Thursday 13 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এডিপি বাস্তবায়নে ধস, ৭ মাসে বাস্তবায়ন ২১.৫২%

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৫ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৫৫

ফাইল ছবি: বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)

ঢাকা: চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন ছিল ধীরগতি। উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতির কারণে ধস নেমেছে এডিপি বাস্তবায়ন হারে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, অন্তবতীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতিসহ নানা কারণে সৃষ্টি হয়েছে এমন পরিস্থিতি। তবে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় স্থবির হয়ে পড়া উন্নয়ন কর্মকান্ডে কিছুটা সচল হয়েছিল। তবে, জানুয়ারি মাসে আবারও এডিপি বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে ধস। ফলে চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন এখন সর্বনিম্ম।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সর্বশেষ এডিপির অগ্রগতি প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাদ্দের হিসাবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাদে বেশিরভাগই কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না। চলতি অর্থবছরর এডিপিতে উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে মোট ১ হাজার ৩৫৩টি। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের অর্থায়ন ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ১ লাখ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা।

গত ৭ মাসে মোট বরাদ্দের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে মাত্র ৫৯ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৭ মাসে মোট বরাদ্দের মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। যা এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ম।

আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর আগে কখনো এতো কম এডিপি এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। এর আগে অর্থবছরের ৭ মাসে সর্বনিম্ম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে, সেটাও চলতি অর্থবছরের থেকে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি ছিল। এমন কী করোনার সময় বেশিরভাগ উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকলেও চলতি অর্থবছরের থেকেও ৭ থেকে ১০ শতাংশ বেশি ছিল বাস্তবায়ন হার।
সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতিসহ নানা কারণে সৃষ্টি হয়েছে এমন পরিস্থিতি। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। যেখান থেকে এখনও বের হওয়া সম্ভব হয়নি, এখান থেকে উত্তরণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে অর্থবছরের বাকি সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুততর হবে বলে জানিয়েছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। একনেক বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বেশ কিছু প্রকল্প এখন আসছে যেগুলা আমাদের সময়ের নতুন প্রকল্প। আগেরগুলো অনেক যাচাই-বাচাই করতে হচ্ছিল, ফেরত পাঠাতে হচ্ছিল, আবার সংশোধন করতে হচ্ছিল। এই প্রথম আমাদের নিজেদের নতুন প্রকল্পগুলো আসা শুরু করেছে, বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ের। একনেক সভায় অনেক দ্রুত এবং বেশি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেক দ্রুততর হবে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ মাস জানুয়ারিতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৮৭৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অথচ আগের মাস ডিসেম্বর খরচ হয়েছিল ১৫ হাজার ৭৮৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা মোট এডিপির ৫ দশমিক ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর নভেম্বরে খরচ হয়েছিল ১২ হাজার ২৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। সেই হিসেবে আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে অগ্রগতি বেশি হয়েছে। এমনকি গত বছরের জানুয়ারিতেও খরচ হয়েছিল ১২ হাজার ৭২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

অগ্রগতি প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বরাবরে মতোই এবারও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অর্থবছরের ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও ৭ শতাংশও এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারেনি ৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এরমধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বরাবরের মতো স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এর মধ্যে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৭ মাসে ১ শতাংশও এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এডিপি বাস্তবায়নে ৭ শতাংশের নিচে রয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়। এছাড়া ১০ শতাংশের কম বাস্তবায়ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

শতাংশের হিসেবে এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, ৭ মাসে তারা তাদের বরাদ্দের ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ৭০ দশমিক ৯৪ শতাংশ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ৪৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।

বাকিগুলো মন্ত্রণালয়গুলোর এডিপি বাস্তবায়ন হার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। আর খরচের হিসেবে এগিয়ে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিভাগটি ৭ মাসে খরচ করেছে ১১ হাজার ৩৪০ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৩৩.৫৮ শতাংশ, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগ খরচ করেছে ১১ হাজার ২৫১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

সারাবাংলা/জেজে/আরএস

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর