালু; দেশব্যাপী আয়কর অফিস স্থাপনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় থেকে আয়কর আহরণ করা; কর-ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা; কর আদায় থেকে কর নীতি সম্পূর্ণ পৃথক করা (এ উদ্যোগের প্রাথমিক কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে); রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে জড়িতদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ জোরদার করা এবং করজাল সম্প্রসারণ ও কর প্রতিপালন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণে কর-জিডিপি অনুপাতের বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত দীর্ঘ সময় ধরে ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ অনুপাত হ্রাসের (৭ দশমিক ৬) প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অথচ পাকিস্তান, ভুটান, ভিয়েতনাম ও মালদ্বীপের কর-জিডিপি অনুপাত হচ্ছে যথাক্রমে ১০, ১১ দশমিক ৩, ১৯ এবং ২০ দশমিক ৪।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার ইতোমধ্যেই আয়কর, ভ্যাট ও আমদানি উপখাতে শুল্ক বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আয়কর উপখাতে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- আয়কর বিভাগ পূর্ণাঙ্গ ডিজিটিলাইজেশন করা এবং আয়কর আইন ২০২৩ এর প্রয়োজনীয় সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠন; কর ব্যয় কমাতে ছয়টি কর অব্যাহতির এসআরও বাতিল এবং আয়কর আইনের সংশ্লিষ্ট অংশ সংশোধন; অন-লাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা; আয়কর বিভাগ সম্প্রসারণ করে ১০টি কর অঞ্চল ও ৩টি বিশেষ ইউনিট চালু।
ভ্যাট উপখাতে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ করা; ভ্যাট সম্পর্কিত আইন ও বিধি-বিধান সহজ করতে মাঠ পর্যায়ে দিক-নির্দেশনা ও ব্যাখ্যাপত্র জারি এবং আইন ও বিধি সংস্কারে কমিটি গঠন; অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল ৮০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীতকরণ; মূসক আদায় বাড়াতে তালিকাভুক্তির সীমা ৫০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৩০ লাখ টাকা এবং নিবন্ধন সীমা ৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ; আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য কিছু পণ্য এবং মূসক আরোপযোগ্য সেবার উপর সম্পূরক শুল্কহার বাড়ানোসহ সিগারেটের সর্বোচ্চ খুচরা মুল্য পুনঃনির্ধারণ ও সম্পূরক শুল্কহার বাড়ানো হয়েছে।
আমদানি খাতে শুল্ক আদায় বাড়াতে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- আমদানি-রফতানিতে আদায়কৃত রাজস্ব তাৎক্ষণিক ও যথাযথভাবে সরকারি হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করতে এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম ও ‘এ’-চালান সিস্টেমের মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন; আগামীতে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার ফলে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি বাণিজ্য সহজিকরণ, রফতানি প্রসার, দেশিয় শিল্পের বিকাশ ও চোরাচালান রোধে কাস্টমস ভূমিকা রাখবে; এ লক্ষ্যে দক্ষ জনবান্ধব, স্বয়ংক্রিয় ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানে বাংলাদেশ কাস্টমস এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো, অটোমেটেড বন্ড ব্যবস্থা, নন-ইনট্রুসিভ ইন্সপেকশন, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে
বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো’র আওতায় সম্প্রতি ৭টি সংস্থার সঙ্গে আন্ত:সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অন-লাইনে তথ্য-উপাত্ত আদান প্রদানের মাধ্যমে আমদানি-রফতানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাস করা যাবে।
সারাবাংলা/আরএস